Site icon suprovatsatkhira.com

আশাশুনির মাছ চাষীদের আগ্রহ বেড়েছে হরিণা চিংড়ি চাষে

নিজস্ব প্রতিনিধি : বাগদা চিংড়ি পোনার অপ্রতুলতা ও দাম বেশী হওয়ার কারনে আশাশুনিতে হরিণা চিংড়ি চাষে আগ্রহী হচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা। বিক্রয়ের সময় বাগদা ও হরিণা চিংড়ির দাম প্রায় সমমান হওয়ায় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বেড়ে ওঠায় চাষীরা এ চাষে ঝুঁকছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার হরিণা চিংড়ির পোনা আশে পাশের নদী থেকে সহজেই আহরণ ও ক্রয় করা যায় ; অল্প খরচে ভাল দামে বিক্রি করা যায় সেজন্যেও চাষীরা বাগদার দিকে না ঝুঁকে হরিণা চিংড়িকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
আশাশুনি সদরে এক চিংড়িচাষীর সাথে কথা বললে তিনি জানান- এবছর করোনার প্রাদুর্ভাবে বাগদা পোনার দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া। আবার লকডাউনের কারণে দাম দিয়েও মাছ পাওয়া যায়নি। তিনশ টাকার পোনা বিক্রি হয়েছে নয়শ থেকে হাজার টাকায়। তাও সময় মত পাওয়া যায়নি। এরপর আম্ফানে ঘরবাড়িসহ সব চিংড়িঘের ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে গেছে। সেজন্যে উপায় না পেয়ে বেঁচে থাকার তাগিদ ও লাভজনক হওয়ায় হরিণা চিংড়ির চাষ শুরু করেছি।
হরিণা পোনার প্রধান উৎস পার্শ্ববর্তী যেকোন নদী। মৎস্যঘেরে যদি সরাসরি জোয়ারের পানি ওঠানামা করে তাহলে পোনা ক্রয় করা লাগবে না। সেটা সব ঘেরে সম্ভব নয় বিধায় বাইরে থেকে কিনে ঘেরে ছাড়তে হয়। জোয়ারের পানি নদীর চরে উঠলে চরের খানা-খন্দে জমে থাকা পানিতে চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছের পোনা আটকে যায়। সেগুলি নেটজাল দিয়ে ছেঁকে ঘেরে ছাড়া যায়। এখন চাহিদা বেশি হওয়ায় মানুষ অবৈধ জেনেও বড়বড় নেটজাল নদীতে ফেলে মাছের পোনা ধরা শুরু করেছে। নেটজালের এক ছাঁকুনি মাছ প্রায় এক হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজননের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া একটু বড় পোনা তিন থেকে চারশ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এখন আবার দুইশ টাকা হাজারেও পোনা বিক্রি হচ্ছে। তবে এখন যারা ঘের করছে তারা অধিকাংশই নিজেরা চর থেকে অথবা নদীর জোয়ার থেকে পোনা আহরণ করছে।
হরিণা চিংড়ির খাদ্য তালিকা খুবই সংক্ষিপ্ত বলে জানান ওই চাষী। তিনি বলেন- মাছ দ্রæত বড় করতে গেলে প্রতিদিন ঘেরে অটোপালিশ ও গমে ভ‚ষি পরিমানমত দিতে হবে। তাহলে ৪০-৫০ দিনের মধ্যেই মাছ বিক্রি করা যাবে। এ মাছে বাগদার মত রোগবালাই খুব একটা দেখা যায় না। দুইশ টাকা দিয়ে একাহাজার মাছ যদি ভালমত ফোটে তাহলে প্রায় ৮-১০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। বড় হরিণা এককেজি প্রায় ৫১০ টাকা থেকে সাড়ে ৫শ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। যেখানে ৯শ টাকা দিয়ে বাগদা ছেড়ে যদি বেঁচে থাকে তবে তার দাম (৩০ পিস) সাড়ে ৪শ টাকার বেশি হবে না। তাই বাগদা চিংড়ি চাষই এখন ঝুঁকির ব্যবসা মনে হয়। হরিনা চিংড়ি ভালই লাভজনক।
এদিকে উপজেলা সদরের দয়ারঘাট গ্রামে ভাঙ্গন এলাকায় রিংবাঁধের ভিতরে যেখানে জোয়ার ওঠানামা করে সেখানে ও নদীতে বহু মানুষ নেটজাল দিয়ে হরিণাচিংড়ির পোনা আহরণ করতে দেখা গেছে। সেখানে স্থানীয় লোকজন ছাড়াও উপজেলার পাইথালি কুন্দুড়ি গ্রামের লোকজনকেও রাতে দিনে জোয়ারে পোনা আহরণ করতে দেখা গেছে। তাদের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন- জানি এটা অবৈধ তার পরেও রুটি রুজি রোজগারের জন্য করছি। করোনায় বাইরে যাওয়া যাচ্ছেনা। আমরা এ কাজ আগে করতাম না এখন করছি বাধ্য হয়ে।
উপজেলা প্রশাসন অবৈধ চিংড়ি পোনা আহরণে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে চললেও আহরণকারীরা প্রশাসনের সাথে চোরপুলিশ খেলা করছে। চিংড়িচাষীদের বৈধভাবে পোনা দিয়ে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সেজন্যে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চিংড়ি চাষীরা।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version