ডেস্ক রিপোর্ট : সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটি উপজেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরন ও সচেতনতামূলক অভিযান জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সহকারী কমিশনারদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে নিয়মিত এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
তারই ধারাবাহিকতায় সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা ও সরকারি আদেশ অমান্য করে ৬ টার পর দোকান খোলা রাখা এবং বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করার অপরাধে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযানে সর্বশেষ তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ২৮ টি অভিযানে ২৫ টি মামলায় ১৫ হাজার ৬শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এর মধ্যে তালা উপজেলায় ২ টি মামলায় ১ হাজার টাকা, দেবহাটা উপজেলায় ৭ টি মামলায় ২ হাজার ২শ’ টাকা, শ্যামনগর উপজেলায় ৬ টি মামলায় ৪ হাজার ৯শ’ টাকা, আশাশুনি ৩ টি মামলায় ১ হাজার ১শ’ টাকা, এবং জেলা প্রশাসনের ১০ মামলায় ৬ হাজার ৪শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এ পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধে জেলায় মোট ১৯৪৮ টি মামলায় ২০ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এছাড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা জনসাধারণের সহায়তার অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর অফিসে ত্রাণ তহবিল খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে জেলা প্রশাসকের ঈদ বোনাস, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ১ দিনের বেতন সমপরিমাণ অর্থ, জেলা কৃষি বিভাগ তাদের ১ দিনের বেতন সমপরিমাণ অর্থ ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সাহায্য হিসেবে প্রদান করেছেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে গত ৪/৫ দিনে নারায়নগঞ্জ, মাদারিপুর এবং শরিয়তপুর থেকে সেখানে ঘোষিত লক ডাউনের মধ্যেও ১০ হাজারের মত মানুষ সাতক্ষীরা জেলাতে এসেছে। এদের মধ্যে ২৬৪৩ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে এবং ৭১১৪ জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৬ জন, শ্যামনগর উপজেলায় ৯৬ জন, কালিগঞ্জ উপজেলায় ১৬০০ জন এবং আশশুনি উপজেলায় ০৩ জন, দেবহাটা উপজেলায় ২৮ জন, তালা উপজেলায় ৯০০ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
এছাড়া জেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে গোপনে নিজ জেলায় ফেরা নাগরিকদের নিরাপত্তা ও জেলাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং আনসার ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে।
যে সকল মানুষ লক ডাউন উপেক্ষা করে বিভিন্ন জেলা থেকে সাতক্ষীরা জেলা সীমান্তে আসছে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া অমানবিক। যারা ফিরে আসছেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
আতঙ্কিত না হয়ে সকলকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, ‘সাতক্ষীরা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এ পর্যন্ত ১৯৮ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ২২ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তবে আশার কথা হলো সবাই করোনা নেগেটিভ’।
এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শেণি-পেশার মানুষ যারা ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকাভুক্ত হতে সংকোচবোধ করছে কিন্তু খাদ্য সংকটে আছেন এমন মধ্যবিত্ত পরিবারের নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বারসহ এসএমএস এর মাধ্যমে সংগ্রহ করে এখন পর্যন্ত ৫৭৭ পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবার ছাড়াও অনেকে অতিরিক্ত এসএমএস ও ফোন দিচ্ছেন। সে কারণে এসএমএস এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর মেয়রের মাধ্যমে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর তালিকা করে তাদের বাড়ি বাড়ি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।
এছাড়া সরকারি ত্রাণের তালিকা এবং বিতরণে অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ও দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করা হবে। এছাড়া, দোকান খুলে দেয়ার কথা বলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দোকানদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ঘরে থাকুন, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন, নিরাপদে থাকুন। আপনি ঘরে থাকলে ভালো থাকবে আপনার পরিবার, ভালো থাকবে জাতি, ভালো থাকবে দেশ। জনস্বার্থে সকল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে’।