Site icon suprovatsatkhira.com

কুরবানি বনাম করোনা, সচেতনতায় ঠেকাবে মহামারি

মুক্তমত
করোনা ভাইরাস এখন অপরিচিত আতঙ্কের নাম। প্রতিদিন হুর হুর করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তবে এ যুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার মানসিকতা ঠিক রাখা। আপনি মানসিক ভাবে ঠিক থাকতে পারলে যুদ্ধে জয়ী হবেন। তাই আক্রান্তরা ভয় না পেয়ে মানসিকতার উপর ভরসা রেখে চিকিৎসকের কথা মেনে চলুন। আর যারা সুস্থ আছেন সচেতন হওয়ার কথা বলা হলেও অধিকাংশরা মানছে এসব কথা। না মানছে সামাজিক দূরত্ব, না ব্যবহার করছে মাক্স।

জীবন রক্ষায় নয় প্রশাসনের ভয়ে মাস্ক সাথে নিয়ে ঘুরছেন প্রায় ৮৫% মানুষ। এতে বিপদের আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বে করোনায় থমকে গেছে সকল উন্নয়ন। সেই সাথে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় সকল কর্মকান্ডের কোন উত্তাপ নেই। কারণ জনসমাগম হলেও তো বিপদ। থাকবে না সামাজিক দূরত্ব। তাই সকল সমাগম এগিয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে। কিন্তু এর মধ্যে অনেকে ধরাকে সরাজ্ঞান করে ভাইরাসকে পুঁজি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। যাই হোক এসব কথা না হয় বাদই দিলাম। সামনে ঈদুল আযহা নিয়ে একটু কথা বলা যাক। ঈদ মানে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা। তার উপরে আবার কোরবানি বলে কথা। দেশ ও দেশের বাহিরে থেকে অনেকেই পরিবারের সাথে ঈদ পালনের জন্য ছুটে আসেন বাড়িতে। কিন্তু বিগত বছরের তুলনায় এবারের কোরবানি কিছুটা হলেও ভিন্ন।

ইসলাম ধর্মের কোরবানি একটি অন্যতম ইবাদত। যার মাধ্যমে আল্লাহর নিকটতম আসা যায়। আমরা জানি যে, কোরবানির মধ্য দিয়ে নিজেদের সকল পাপ মোচন হয়। তাই যাদের উপর কুরবানি ফরজ হয়েছে তাহারা যদি কুরবানি না করেন তাহলে কঠিন আজাবের সম্মুখীন হবেন। আর সে কারণে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ প্রতিবছর গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া সহ বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণী কোরবানি করেন। এবার বর্তমান পরিবেশে ফিরে আসা যাক। বর্তমান এলাকা ভিত্তিক লকডাউন চলছে। নিয়ম মেনে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশ দেওয়া হলেও অধিকাংশ স্থানে নিয়মের তোয়াক্কা নেই। পাশাপাশি প্রশাসনের তৎপরতা দেখা মিলছে। তারপরেও মানুষ বিভিন্ন অজুহাতে নিয়ম ভঙ্গ করছে। বাদ দিলাম এসব কথা।

ঈদের কথায় আসা যাক। ঈদের বাকি কয়েকদিন। তাই পশু কেনা বেচায় ব্যস্ত ক্রেতা ও বিক্রেতারা। অনেকে বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন পছন্দের গরু কেনার জন্য। আবার অনেকে হাটে যেয়ে ভিড় জমাচ্ছেন। বাড়িতে গরু কেনার জন্য আসা ব্যক্তিরা যেমন নিয়ম ভঙ্গ করছেন পাশাপাশি হাটের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেখানে বেশিরভাগ মানুষের থাকছে না মাক্স, থাকছে না সামাজিক দূরত্ব। এতে কিন্তু শঙ্কা কোন ভাবে কাটছে না। এরপর কেনা-বেচার সময় টাকায় লেনদেনেও ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে ঈদের দিন পশু কুরবানি দেওয়ার সময় এবং মাংস বিতরণের সময়ও ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাস। তাই সচেতনতা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোন ঘাটতি করা যাবে না। চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে সামাজিক দূরত্ব মেনে মাক্স পড়ে ঈদের জামাত পালনের নির্দেশ দেয় প্রশাসন। কিন্তু গ্রাম্য এলাকায় মানুষের শিক্ষার জ্ঞানের অভাব থাকায় তারা সেটি না মানেনি।

শুধু মুসলিম ধর্মের জন্য নয় সকল ধর্মের মানুষের জন্য নিয়ম মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে। আমরা নিজেরাই মানছি না আবার দোষ দিচ্ছি দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিদের। আপনার নিরাপত্তার জন্য আপনি নিজেই যথেষ্ট। এখানে অন্যের দোষ না খুঁজে আসুন সচেতন হই। যে সব ব্যক্তিরা বাড়িতে ঈদের কথা ভাবছেন তাদের জন্য আমার পরামর্শ হল কর্মস্থলে না হয় আরও একটা ঈদ পালন করুন। এতে আপনার ও পরিবার ভাইরাস সংক্রমণ থেকে হয়তো রক্ষা পাবে। ধরুন আপনি ভাইরাস বহন করে বাড়িতে আসলে বা বাড়ি থেকে যাওয়া আসার পথে ভাইরাস বহন করে নিয়ে গেলেন। এতে কিন্তু আপনি একা নয় দেশের অনেক মানুষ একটি হুমকি মধ্যে পড়তে হতে পারে।

তাই জীবন থেকে পরিবারের সাথে ঈদ কাটানো কোরবানি করে দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখার যুদ্ধে অংশ নেন। এ দেশ আমার, আপনার সকলের। তাই দায়িত্ব নিতে হবে সকলকে। তাই আসুন নিজেকে নিরাপদ রাখতে মাক্স ব্যবহার করি। বার বার সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার রাখি। দিনের ১/২ বার গরম পানির সাথে লেবু ও আদার রস পান করি। এতে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। কোরবানির আগে এবং পরে সকল নিয়ম মেনে চলতে হবে। সেই সাথে কোরবানির পশুর বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে মাটি চাপা দিতে হবে। কোন রকম পরিবেশের বিঘœ না হয় সেদিকে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে।

আমার এই লেখাটি তখনই সার্থক হবে যখন আপনি পড়ার পর নিয়ম গুলো মেনে চলবেন অন্যকে উৎসাহিত করবেন। আমি কোন লেখক নয়, সমাজকে ভালো রাখার জন্য এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আশা করি আপনাদের জীবনে সামান্য হলেও কাজে আসতে পারে। আসুন করোনা যুদ্ধে অংশ নিয়ে আমরা জয়ী হই। ঈদ আনন্দে সব ভুলে না যেয়ে দেশের জন্য কাজ করি।

লেখক: মীর খায়রুল আলম, সংবাদ-কর্মী।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version