খুলনা প্রতিনিধি : কপিলমুনিতে বেড়েই চলেছে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। লকডাউন প্রত্যাহারের পর করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে। গতকাল থেকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কপিলমুনি বাজারকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
সূত্রে প্রকাশ, গত ১২ জুন উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের প্রতাপকাটী গ্রামের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান সরদারের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ শনাক্ত হয়। কপিলমুনি বাজারের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত শুভ ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী পলাশ হালদারের সেজ পুত্র সুবেন্দু হালদারের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার খবরে ফার্মেসি বন্ধ করে দেয়া হয়। পার্শ্ববর্তী উপজেলার কানাইদিয়া গ্রামের পলাশ হালদারসহ তার ফার্মেসিতে কর্মরত সকলেই বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন। পাইকগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে কপিলমুনিকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে এলাকাবাসী।
কপিলমুনি বাজার সহ অত্র ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা না হলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি নিষেধ মানতে বাধ্য না করা গেলে জনবহুল কপিলমুনি বাজার থেকে কোভিড-১৯ উপজেলা সদর সহ গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী।
সর্বশেষ করোনা আক্রান্ত শিক্ষকের বাড়ি সহ কপিলমুনি বাজার লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না জানান। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। সারাদেশের ন্যায় অত্র উপজেলায়ও লকডাউন ঘোষণা করা হয়। সরকারি স্বাস্থ্য বিধি নিষেধ বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন সহ সেনা অভিযান তৎপর থাকায় লকডাউন থাকাকালীন সময়ের মধ্যে অত্র উপজেলার কোথাও কোন করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। অত্র উপজেলায় প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ১ জুন। তপন পাল হচ্ছে অত্র উপজেলার প্রথম করোনা রোগী। এরপর পুলিশে কর্মরত শাহাপাড়া গ্রামের রমজান আলী নামে এক পুলিশ সদস্যের করোনা শনাক্ত হয়।
গত ১০ জুন কপিলমুনির করোনা আক্রান্ত তপন পালের স্ত্রী তৃপ্তি পাল ও কাশিমনগর এলাকার রামপ্রসাদ সেন নামে আরেক ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হয়। ১২ জুন শুক্রবার কপিলমুনি ইউনিয়নের প্রতাপকাটী গ্রামের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান সরদারের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত সকলের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি হবার খবরে কপিলমুনি ইউনিয়ন সহ গোটা উপজেলার মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কপিলমুনি বাজার সহ অত্র এলাকায় চলাফেরা করতেও অনেকেই ভয় পাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন উপজেলা যারা এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে তারা অধিকাংশ কপিলমুনি এলাকার। আবার এলাকার সবচেয়ে জনবহুল বাজার হচ্ছে কপিলমুনি।
হাট-বাজার সার্বক্ষণিক জমজমাট, রাস্তাঘাটে যেমন যানজট তেমনি দোকানপাটে উপচে পড়া ভিড়। নারী পুরুষের অবাধ চলাফেরা ও কর্মযজ্ঞ দেখলে মনে হয় যেন কোন মেলা বসেছে। এদিকে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উপজেলার কপিলমুনি ও আশ-পাশের বাজার গুলোতে সামাজিক অসাবধানতাসহ সাধারণকে বে খেয়ালি চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। করোনা আক্রান্ত এলাকাগুলোকে প্রশাসনিকভাবে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও এলাকার অধিকাংশ মানুষ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে অস্বাভাবিক ও মাস্কবিহীন চলাফেরা করছে।
কপিলমুনির কাশিমনগর বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট মধ্যরাত অবধি খোলা রেখে বিকিকিনি চলছে। চায়ের দোকানগুলো দেখলে মনে হচ্ছে সেখানে কোন নির্বাচনি ক্যাম্পেইন হচ্ছে। যাদের কাউকে কোন প্রকার সামাজিক দুরত্ব কিংবা মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে না। এ জন্য অনেকেই মনে করছেন কপিলমুনি বাজারে মানুষের চলাচল সহ স্বাস্থ্য বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রশাসন যদি এখনই তৎপর না হয় কিংবা মানুষকে সচেতন করে তোলা না যায় তাহলে কপিলমুনি নয় খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে করোনা গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইতিমধ্যে কপিলমুনি এলাকার অনেকেই নমুনা পরীক্ষা করতে দিয়ে আইসোলেশনে আছেন এবং তাদের পজিটিভ খবর মানুষের মুখে প্রচারিত হচ্ছে। সবমিলিয়ে প্রতিটি মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ গত ১৪জুন থেকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কপিলমুনি বাজারকে মাইকিং করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বেলা ২টা পর্যন্ত নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের দোকান ছাড়া সকল দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মাক্স ছাড়া কোন নারী পুরুষকে বাজারে ঘোরাফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসন নিবিড়ভাবে কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে। সর্বশেষ ১৩ জুন উপজেলার রাড়–লীর বাঁকা এলাকার সুমন দত্ত (২৮) নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র’র নমুনায় করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। তিনি বর্তমানে খুলনা করোনা ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন বলে জানা গেছে।