জুলাই ২৮, ২০২০
মানব সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কোয়ান্টাম
খুলনা প্রতিনিধি : খুলনায় করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন ও সৎকার করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন খুলনা। যেখানে করোনায় সংক্রমিতদের মৃতদেহ দাফন বা সৎকারে ভয় পাচ্ছেন স্বজনেরা, সেখানে যথাযথ ধর্মীয় ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন, সৎকারের সকল কাজ করে সাড়া ফেলেছে সংগঠনটি। স্বেচ্ছাসেবার মানসে এ কাজ করছেন তারা। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় করোনায় সংক্রমিত অথবা উপসর্গে মৃত ও দুস্থ বেওয়ারিশ লাশ দাফন করছে কোয়ান্টাম। মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) পর্যন্ত কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন খুলনা শাখার ব্যবস্থাপনায় ৬২টি মৃতদেহের দাফন, সৎকার করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় ৪৬ জন, গোপালগঞ্জে ৬ জন, বাগেরহাটে ৩ জন, নড়াইলে ৩ জন এবং সাতক্ষীরায় ৪ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। খুলনা শাখা অফিসের তত্ত¡াবধানে পরিচালিত হচ্ছে খুলনা জোনের দাফন কার্যক্রম। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের নিবেদিত প্রাণ ও প্রশিক্ষিত ৬ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী খুলনাসহ দেশের ১৮টি কেন্দ্র থেকে সারাদেশে করোনায় মৃত লাশের দাফন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত ২৩ জুন থেকে খুলনাতে করোনায় মৃত লাশ দাফনের জন্যে ৫২ জনের একটি প্রশিক্ষিত টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। করোনায় মৃত মহিলা এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্যে আলাদা টিম রয়েছে কোয়ান্টামের। গত ২৫ বছর যাবৎ কোয়ান্টাম অন্যান্য মানবিক সেবা কার্যক্রমের পাশাপাশি দাফন কার্যক্রমও পরিচালনা করে আসছে। শত শত লাশ দাফনের অভিজ্ঞতা রয়েছে কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবীদের। কিন্তু করোনায় মৃতদের দাফনের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ আলাদা, হৃদয়বিদারক, অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। করোনায় সংক্রমিত মৃতদেহ দাফনকালে স্বেচ্ছাসেবকদের ১৩ ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী এবং লাশের জন্যে ২৭ ধরনের উপকরণ প্রয়োজন হয়। দাফন ও সৎকার কাজের পুরো প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, সেফটি গøাস, ফেস শিল্ড, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গøাভস, হেভি গøাভস, গামবুট, কাফনের কাপড় ইত্যাদি সবকিছুই কোয়ান্টামের নিজস্ব অর্থায়নে সংগ্রহ করা হয়। মরদেহ বহনের জন্যে বিশেষ বডি ব্যাগসহ সুরক্ষার জন্য তিন ধরনের জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি মরদেহ দাফনের পর সুরক্ষার জন্যে ব্যবহৃত পিপিইসহ পরিধেয় অন্যান্য সামগ্রী কবরস্থানেই পুড়িয়ে ফেলা হয়। সুরক্ষা উপকরণ সংগ্রহসহ পুরো প্রক্রিয়াটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত মানদন্ড অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয়। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন খুলনা শাখার দাফন কার্যক্রমের সমন্বয়ক মুস্তফা আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যবিধি এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে ইসলামী ফাউন্ডেশনের দাফনবিধি মেনে কাজ করে থাকি। মহিলাদের পর্দার বিধান মেনে দাফন কাফনের জন্যে ৯ সদস্যের একটি প্রশিক্ষিত মহিলা টিম রয়েছে, যারা ইতোমধ্যে ১৩ জনের দাফন করেছে। আর সনাতনদের জন্যে সৎকারে দক্ষ ৬ সদস্যের একটি টিম রয়েছে, যারা সনাতন সৎকারবিধি মেনে পুরো কাজটি পরিচালনা করেন। এ পর্যন্ত খুলনায় ৫টি ও গোপালগঞ্জে ২টি সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনায় সংক্রমিত মৃতদের দাফন খুব চ্যালেঞ্জিং কাজ। একটি মৃতদেহ দাফন করতে স্বেচ্ছাসেবীদের সুরক্ষার জন্যে ১৩ ধরনের সামগ্রী এবং লাশের জন্যে ২৭ ধরনের উপকরণ প্রয়োজন হয়। এতে প্রতিটি দাফনে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। এই পুরো ব্যয় ভারই বহন করছেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীগণ। যে কেউ এই মানবিক উদ্যোগে শরিক হতে পারেন। এ ব্যাপারে দাফন কার্যক্রম সমন্বয়কের সাথে ০১৭১৪-০৯৮২৫৬ নম্বরে অথবা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন খুলনা শাখার ০১৭৪০-৯৩৯৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও কোয়ান্টাম ওয়েব সাইট quantummethod.org.bd এই ঠিকানায় গিয়ে অনলাইনে দানের মাধ্যমে এই মহতী কাজে আপনার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন। 8,561,686 total views, 391 views today |
|
|
|