জুন ১৪, ২০২০
কুঁড়ে ঘরের সাইদ মাথা গোঁজার ঠাঁই চায়
নিজস্ব প্রতিনিধি : আবু সাইদ, বয়স ৪২। বাবা শ্রীকলস গ্রামের মৃত আনার সরদার। পৈতৃক জমি ১৫ কাঁঠা, ভাই সাত জন। আশাশুনির মরিচ্চাপ সেঁতুর পশ্চিম পাশে শ্রীকলস গ্রামের নদীর চরে ১২ বছরের ছেলে, ৫ বছরের মেয়ে ও স্ত্রী (২য়) নিয়ে তার বসবাস। বসবাসের জীর্ণ-শীর্ণ কুঁড়েঘরটি একই গ্রামের মোশারফ উকিলের মৎস্য ঘেরের কলগৈ (পানি নিষ্কাশন প্রণালি) সংলগ্ন। এখানে সে ৪ হাজার টাকায় মাসে মাইনে থাকে। উকিল সাহেবই টাকা দিয়ে তার ঘেরের বাসাটি একটু বড় করে দিয়েছেন। এখানেই সে প্রায় ৬ বছর ধরে আছে। ঘরের চালে গোলপাতা থাকলেও আম্পানে উড়ে গেলে সেখানে পলিথিনের বস্তা দিয়ে রোদ বৃষ্টি মোকাবেলার চেষ্টা। এর নীচে দক্ষিণ দিকে বাঁশের ভারা করা। তিন দিকে কঞ্চির বেড়ায় মাটি দেওয়া ও উত্তর দিকের একমাত্র মাটির দেয়ালটি মরিচ্চাপ নদীর পানি আটকানো ঘেরের বেড়িবাঁধ হিসেবেও কাজ করে। ‘মহাসেন’, ‘ফনী’ ‘বুলবুল’ ও সর্বশেষ প্রলয়ংকরী ‘আম্পান’ সাইদ তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এই কুঁড়েঘরেই কাটিয়েছে। এছাড়া প্রতি গোণে জোয়ারের পানি তার দেয়াল চুঁইয়ে চুঁইয়ে ভেতরে আসতে থাকে। যে কোন সময় এ কুঁড়েঘরটি ভেঙে সব ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। মেয়েটিও সাঁতার কাটতে পারে না। নদীতে কখন কি হয় সে আশঙ্কায় সব সময় তটস্থ থাকতে হয় পরিবারটির। কিন্তু বাড়িতে ঘর বাঁধা হয়নি। একটি ছোট ডিঙি নৌকায় নদীতে কাঁকড়া ধরা ও রমেছা খাতুনকে নিয়ে ছোট্ট ডিঙিতেই শুরু হয় আমার ২য় সংসার। এরমধ্যে জন্ম হয় সাদিয়ার। তখন বাধ্য হয়ে আমাকে জমিতে আশ্রয় নিতে হয়। সেখান থেকে কাজ খুঁজতে থাকলে অ্যাড. মোশারফ হোসেন আমাকে চরের এই মাছের ঘেরটির দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেন। ঘেরের কলগৈ এর ৪ হাত বাসাটি আর দুহাত বাড়িয়ে ৬ হাত করে নিয়ে কোনমতে মাথগোঁজা ঠাঁই করেছি। এদিকে মামলা চালাতে নিয়মিত টাকা লাগে। তাই ছোট্ট ডিঙি নৌকাটিও এক সময় বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এরপর উপায় না পেয়ে এনজিও থেকে ঋণ নিতে শুরু করি। এক পর্যায়ে ‘আশা’ সমিতি থেকে ৩০ হাজার, ‘আইডিয়াল’ থেকে ৩টি বইয়ে ৭৩ হাজার, আরআরএফ থেকে ২০ হাজার, পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন থেকে ১৫ হাজার তুলে মামলা চালাচ্ছি। ছেলেটা স্কুলে দিলেও সে আর স্কুলে যেতে চায় না। মেয়েটা সবে স্কুলে যেতে শুরু করেছে। আম্পান ঝড়ে আমার কুঁড়ের সব গোল উড়ে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছিল। কিন্তু বাচ্চাটাকে নিয়ে আমি কোথাও যায়নি ঘরেই ছিলাম। আম্পানে সে সাহায্য পেয়েছে কি না জানতে চাইলে সাইদ জানায়- মেম্বর সাহেব ১০ কেজি সরকারি চাল দিয়েছিল। নদীর চরের কুঁড়েতেই আমার দিন কাটলেও কোন এনজিও আমার খোঁজ নেয়নি বলে সাইদ কেঁদে ফেলে। সে জানায়, সবাই চাল, ডাল, তেল, তাবু কত কিছু পাচ্ছে আমি কিছুই পেলাম না। এমপি স্যার, উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম ও আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান স,ম সেলিম রেজা মিলনের মাধ্যমে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে একটি সরকারি ঘর বরাদ্দ দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি। 8,960,442 total views, 16,192 views today |
|
|
|