Site icon suprovatsatkhira.com

আম্পানে ভেঙে গেছে আশাশুনি সদর টু বলাবাড়িয়া যাতায়াতের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি

নিজস্ব প্রতিনিধি : সুপার সাইক্লোন আম্পানে আশাশুনি সদর টু বলাবাড়িয়া গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় জন-দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ার ৩৩ দিন অতিবাহিত হলেও সরকারি-বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানই রাস্তাটি মেরামত করতে এগিয়ে আসেনি। তাই বর্ষা-কাদায় আশাশুনি সদরসহ অন্যান্য স্থানে যেতে হলে পথচারীদের কাদা-পানিতে পড়ে নাকানি চুবানি খেতে হয়।

সরজমিনে এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়- বলাবাড়িয়া গ্রামের কালিদাসী নামে পক্ষঘাতগ্রস্ত এক বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে তার বৌমা ও পৌত্র কখনও কাঁধে, কখনও দুজনে উঁচু করে কোন রকমে রাস্তার ভাঙা স্থানের খাঁদের ধারে নিয়ে বসে আছে।

বৃদ্ধার বৌমা দ্রৌপদীর সাথে কথা বললে তিনি জানান- আমরা দয়ারঘাট গ্রামের বাসিন্দা। খোলপেটুয়া নদীর অব্যাহত ভাঙনে আমাদের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেলে কয়েক বছর আগে বলাবাড়িয়া গ্রামে বসবাস শুরু করেছি। শাশুড়ির বয়স্ক ভাতা তুলতে তাকে ব্যাংকে নিতে হবে তাই বসে আছি। শাশুড়ি চলতে পারে না। এদিকে যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা নেই। বাড়ি থেকে কোন রকমে নিয়ে এসে কীভাবে নিয়ে যাব তাই ভাবছি। প্রখর রৌদ্রে বসে থাকার পরে সামিয়া শ্রিম্প লি. (বড়ঘের) এর লোকজন তাদের একটি নৌকায় বৃদ্ধাকে নিয়ে রাস্তায় তুলে দেয়। এখানেই শেষ নয়; কাঁচা রাস্তায় উঠেও পাকা রাস্তা ধরতে গেলে আরও প্রায় ৪শ হাত কাদা পেরিয়ে তারপর ভাড়া করা ভ্যানে উঠতে হবে। বৃদ্ধার পরিবার বলেন পাকা না হোক এ রাস্তাটা যদি বেঁধে দিয়ে চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা খুবই উপকৃত হব।

আম্পানের তাÐবে নদীর পানি ছাপিয়ে ছোট ছোট ঘের প্লাবিত করে এ রাস্তাটি প্রায় ১৫ হাত ভেঙে গভীর খাঁদের সৃষ্টি হয়েছে। এ কাঁচা রাস্তাটি যেমন আশাশুনি সদর থেকে বলাবাড়িয়া যাবার একমাত্র পথ ঠিক তেমনি সামিয়া শ্রিম্প লি. এর চিংড়ি ঘেরের পূর্ব পাশের বেড়ি-বাঁধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ বছরের জানুয়ারিতে দু’ধারে মাটি দিয়ে ৪ হাত মাথা তৈরি করে কোন রকমে চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়। কিন্তু বিধি-বাম গত ২০ মে আম্পানে ভেঙে গিয়ে আবার একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

শুকনো মৌসুমে বলাবাড়িয়া, হাঁসখালী, গাইয়াখালী ও খাসেরবাদ গ্রামের শত শত মানুষ কেয়ারের রাস্তা পেরিয়ে এ পথ দিয়ে সহজে আশাশুনি সদরে যাতায়াত করতে পারে। এছাড়া আশাশুনি সদরের বহু মানুষের চিংড়ি বলাবাড়িয়া গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় হওয়ায় ঘেরে যাতায়াতে রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৫ সালে বলাবাড়িয়া গ্রামের নদী বাঁধ ভেঙে যাবার পরে কেয়ারের রাস্তাটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। তারপরও বর্তমানে ঘেরের বেড়ি-বাঁধ দিয়েও মানুষ যাতায়াত করে থাকে। বছরের শুরুর দিকে ভাইস চেয়ারম্যান বিলুপ্ত কেয়ারটি উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি।

বলাবাড়িয়া থেকে শুরু হওয়া ১ হাজার মিটারের রাস্তাটির বড় একটি অংশ ব্যক্তি মালিকানার জমি বিধায় সরকারিভাবে রাস্তাটি পাকাকরণ করা যায়নি। বছরের শুরুতে জমির মালিকরা স্বেচ্ছায় রাস্তাটি সম্প্রসারণে একমত পোষণ করায় উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে রাস্তাটিতে মাটি দেওয়া হয়।

বর্তমানে বলাবাড়িয়া গ্রামের ও ঘেরে যাতায়াতকারী শত শত মানুষ গামছা নিয়ে খাল পার হয়ে অথবা নদীর ধার দিয়ে মন্টু মÐলের ঘেরের ছোট রাস্তা দিয়ে কাদা-পানি মেখে হামাগুড়ি দিয়ে পড়তে পড়তে যাতায়াত করে থাকে। ছোট শিশু, নারী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও অসুস্থ মানুষেরা খুবই ভোগান্তিতে রয়েছে।

এরকম অবস্থায় গত ৩৩ দিন যাবৎ রাস্তাটি সেভাবে পড়ে আছে। সামিয়া শ্রীম্প’র লোকজন বাঁশ দিয়ে পাইলিং করে পাশের ঘেরের মালিকদের জমিতে ছোট আইল দিয়ে রাখলেও তার উপর কাঁটা বিছিয়ে রেখেছে যাতে মানুষ চলাচল না করতে পারে। রাস্তাটি এখন কার ? কে বাঁধবে ? এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

অবিলম্বে রাস্তাটি মেরামত করে জনগণের চলাচলের উপযোগী করে তুলতে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version