Site icon suprovatsatkhira.com

রিপোর্ট আসার আগেই কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়! এখন দায় নেবে কে?

দেবহাটায় শিশু,নারী, গ্রাম পুলিশসহ করোনা আক্রান্ত ২৩: জেলা জুড়ে আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিনিধি: দেবহাটায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়ী ফেরা চার শিশু ও এক গ্রাম পুলিশসহ নারায়নগঞ্জ ফেরত ২৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। রবিবার (১৭ মে) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রো বায়োলজী ল্যাব (পিসিআর ল্যাব) থেকে তাদের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে করোনা ভাইরাস শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

তবে কোয়ারেন্টাইনে থাকা আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হলেও রিপোর্ট আসার দুইদিন আগে তাদের কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কিছুদিন আগেই যাদের সাথে থাকা এক ব্যক্তির করোনা রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে তারা কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেল কিভাবে? অথচ রিপোর্ট না দেখে তাদের বাড়িতে পাঠানোর বিষয়ে কিছুই জানে না স্থানীয় থানা পুলিশ ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

সংশ্লিষ্ঠরা জানান, দেবহাটার প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নারায়নগঞ্জ ফেরত ইটভাটা শ্রমিক রেজাউলের সাথে সরকারি খানবাহাদুর আহছান উল্লাহ কলেজে কোয়ারেন্টাইনে থাকাবস্থায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে শিশু ও গ্রাম পুলিশ সহ ২৩ জনের শরীরে। এর আগে গত ১ মে নারায়নগঞ্জ থেকে আসার পর ইটভাটা শ্রমিকসহ ২৩ জন ও তাদের সংষ্পর্শে যাওয়া গ্রাম পুলিশ আব্দুর রহমানকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খানবাহাদুর আহছানউল্লা কলেজে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।

সেখানেই চলছিলো করোনা আক্রান্ত রেজাউলের চিকিৎসা। চৌদ্দ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন শেষ হওয়ার আগে তাদের প্রত্যেকের নমুনা পরীক্ষার কথা ছিলো। সে মোতাবেক ১৪ মে কোয়ারেন্টাইন শেষ হওয়া মাত্রই তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রো বায়োলজী ল্যাবে পাঠানো হলেও রিপোর্ট আসার আগেই তড়িঘড়ি করে ওই দিনই (১৪ মে) কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যাক্তিদের বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে গত তিন দিন ধরে তারা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছে। করোনা শনাক্ত হওয়াদের অনেকেই আবার ঘুরে ঘুরে ঈদ কেনাকাটাও করেছেন বলে স্ব স্ব এলাকা থেকে জানা গেছে। কিন্তু রবিবার হঠাৎ করেই তাদের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় দেবহাটাসহ পুরো জেলাজুড়ে জনমনে তীব্র আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ডা, জয়ন্ত জানান, কোয়ারেন্টাইন থেকে তারা কিভাবে বাড়ি ফিরে গেছে তা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ শুধুমাত্র তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠিয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোন উপসর্গ ছিল না।

এ বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন সুপ্রভাত সাাতক্ষীরাকে জানান, প্রশাসনের নজর এড়িয়ে করোনা আক্রান্তদের ঘুরে বেড়ানো অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে এবিষয়ে আগে কেউ উপজেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশকে জানায়নি। করোনা আক্রান্তদের প্রত্যেকের বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে তাদের কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে তাদের করোনার কোন উপসর্গ না থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে ও IEDCR এর পরামর্শ ও সিভিল সার্জনের অনুমতি নিয়ে ১৫ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন শেষে হোমকোয়ারেন্টাইন এ পাঠানো হয়। তাদেরকে পুনরায় IEDCR এ সরাসরি টেস্ট এর ব্যাবস্থা কর হবে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে জানান, পুলিশ গত ১ মে নারায়নগঞ্জ থেকে আসার পর ওই ইটভাটা শ্রমিকদের আটক করে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। পরে উপজেলা প্রশাসন তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চীত করতে ব্যবস্থা নেয়। সেখানে থাকা অবস্থায় একজনের করোনা শনাক্ত হয়। কিন্তু বাকিদের রিপোর্ট আসার আগেই ছাড়ের বিষয়ে পুলিশকে কিছুই জানানো হয়নি। সাতক্ষীরায় করোনার বিস্তার রোধে জেলা পুলিশের সদস্যরা দিনরাত পরিশ্রম করছে। জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে জেলা পুলিশেল টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। আক্রান্তদের দ্রুত সমযের মধ্যে খুজে এনে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।

জেলাবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থেকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়ে পুলিশ সুপার আরও বলেন, এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে পুলিশের যতেষ্ঠ প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা পুলিশের একটি বিশেষ টিম (কুইক রেসপন্স টিম ) প্রস্তুত করা হয়েছে। করোনায় আক্রান্তদের উদ্ধার ও মৃতদেহ সৎকারের জন্য তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। জেলার মানুষকে নিরাপদে রাখতে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ বদ্ধপরিকর।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version