Site icon suprovatsatkhira.com

সুবিধা বঞ্চিত ভাঙন কবলিত কাশিমাড়ীবাসী: পদধূলি পড়েনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের

ডেস্ক রিপোর্ট : সুপার সাইক্লোন আম্পান এর তাণ্ডবে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের অন্যান্য জেলার মত সাতক্ষীরাও বিধ্বস্ত হয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য উপজেলার মত শ্যামনগর উপজেলাও বিধ্বস্ত হয়েছে। এরমধ্যে খোলপেটুয়া নদী বেষ্টিত কাশিমাড়ী ইউনিয়নেও প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আমফানের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। খোলপেটুয়া নদীর দীর্ঘ দুই কিলোমিটার ওয়াপদার মধ্যে ছয়টি স্থানে মারাত্মকভাবে নদীর বাঁধ ভেঙে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়। ভাঙ্গন অংশ দিয়ে খোলপেটুয়া নদীর লবণাক্ত পানি প্রায় কাশিমাড়ী ইউনিয়নের সকল গ্রামকে প্লাবিত করেছে। ভেসে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের, জমির ফসল, পশুপাখি সহ উপড়ে পড়েছে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি। এসমস্ত ঘূর্ণিঝড় ও নদীর বাধ ভাঙন কবলিত এলাকার আশ্রয়হীন মানুষেরা আশ্রয় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী সাইক্লোন শেল্টার এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও আশ্রয়হীন হয়ে অনেকেই এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

তবে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর বুধবার (২৭ মে) কাশিমাড়িতে ভাঙন কবলিত এলাকায় যান শ্যামনগর সহকারী কমিশনার ভূমি আব্দুল হাই সিদ্দিকী।এছাড়া অদ্যাবধি সরকারি কোন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেনি, এমনকি দুর্ভোগ পতিত মানুষের কেউ কোন খবর দেইনি এমনটাই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী বানভাসি মানুষ। তবে ইউনিয়নের আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা পড়েছে নানা বিপাকে। রোজার শেষের দিকে আঘাত হানা প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় “আম্পান” লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া অনেকের ভাগ্যে ঠিকমত খাবার জোটেনি। এমনকি খাবার নিয়ে কেউ তাদের পাশেও দাঁড়ায়নি। করোনা এবং ঘূর্ণিঝড় এর কারনে তাদের এবারের ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আজ পর্যন্ত কেউ খোজ নেয়নি। দুবেলা দুমুটো খেয়েছি কি না তাও কেউ শোনেনি, ত্রাণ তো দুরের কথা, এমনটাই আক্ষেপ করে বলছিলেন কাশিমাড়ীর খেজুর আটি গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ স্বামী পরিত্যাক্তা জোবেদা বেগম।

জোবেদা বেগম জানান, প্রায় দুইযুগ আগে তার এবং দুই বাচ্চাকে ছেড়ে তার স্বামী অন্যত্র পাড়ি জমায়। দ্বিতীয়বার আর কখনো তাদের খোঁজ নেই নি। এরপর থেকে ওই এলাকায় সে দুই পুত্র সন্তানকে নিয়ে এযাবৎকাল বসবাস করে আসছে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় আইলা এবং সদ্য আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে তাদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। স্বামী পরিত্যক্তা জোবেদা বেগম আরও অভিযোগ করেন, ঘূর্ণিঝড় হয়েগেছে ৬দিন হয়ে গেলেও এখনো কেউ তার খোঁজ নেইনি। এমনকি আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে সে এবং তার দুই ছেলের পরিবারসহ সবাই পার্শ্ববর্তী কাশিমাড়ী সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে, সেখানেও তাদের কেউ খোজ নেয়নি।

শুধু স্বামী পরিত্যক্তা জোবেদায় নয়, এমন অভিযোগ কাশিমাড়ীর গাঙআটি গ্রামের গোলাম বারীর ছেলে আব্দুল মাজেদ, ইসমাইলের ছেলে খলিল, সিরাজের স্ত্রী রাশিদা, সোহরাব গাজীর ছেলে আজগর সহ আব্বাস আলী ও দাউদ সরদারের মত শত শত মানুষের।
ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আব্দুর রউফের নেতৃত্বে ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রতিদিন কয়েক হাজার এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাধ বাধার কাজে নিয়োজিত আছে। তবে ‘পাওবো’র কোন কার্যক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, টেকশই বাধ নির্মাণ ছাড়া উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলা কে বিভিন্ন দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব না। পূর্বের মত যেনতেন ভাবে নামেমাত্র বাধ বাধলে পরবর্তীতে এরচেয়েও আরও খারাপ অবস্থা হতে পারে এই উপকূল বাসীর ভাগ্যে এমনটাই আশংকা করছেন এলাকার সুধী মহল।

এদিকে কাশিমাড়ীতে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরকারি কোন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা পরিদর্শনে আসেনি এমনকি খোঁজখবর রাখে নি উল্লেখ করে কাশিমাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান এস এম আব্দুর রউফ জানান, সুপার সাইক্লোন আমফানের তাণ্ডবের পর থেকে তার প্লাবিত ইউনিয়নে শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের কোন কর্তা ব্যক্তিরা একটি বারের জন্য খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন নি। শুধুমাত্র সাতক্ষীরা -৪ আসনের সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার তার কাছে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জেনেছেন এবং প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন ভুমিকা তিনি লক্ষ্য করছেন না এমনকি তার সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি বলেও জানান চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ ।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ আরো জানান তার ইউনিয়নের ঝাপালে টু ঘোলা খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটার জায়গা ৬টি স্থান ভেঙে গেছে। ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রাম প্লাবিত, প্লাবিত এলাকা থেকে হু হু করে নদীর লবণাক্ত পানি পার্শ্ববর্তী আটুলিয়া ও কালীগঞ্জে কৃষ্ণনগর সহ আরো বেশ কিছু এলাকায় ঢুকে অন্তত সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নে ১৬টি সরকারি বেসরকারি সাইক্লোন সেন্টারে এবং উচু রাস্তার উপরে কয়েক হাজার লোক আশ্রয় গ্রহণ করেছে। সরকারি ত্রাণ হিসেবে এ পর্যন্ত মোট ৫ মেট্রিক টন চাউল ছাড়া আর কিছুই পাইনি।

ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আব্দুর রউফ জানান, ঘূর্ণিঝড় পূর্ব থেকেই মাঠে থেকেই মানুষকে সচেতন করে গেছি। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পরপরই স্বেচ্ছাসেবক সহ সবাইকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছি। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পরপরই ইউনিয়ন বাসী কে সাথে নিয়ে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার ঝাপালী টু ঘোলার খোলপেটুয়া নদীর ভাঙন এলাকায় বেড়িবাধ দেওয়ার কাজ করছি। তবে সরকারি কোন হস্তক্ষেপ পেলে দ্রুত কাজের অগ্রগতি হতো। এসময় তিনি স্থায়ীভাবে বাধ রক্ষার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version