Site icon suprovatsatkhira.com

বেনাপোল-পেট্রাপোলে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার পণ্য বোঝাই ট্রাক

বেনাপোল প্রতিনিধি : বাংলাদেশ ও ভারতে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন বিধি নিষেধ জারি রয়েছে। তারই জেরে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর এলাকার অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। বেনাপোলে নেই কোনো শিল্প-কারখানা। বেনাপোল স্থলবন্দর ঘিরে জীবিকার জন্য নির্ভরশীল কয়েক হাজার মানুষ। এই পথে আমদানি-রফতানি দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকায় রোজগারে টান পড়েছে শ্রমিকদের। স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল-পেট্রাপোল।

একই সঙ্গে বেকার হয়ে পড়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার শ্রমিক। বন্দর ও কাস্টমস সংশ্লিষ্ট কয়েক শ’ এনজিওকর্মীরও একই অবস্থা। ভারত দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সিংহভাগ পণ্য আসে এই বন্দর দিয়ে। আপাতত বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে যুক্ত সীমান্ত এলাকার মানুষ করোনা নয়, রুজি-রুটি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন।

গত ২২ মার্চ ভারতে কারফিউ থাকায় এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২৩ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত লকডাউনের ঘোষণা দেয় ভারত। এর মধ্যে ২৩ মার্চ রাতে হঠাৎ ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তার সময়সীমা ছিল গত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। তারপর আবারও বাড়ানো হয় লকডাউনের সময়সীমা, যা এখনও চলছে। কবে উঠবে লকডাউন তাও কেউ বলতে পারছেন না।
বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধের ফলে উভয় সীমান্তে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার পণ্য বোঝাই ট্রাক। যার অধিকাংশই বাংলাদেশের রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পের ও দেশীয় বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল। যেগুলো বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায়।
গত ২২ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেনি। বেনাপোল বন্দর দিয়ে কোনো পণ্য নিয়ে ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরে যায়নি। আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় বাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ ট্রাক যোগে বিভিন্ন ধরনের পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়। ভারতে রফতানি হয় দেড় শ’ থেকে ২শ’ ট্রাক বাংলাদেশি পণ্য। প্রতি বছর এ বন্দর থেকে সরকার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা আমদানি পণ্য থেকে ও পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব পায়। কিন্তু এখন সবই স্থবির। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আর কতদিন আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকবে সেটা কেউ বলতে পারছেন না।
এরই মধ্যে গত ২২ এপ্রিল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে সরকার ১০ দিনের (৫ মে পর্যন্ত) সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে দেয়। তবে ছুটির সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সরবরাহ শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষে কাস্টমস হাউজ ও কাস্টমস স্টেশনসমূহে স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয় এনবিআর। সেই হিসেবে বেনাপোল কাস্টমস ও বন্দরে কাজ চলছে। তবে তা আশানুরূপ নয়।
গত ৩০ মার্চ এক আদেশে আমদানিকৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, জরুরী চিকিৎসা সামগ্রী ও অন্যান্য সেবা সামগ্রী, শিল্পের কাঁচামাল এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার আমদানিকৃত পণ্য খালাসের জন্য কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনগুলোকে নির্দেশ দেয় এনবিআর। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বেশকিছু পণ্য বেনাপোল কাস্টমস থেকে খালাস করলেও অধিকাংশ আমদানিকারক পণ্য খালাসে আগ্রহী ছিল না। তবে পণ্য আমদানি-রফতানি ও খালাসের সঙ্গে ভারতীয় কাস্টম, বন্দর, বেনাপোল বন্দর, ব্যাংক, ট্রান্সপোর্ট, উভয় দেশের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও বন্দর শ্রমিকরা জড়িত রয়েছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় না হলে কার্যত পণ্য আমদানি-রফতানি ও খালাস প্রক্রিয়া কতটুকু সফলতা পাবে সেটিও ভাবার বিষয়।
এদিকে বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে নানাভাবে আলোচনা হয়। কিন্তু পণ্য নিয়ে যাওয়া-আসা ট্রাকচালক ও হেলপারদের ফেরার পথে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করায় পণ্য পরিবহণে অনীহা প্রকাশ করেছেন তারা।
ওপারের বন্দর সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দরে আটকে থাকা ভারতীয় আটটি খালি ট্রাকসহ চালক এবং হেলপাররা কয়েক দিন আগে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। তবে পেট্রাপোল বন্দরে ফিরে যাওয়া ট্রাকচালক এবং হেলপারদের ওপর বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব চালকরা ভারতের উওর প্রদেশ ও বিহারের বাসিন্দা।

পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ভারতে দফায় দফায় লকডাউন ঘোষণা করায় সব ধরনের আমদানি-রফতানিসহ সীমান্ত-বাণিজ্য বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে করোনার আতঙ্কের জেরে স্থলবন্দর এলাকার অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। পণ্য বোঝাই কয়েক হাজার ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় দীর্ঘদিন পড়ে আছে। সেগুলোকে সঠিক পদ্ধতিতে বাংলাদেশে পাঠিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা চলছে।
ওপারের সীমান্তে বাণিজ্যে জড়িত ব্যবসায়ী প্রদীপ দে বলেন, আগে মানুষের জীবন। তারপর ব্যবসা। গত ২৩ মার্চ থেকে আমাদের কয়েকটি পাট বীজ বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে পেট্রাপোল বন্দরে। লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মধ্যে পড়ে আছি। তবু আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত হিসেবে নিয়েছি। কারণ কোনোভাবেই কোনো দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক আমরা তা চাই না।

বেনাপোল আমদানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক আনু বলেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্ক এতটাই ভয়ংকর যে, সীমান্ত সিল করে দিয়েছে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে। পাশাপাশি এর প্রভাবও ব্যবসা বাণিজ্যে পড়েছে। এখনই ক্ষতির মুখ দেখতে শুরু করেছে ভারত-বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রফতানিকারকরা। ক্ষতি কাটিয়ে নিতে জরুরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। সেই সঙ্গে সীমান্ত এলাকার হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ বিকল্প সঠিক পথ না পেয়ে বিপথে পা বাড়াবে। তাতেই সমস্যার সম্মুখীন হবে দেশের ব্যবসায়ীসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার আকরাম হোসেন বলেন, আমরা কাস্টম হাউজ খোলা রেখে কাজ করে চলেছি। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা পণ্য নিতে চাইলে আমরা দ্রæত সেটা শুল্কায়ন শেষে খালাসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমাদের সব কর্মকর্তা প্রস্তুত।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version