Site icon suprovatsatkhira.com

দেবহাটার নওয়াপাড়ায় ইছমতির বেড়িবাধে ভাঙন: ইউপি সদস্যের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে বাধ নির্মান

মীর খায়রুল আলম : নদীর একূল ভাঙে, অপর কূল বাধে। এই প্রবাদ প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। ঠিক তেমনই ঘটে বাংলাদেশ ভারত দুদেশের সীমান্তবর্তী নদী ইছামতিতে। স্থায়ী বাধ নির্মান না হওয়ায় এমন সমস্যার সম্মূখিন হতে হয় এ জনপদের মানুষের। আর এতে সীমান্ত পাড়ের মানুষের দুঃখের শেষ থাকে না। চলতি মৌসুমে ইছামতি নদীর পাড়ে সৃষ্ট ভাঙ্গনে প্লাবিত হয়ে নাংলা এলাকায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মূখিন হয়েছেন এই এলাকার মানুষ। ঠিক তার কিছু দুরেই নওয়াপাড়া সীমান্তে ভাঙ্গন দেখা দিলে মঙ্গলবার স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মনি মসজিদের মাইকে স্বেচ্ছায় কাজ করার জন্য এলাকাবাসীকে আহবান জানান।

পরদিন বুধবার সকাল ৭টা থেকে শতাধীক মানুষের অংশ গ্রহনে বাধ নির্মানের কাজ শুরু হয়। ইতোপূর্বে ইছামতি নদীর বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাধে ভয়াবাহ ফাটল দেখা দিলেও তেমন কোন উদ্যোগ না থাকায় সাধারণ মানুষের মনে ভয়, আতঙ্কে কাটছে না। তাছাড়া পূর্বেল ভাঙ্গনের ফলে প্লাবিত হয়ে কোটি টাকার সম্পদের পাশাপাশি শতার্ধীক পরিবার চরমবিপাকে পড়ে মানুষ।

সরেজমিনে যেয়ে দেখাগেছে, নওয়াপাড়া সীমাান্তের একটি পয়েন্টে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সেখানে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে। নদীতে জাল পাতা ও নদীর বাধের সাথে মৎস্যঘের গড়ে উঠেছে সেখানে নিয়মিত জোয়ার ভাটা হয়। আর এতে উক্ত এলাকায় প্রতিবছর নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে নদীর পাড়ের সাথে এসব ঘের গুলো সরকার দলীয় বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতারা পরিচালনা করেন। যার ফলে স্থানীয়দের কোন কথায় তারা কর্ণাপাত করেন না। যে কারণে নদী ভাঙ্গন থামছে না। তবে বর্তমান নদীতে জোয়ারে পানি বেশি হওয়ায় অধিকাংশ বেড়িবাধ নাজুক হয়ে দাড়িয়েছে। এতে যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে ইছামতির বাধ। আবারও প্লাবিত হয়ে ভেসে যাবে অসংখ্য ধন সম্পদ। কোন কিছুতে রক্ষা পাবে এমন নিশ্চয়তা নেই স্থানীয়দের। ঘুম নেই রাতে সীমান্ত পাড়ের মানুষের। সব সময় মনে হয় এই বুঝি এলো পানি, এই যেন এল।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুজ্জামান গাজী জানান, নদীর বাধের সাথে মৎস্যঘের করায় বার বার নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। এ কারণে গত বছর এলাকাবাসীর সাথে আমি বাদি হয়ে বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ প্রদান করি। কিন্তু প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা শ্যাম মোল্যা ও মিজান সরদার ক্ষমতার দাপটে সেটি বন্ধ করে দেয়।

স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানান, ভাঙ্গনে প্লাবিত হলে আমাদের দুঃখের শেষ থাকবে না। সা¤প্রতিক ইছামতি যে ভাবে পরিপূর্ণ দেখে ভয় হয় কখন না পানি বেড়িবাধ ভেদ করে গ্রামে পানি ঢোকে। শুনছি নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ করা হবে। কিন্তু সে কবে? নদী ভেঙ্গে গিলি তারপর। সামনে বর্ষার মৌসুম আসবে তার আগে যদি কোন কিছু না করে তাহলি কি আমাদের কি হবে। অফিসাররা পাকা দালানে থাকেন বলে আমাদের কথা চিন্তা করে না তাই আমাদের এমন দূর্ভোগ।

ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মনি জানান, ভাঙ্গন দেখা দিলে জনসাধানরণের সহযোগীতায় বাধ নির্মানের কাজ শুরু করি। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করলে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বস্তা এনে বাধ রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরিন জানান, খবর পেয়ে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। একই সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিও ব্যাগ নিয়ে বালুর বস্তা ভরে সেখানে বাধ রক্ষায় কাজ হচ্ছে।

তবে উল্লেখ্য যে, প্রতি বছরই ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড লাখ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করলেও ইছামতির ভাঙ্গন রোধে তা যথাথ ভূমিকা রাখতে ব্যার্থ হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেই সাথে ভাঙ্গন রোধে গৃহীত পদক্ষেপে অনিয়ম এবং দুর্নীতি থাকায় স্থায়ী সমাধান হয় না বলেও জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। বরাদ্দকৃত অর্থ যৎসামান্য কাজ হয় বাদ বাকি বিভিন্নভাবে ভাগ বাটোয়ারা হয় এমন জনশ্রুতি বিদ্যমান। সীমান্ত পারের ভুক্তভোগেী আতঙ্কিত জনগণের বক্তব্য নদী ভাঙ্গনের স্থায়ী সমাধান হোক এমনটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এদিকে, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুনসুর আহম্মেদ, সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গণি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরিন, দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদৌস আলফা, নওয়াপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন সাহেব আলী।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version