Site icon suprovatsatkhira.com

ইউরোপে যাচ্ছে না ১০০ মেট্রিক টন আম কলারোয়ার বিষমুক্ত হিমসাগর আমে করোনার থাবা!

মোস্তাক আহমেদ, কলারোয়া : কলারোয়ার ১০০ মেট্রিক টন বিষমুক্ত হিমসাগর আম ইউরোপে উড়াল দিতে পারছে না। বিষমুক্ত আম রপ্তানির লক্ষে শেষ মুহ‚র্তে ব্যাস্ত সময় পার করলেও করোনা দুর্যোগের কারণে চলতি বছর আম রপ্তানির সম্ভনা নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ফলে কয়েক কোটি টাকা লোকসানের আশংকায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন উপজেলায় শত শত আমচাষীরা। তবে, এ খাতের সাথে জড়িত সংশি¬ষ্টরা মনে করেন, রাজধানীর বড় বড় সুপারসহ সারাদেশে সঠিকভাবে বাজারজাতকরণ করা সম্ভব হলে চাষীদের ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে।

কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ মো: মহাসীন আলী জানান, বিশ^ব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে চলতি বছর বিদেশে আম রপ্তানি করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যার কারণে আর্থিক ক্ষতি এড়াতে উপজেলার আম চাষীদের দেশীয় বাজারে আম বিক্রির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কোন আমচাষী উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতা চাইলে ঢাকাসহ দেশের বৃহৎ সুপারশপগুলির সাথে তাদের যোগাযোগ ও আম বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, এতিমধ্যে বৃহৎ সুপারশসহ বিভিন্ন পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে আমরা যোগাযোগ শুরু করেছি। এছাড়া উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে আম চাষীদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে কলারোয়া উপজেলায় ৬০২ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করা হয়েছে। মোট ২৬০০ ছোট-বড় বাগান রয়েছে। এর মধ্যে কৃষি অফিস থেকে জৈব সার, আর্সেনিকমুক্ত পানি ও মাছি-পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে বিষমুক্ত রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে বিশেষ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কৃষকদের নিকট থেকে ১২৫টি বাছাইকৃত আম বাগান কৃষি অফিস সরাসরি তত্বাবধায়ন করছে। এসব বাছাইকৃত কৃষকের আম বাগানের মধ্যে ৫০টি আম বাগান থেকে ১০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়। বাকী ৭৫টি বাগান থেকে ৩০০ মেট্রিক টন বিষমুক্ত আম দেশের বৃহৎ সুপারশপগুলিতে সরবরাহের জন্য নির্ধারণ করা।

উপজেলার কেরালকাতা গ্রামের আম ব্যবসায়ী কবিরাল ইসলাম জানান, এ বছর ১৬ লাখ টাকা দিয়ে আমের বাগান কিনেছি। অন্য বছরের মত খরচ বাদেও পাঁচ লাখ টাকা লাভের আশা ছিল। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে আম বিক্রি নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর ৪/৫ লাখ টাকার গুটি আম (কাঁচা আম) বিক্রি হয় কিন্তু দোকান, বাজার বন্ধসহ পরিবহন সমস্যার কারণে এ বছর সেটিও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া রয়েছে আম ভাঙার শ্রমিক সংকট। সব মিলিয়ে চলতি বছর উপজেলার বছর আম ব্যবসায়ীরা চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হতে পারেন। তবে, সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কম হবে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

এদিকে কলারোয়ার আমের বাজারগুলিতে বিষমুক্ত সু-স্বাধু ও মিষ্টি আম বাজারজাত করনে প্রস্তুত হতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীদের যাতায়াত শুরু হয়েছে বৃহৎ পাইকারী আমের বাজার কলারোয়ার বেলতলাসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলি। প্রশাসনিক আদেশের পর হিসাগর, গোবিন্দভোগ, আ¤্রপলি. গোপালভোগ ও বৈশাখী আমসহ স্থানীয় জাতের আম বাজারজাত শুরু হবে। তবে ইউরোপ জয়ী কলারোয়ার বিখ্যাত হিমসাগর আম ৩১ মে বাজারে আসবে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ মো: মহাসীন আলী জানান, গত বছর কলারোয়া উপজেলা থেকে জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় আম রপ্তানি করাসহ দেশের স্বপ্ন, আগোরাসহ নাম করা সুপারশপে আম সরবরাহ হলেও করোনার কারণে চলতি বছর আম রপ্তানির কোন সম্ভনা দেখা যাচ্ছে না। তবে, আমরা দেশের বড় সুপারসপ সহ বিভিন্ন বাজারে সঠিক ভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছি। যাতে আমচাষীরা ভালো দামে আমগুলি বিক্রি করতে পারে। এবিষয়ে আমরা ঢাকাসহ দেশের বড় সুপারসপ ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করছি। এছাড়া উপজেলার আম চাষীদের যাতে কোন সমস্যা না হয় সে জন্য কৃষি অফিস তাদের সাথে সব সময় যোগাযোগ করছে।

কৃষিবীদ মো: মহাসীন আলী আরো জানান, কলারোয়ার মাটি ও আবহাওয়া আম উৎপাদনের জন্য উপযোগী হওয়ায় দেশের অন্য জেলার থেকে ১৫/২০ দিন আগেই আম পাকে এবং এসব আম খেতেও সুস্বাধু। সে কারণে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে বিদেশে রপ্তানির বাজারে জায়গা করে নিয়েছে কলারোয়ায়ার হিমসাগর, ল্যাংড়া, আ¤্রপালি আম। তিনি বলেন, বিশ^ব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়লে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে কলারোয়া উপজেলা থেকে বিষমুক্ত ১০০ মেট্রিক টন আম ইউরোপে রপ্তানি ও ৩০০ মেট্রিক টন ঢাকার সুপারশপগুলিতে সরবরাহ করা সম্ভব হতো।

সাতক্ষীরা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, জেলায় আগামী ৩১ মে থেকে হিমসাগর, ৭ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আম্রপালি আম ভাঙা ও বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে যদি কোনো বাগানের আম পাকে, তবে সেটি কৃষি কর্মকর্তাদের জানালে তারা আম ভাঙ্গার ব্যবস্থা নেবেন।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, সাতক্ষীরায় নিরাপদ আম বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জেলার আমের সুনাম রয়েছে। সেই সুনাম ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। নির্ধারিত দিনের আগে গাছ থেকে আম ভাঙা যাবে না মর্মে ব্যবসায়ী ও চাষীদের সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া অপরিপক্ক আম কেমিকেল মিশিয়ে বাজারকরণের চেষ্টা করলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আম চাষীদের আতংকিত না হওয়ার পরমর্শ দিয়ে বলেন, সাতক্ষীরায় নিরাপদ আম সঠিক ভাবে বাজারজাতকরণ করা হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version