নূরুন্নবী ইমন, সুন্দরবন অঞ্চল প্রতিনিধি : শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পার্শ্বেখালী গ্রামের পার্শ্বেখালী যতীন্দ্রনগর গ্রাম উন্নয়ন সমবায় লিঃ এর নামে সাধারণ গ্রাহকদের স্বাক্ষরিত চেক, স্ট্যাম্প ও ডেমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ভোক্তভোগী পার্শ্বেখালী গ্রামের নাসির উদ্দীন সরদারের পুত্র মোঃ আতিয়ার রহমান সরদারসহ এলাকাবাসী শ্যামনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (নং-৬৫৯) করেছেন। প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্যামনগর, উপজেলা সমবায় অফিসার শ্যামনগরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার মীরগাং গ্রামের এলাই বক্সের পুত্র মোঃ রুহুল কুদ্দুস কয়েক বছর পূর্বে এলাকায় এস,ডি,এ নামের একটি সমিতির কাজ শুরু করেন। সমিতি খোলার পরে উক্ত ব্যক্তি সু-কৌশলে সাধারণ মানুষকে সমিতির অর্ন্তভুক্ত করে সঞ্চয় গ্রহণ করতে থাকে।
বেশ কিছু দিন চলার পরে উক্ত সমিতির নাম প্রদান করেন পার্শ্বেখালী যতীন্দ্রনগর গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিঃ। কিছুদিন পর রুহুল কুদ্দুস অল্প পরিসরে সমিতির অর্ন্তভুক্ত গ্রাহদের সুদের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করতে থাকে। তবে উক্ত ঋণ গ্রহণের আগে গ্রাহকদের নিকট থেকে তাদের স্বাক্ষরিত চেক, স্ট্যাম্প ও ডেমি রুহুল কুদ্দুসের নিকট জমা দিতে হয়। ঋণ প্রদানের পর গ্রাকদের ঋণ পরিশোধ করতে সামান্য বিলম্ব হলে তাদের সাথে খারাপ আচারন, অকথ্য ভাষায় গালি গালাচসহ বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে কুদ্দুস। উক্ত সমিতির অর্ন্তভুক্ত গ্রাহকগণ তাদের ঋণ পরিশোধ হওয়ার পরে রুহুল কুদ্দুসের নিকট চেক, স্ট্যাম্প ও ডেমি ফেরত চাইলে বিভিন্ন ভাবে তাল বাহানাসহ হয়রানি করে চলেছে। বর্তমানে রুহুল কুদ্দুসের নিকট ১৫/২০ জনের চেক, স্ট্যাম্প ও ডেমি আছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায় , রুহুল কুদ্দুস উক্ত চেক , স্ট্যাম্প ও ডেমি নিয়ে গ্রাহকদের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ও সহায় সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা করছে। এলাকাবাসী জানায় , রুহুল কুদ্দুস কাশিমাড়ি এলাকার মৃত মোবারক আলীর পুত্র আনারুল হত্যা মামলার আসামী । বর্তমানে মামলা বিচারাধীন আছে। অত্র এলাকার ভুক্তভোগী সাইদুর গাজীর পুত্র রফিকুল , সামাদ আলীর পুত্র আব্দুস সালাম , নাছির উদ্দীন সরদারের পুত্র মোঃ আতিয়ার সরদার ও মোঃ মহাসীন সরদার বলেন , আমরা দীর্ঘ বছর ধরে উক্ত সমিতির গ্রাহক । বেশ কয়েকবার ঋণ নিয়েছি । ঋণ পরিশোধ করে প্রতিবার ঋণ নেওয়ার সময় কুদ্দুস নতুন ভাবে আমাদের নিকট থেকে চেক, স্ট্যাম্প , ডেমি গ্রহন করে।
তারা আরও বলেন আমাদের এলাকার মৃত নুর মোহাম্মাদের পুত্র মোঃ মতিয়ার গাজী উক্ত সমিতির লোন পরিশোধ করার পরেও তার স্ট্যাম্প দিয়ে কুদ্দুস মামলা করে মোটা অঙ্কের টাকাসহ সহায় সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা করছে। বিষয়টি আমরা জানার পরে তার কাছে আমরা আমাদের স্বাক্ষরিত চেক ,স্ট্যাম্প ও ডেমি ফেরৎ চাই। কুদ্দুস চেক ,স্ট্যাম্প ও ডেমি ফেরত দেওয়ার নাম করে কৌশলে আমাদের কাছে থাকা সমিতির বই গুলো উঠিয়ে নেয়। বর্তমানে আমরা সম্পূর্ন্ন ভাবে ঋণ পরিশোধ করলেও চেক ,স্ট্যাম্প ও ডেমি ফেরত দিচ্ছে না।
এ বিষয়ে কুদ্দুস বলেন , আমার উপর আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। যারা অভিযোগ করেছে তারা আমার সমিতির কোন সদস্য না। আমার কাছে ঋণ চাইলে আমি দিতে অস্বীকার করায় তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। তাছাড়া আমি ঋণ পরিশোধ হওয়ার পরে গ্রাহদের সব কিছু ফেরত দেই। হত্যা মামলার আসামির কথা স্বীকার করে কুদ্দুস আরও বলেন , ২০০৩, ২০০৪,২০০৫ ও ২০০৬ সালে মিলে আমার বিরুদ্ধে হত্যা ও চাঁদাবাজি মামলা হয় চারটি। মামলা গুলো সব মিথ্যা। আমি তিনটা মামলা হতে ইতি পূর্বে পরিত্রাণ পেয়েছি। বর্তমানে একটি হত্যা মামলা চলমান আছে।
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা সমবায় অফিসার মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন , পার্শ্বেখালী যতীন্দ্রনগর গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিঃ সমিতিটি সরকারী ভাবে নিবন্ধিত। উক্ত সমিতির বিষয়ে আমরা এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম মোড়ল বলেন, আমি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। ইতি পূর্বে মতিয়ার নামে একজন মৌখিক ভাবে আমাকে জানালে আমি কুদ্দুসকে চেক, স্ট্যাম্প ফেরত দিতে বললে কুদ্দুস চেক ফেরত দিলেও এখন স্ট্যাম্প ফেরত দেয়নি বলে জানতে পেরেছি।