Site icon suprovatsatkhira.com

খনন শেষ হওয়ার আগেই খুলে দেয়া হলো সাপমারা খাল জোয়ারের স্রোতে ভেসে গেল দেবহাটা স্বপ্ন

মীর খায়রুল আলম : বহুল আলোচিত দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া সাপমারা খাল পুনঃ খনন শেষ হওয়ার আগেই খুলে দেয়া হয়েছে। এতেই উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বানের জলে ভেসে গেছে। উপজেলার পারুলিয়া সাপমারা খাল খননে অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হলে কিছুটা নড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকে খুব সুকৌশলে দায়সারাভাবে শেষ হওয়ার আগেই খালের জোয়ারের পানি তুলে দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা পানিতে ভেসে গেছে।

সম্প্রতি দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়সহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার সংযোগ হওয়া সাপমারা খাল খননকল্পে গ্রহন করা হয় দুইটি প্রকল্প। গত বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে নদী খনন পর্যায়ে দেবহাটার সাপমারা খালটির আশাশুনীর শোভনালী ইউনিয়নের কাটাখালী হতে দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত দেবহাটা সদর ইউনিয়নের ভাতশালায় ইছামতি নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খননের জন্য দুইটি প্যাকেজে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।

বরাদ্দ পরবর্তী টেন্ডারের মাধ্যমে খাল খননের দুটি প্যাকেজের কাজ পায় পটুয়াখালীর আবুল কালাম আজাদ ও ঢাকা বিজয় নগরের বশির উদ্দীনের এম কে এন্টারপ্রাইজ নামের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সাপমারা খালটির ৯ কিলোমিটারের এ খনন কাজে উপরিভাগে গড়ে ৩০ মিটার এবং তলদেশ গড়ে ৯ মিটার হারে খনন করা হবে বলে জানায় পাউবো কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া খালটি খনন কাজ চলাকালে দু-পাশের ১৫ ফিট করে জায়গা রেখে খালের খননকৃত মাটি ফেলতে হবে বলে জানা গেছে। সরকারিভাবে সাপমারা খাল খননের প্যাকেজ দুটির একটির কাজ আগামী জুন ও অপরটি আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।

কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা থাকলে ঘর, না থাকলে বুলড্রোজার, এমন কথা বলে কাজ শুরু করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। খালের গতিপথ পরিবর্তন করে প্রভাবশালীদের বাঁচাতে অসহায়দের ভোগ দখলীয় জমিতে খাল খনন করার অভিযোগও ওঠে। অন্যদিকে কাজ শেষ হওয়ার আগেই পাড়ের মাটি ধসে আবার পুনরায় ভরাট হচ্ছে খাল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে খাল পুনঃ খননের নামে চলছে অনিয়ম আর লুট পাট।

কিন্তু এখনও রয়ে গেছে প্রভাবশালী প্রতিপত্তিদের ভবনসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যা বর্তমানে দৃশ্যমান। এদিকে খাল খনন করতে যে অসংখ্য ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হয়। দু পাড়ের অসংখ্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে দেয় ঠিকাদারের লোক। বারবার দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়টি প্রকাশ হলেও কোন তোয়াক্কা ছাড়াই দায়সারাভাবে খনন কাজ চলমান রাখে জোয়ার উঠানো হয়। মঙ্গলবার এই ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তাদের দীর্ঘ দিনের আশা খাল খনন হবে পুনরায় নৌযান চলাচল করবে। কৃষি মৎস্যতে আসবে পরিবর্তন।

কিন্তু খালটি পরিপূর্ণ খনন না করে পুনরায় জোয়ার তলায় সে আশা ভেস্তে গেছে। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিপূর্ণ কাজ ছাড়াই টাকা নিয়ে এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আক্কেল আলী জানান, কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন আর আমরা কোনো দায়িত্ব নেই।

খাল এর বিভিন্ন অংশের ধস নামা এবং বিভিন্ন অংশের মধ্যে মাটির ঢিবি থাকা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যতটুকু সম্ভব কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আমাদের কাজ আমরা বুঝিয়ে দিয়েছি। খালটি রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এস সাইদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version