জয়নগর (কলারোয়া) প্রতিনিধি : শ্বশুরালয়ে জোরপূর্বক কয়েকবার গর্ভপাতের কারণে বর্তমানে পঙ্গুত্ব বরণ করে মৃত্যুশয্যায় কলারোয়া উপজেলার জয়নগরের সাবিকুন নাহার মিতু(১৭)। সে ইউনিয়নের ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের সিদ্দিক মালীর মেয়ে ও একই এলাকার হুসাইন মালীর স্ত্রী।
মিতুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে প্রতিবেশী সরোয়ার মালীর ছেলে হুসাইন মালী ১৩ বছর বয়সী মিতুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে দুই পরিবারের সম্মতি না নিয়ে বিয়ে করেন। এরপর মিতুর স্বামীর বাড়ি থেকে তাদের বিয়ে সম্মতি দেয়। পরে বিগত চার বছরের মধ্যে তিন বার জোরপূর্বক গর্ভপাত করানো হয় তাকে।
ভুক্তভোগী মিতু জানায়, ‘গর্ভপাত করতে রাজি না থাকলে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন শারীরিক নির্যাতন চালাতো এমনকি হত্যার হুমকিও দেয়। নির্যাতন সইতে না পেরে ভয়ে এক পর্যায়ে গর্ভপাত করাতে রাজি হয়। এভাবে হুমকির মুখে ফেলে বিগত চার বছরে তিনবার গর্ভপাত করানো হয়েছে’। তারপর ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বামীর বাড়ি থেকে মিতুকে বাবার বাড়ি পাঠানো হয়। দীর্ঘ এক বছর মিতু বাবার বাড়িতে এবং ঢাকা-খুলনায় উন্নত চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হতে পারেনি। বর্তমানে সে শয্যাশায়ী হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
মিতুর বাবা সিদ্দিকুর রহমান জানায়, ‘আমার মেয়েকে সুস্থ করার জন্য ১০ লক্ষাধিক টাকা টাকা খরচ করে আমি সর্বশান্ত হয়ে গেছি তবুও সুস্থ করতে পারিনি। এখন মৃত্যু পথযাত্রী মেয়েকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। ডাক্তার বলে দিয়েছে আর বেশিদিন বাঁচবে না’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়েকে নিয়ে হুসাইন মালীর পরিবার যে নির্যাতন করেছে ও গর্ভপাতের মত জঘন্য কাজ করিয়েছে আমি তার সঠিক বিচার চাই’। এ বিষয়ে মিতুর শ^শুর সরোয়ার মালী জানায়, ‘তিনি বা তার পরিবারের কেউ তার পুত্রবধূর উপর কোন প্রকার নির্যাতন করেনি এবং গর্ভপাতের কোন ঘটনা ঘটেনি’।
এ বিষয়ে মিতুর স্বামী হুসাইন মালীর সাথে কথা বলতে তাকে বাড়িতে না পেয়ে মুঠো-ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু জানায়, ‘মেয়েটিকে সুবিচার পাইয়ে দিতে কয়েকবার সালিশ করেও ছেলে পক্ষ আমার বিচার মানতে চায়নি’।
তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে আমি ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছিলাম। যার উপদেষ্টা ছিলেন জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান মালী। এরপর ঘটনার সত্যতা পেয়ে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরোয়ার মালিকে (ছেলের পিতা) তার পুত্রবধূর পূর্বের চিকিৎসার খরচ বাবদ ছিদ্দিক মালিকে (মেয়ের পিতাকে) ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া বর্তমানে মিতুর চিকিৎসার খরচ বাবদ মেয়ের পিতা বহন করবে মোট চিকিৎসার ৩ ভাগের এক ভাগ এবং ছেলের পিতা ৩ ভাগের দুই ভাগ এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। কিন্তু তাৎক্ষণিক বিষয়টি সরোয়ার মালী মেনে নিলেও পরবর্তীতে তারা টাকা দিতে অস্বীকার করে’।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী মিতুর পরিবার।