তালা প্রতিনিধি : তালা উপজেলার রায়পুর গ্রামের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র কালভার্টের মুখে বাঁধ দিয়ে আটকে দেয়ায় সীমান্তবর্তী পাইকগাছার কাশিমনগর, রামনগর ও তালার রায়পুর এলাকার বহু পানের বরজ ও ফসলের ক্ষেত তলিয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না হলে বিস্তীর্ণ এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা যায়, ‘সাতক্ষীরার তালা উপজেলার রায়পুরের একাংশ এবং সীমান্তবর্তী খুলনার পাইকগাছার কাশিমনগর ও রামনগরের একাংশের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ রায়পুরের ঘোষপাড়াস্থ একটি মাত্র কালভার্ট। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে ওই কালভার্ট দিয়েই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশিত হয়ে আসছে।
এলাকাবাসীর কথা চিন্তা করে বর্তমান সরকারের সময়ে বছর দুয়েক আগে সেখানে স্থানীয় ইউপি সদস্য বিকাশ’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কালভার্টটির পুনর্নিমাণ হয়। তবে চলতি বর্ষা মৌসুমের আগেই স্থানীয় মৃত মনিন্দ্র ঘোষের ছেলে সন্তোষ ঘোষ উক্ত কালভার্টের মুখে বাঁধ দিয়ে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় পানি বন্দি হয়ে রয়েছে ওই এলাকার বহু পানের বরজ ও ফসলের ক্ষেত। জরুরী ভিত্তিতে পানি নিষ্কাশন না হলে পান বরজের ব্যাপক ক্ষতি সাধনের পাশাপাশি বিস্তীর্ণ এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন তারা।
সর্বশেষ গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ওই এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরা গত ১২ জুন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সন্তোষকে বাঁধের অংশ বিশেষ খুলে দেওয়ার জন্য করুণ আকুতি জানালে মানবিক দিক বিবেচনায় সন্তোষ ঘোষ সন্ধ্যার দিকে বাঁধের অংশ বিশেষ কেটে পানি সরানোর ব্যবস্থা করলেও ঘণ্টা খানেকের মধ্যে তা ফের বেঁধে দেন। তার অভিযোগ, পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করায় বিষাক্ত পানি পুকুরে ঢুকে তার মাছ মরে ক্ষতিসাধন হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, তার পুকুরের পাড়ে দীর্ঘ দিন যাবৎ তার শরিকরা গরুর মল-মূত্র স্তুপ করে রাখায় অতিবৃষ্টিতে তা পুকুরের সাথে মিশে মাছ ভাসতে শুরু করে। বাঁধের অংশ বিশেষ কেটে দেওয়ার আগে বিষয়টি সন্তোষসহ এলাকাবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন।
এরপর বাঁধের মুখ ছেড়ে দিলে মাছ ভেসে ওঠার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ফের বেঁধে দেন বাঁধটি। তার ধারণা, বাইরের পানিতেই তার মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য বিকাশ মন্ডল জানান, ‘পানি-বন্দিতার বিষয়টি জানার পর তিনি একাধিকবার সন্তোষের সাথে কথা বলেছেন কালভার্টের মুখ খুলে দিতে। কিন্তু এজন্য তিনি স্থানীয় নানা প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করে তাদের প্রতি ক্ষোভও প্রকাশ করেন’।
এ ব্যাপারে পাশের ঘোষনগর-গঙ্গারামপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রকাশ চন্দ্র দালাল এ প্রতিনিধিকে জানান, ‘রায়পুর ঘোষপাড়ায় কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেয়ায় তার এলাকার অনেকে যারা ওই এলাকায় পানের বরজসহ চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া তার এলাকারও নিন্মাংশের জল নিষ্কাশন হয় ওই কালভার্ট দিয়ে। এজন্য তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে সন্তোষ ঘোষ জানান, ‘সে দীর্ঘদিন ধরে দু’টি পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করে আসছে। মাছগুলো কিছুদিন পরেই বিক্রি করত। শুক্রবার বিকালে পাইকগাছার কপিলমুনির কাশিমনগর গ্রামের লোকজনের চাপে বাঁধের অংশ বিশেষ কেটে পানি সরাতে বাধ্য হন। মাছ মরার জন্য ওই ঘটনাকে দায়ী করেন তিনি।