এপ্রিল ১৬, ২০২০
খলিষখালীতে কর্মহীন মানুষের বোবা কান্না, বাহিরে গেলে করোনায় মৃত্যু ঘরে থাকলে খাদ্যের অভাব
খায়রুল আলম সবুজ, খলিষখালী (পাটকেলঘাটা) প্রতিনিধি : পাটকেলঘাটার খলিষখালীতে করোনা ভাইরাসের কারণে অধিকাংশ কর্মহীন মানুষের দিন কাটছে উৎকণ্ঠায়। মটর গাড়ী চালক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, খেটে খাওয়া মানুষ সহ সব শ্রেনীর মানুষ এখন করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন। এছাড়াও চরম বিপাকে আছে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। বাহিরে গেলে করোনায় মৃত্যু ঘরে থাকলে খাদ্যের অভাব। এমনি এক কঠিন বিপদের ভিতরে কাটছে তাদের জীবন।
খলিষখালী ইউপি সচিব শহিদুল ইসলাম এর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ‘খলিষখালীতে ৩৩ টি গ্রামে মোট জনসংখ্যা আছে ৩১ হাজার ৮ শ’ ৮৬ জন। পরিবার আছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজারের মত। করোনা ভাইরাসের জন্যে জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক হওয়ার পর থেকে পরিষদে সরকারি বরাদ্দ এসেছে মাত্র ২ বার। প্রথমবার ৩৫০ মে.টন চাল এসেছিলো। বুধবার এসেছে ৩৫০ মে. টন চাল। এছাড়া কোন আর্থিক বরাদ্দ আসেনি’।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে গণপরিবহন বন্ধ সহ সমস্ত ঘরের বাইরে না বেরোতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সরকারি নির্দেশনা মেনে খলিষখালী বাজার, দলুয়া বাজার সহ কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে যানবাহন বা জনসমাগম নেই।
পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে সরকারের নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও দেশে সবই এখন বন্ধ থাকায় অধিকাংশ ট্রাক, বাস, ট্রলি, ইজিবাইক, মাহেন্দ্রা, মাইক্রো সহ অধিকাংশ মটরজান চলছে না। ফলে মটর গাড়ী চালক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, খেটে খাওয়া মানুষ, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত সহ সকল শ্রেণীর মানুষ কর্মহীনতার কারণে তারা পড়েছেন দারুণ অর্থ সংকটে। এই অচলাবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হলে না খেয়ে থাকতে হবে, এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে খলিষখালীর অধিকাংশ মটর চালক, শ্রমিক সহ সকল পেশার মানুষের।
খলিষখালীর কাশীয়াডাংগা গ্রামের মৃত ফটিক মোড়লের ছেলে মাইক্রো ড্রাইভার সাইদুল মোড়ল জানান, ‘অনেক দিন যাবত আমি বাড়িতে আছি। এখনও পর্যন্ত কোন সরকারি সহায়তা পায়নি। করোনায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে নিয়ে যায় মটর গাড়ি চালকেরা, মৃত্যু ব্যক্তির লাশ নিয়ে যায় এই মটর গাড়ি চালকেরা, ডাক্তার, নার্সদের নিয়ে যায় এই মটর গাড়ি চালকেরা , এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে মটর গাড়ি চালকদের অবদান নেই অথচ আমরাই অবহেলিত, আমাদের কথা কেউ বলছে না, কেউ ভাবছে না। কারো কাছে কিছু চাইতেও পারছে না লজ্জায়’।
রাঘবকাটী গ্রামের খেটে খাওয়া এক শ্রমিক সাইদুল ইসলাম জানায়, ‘করোনার ভয়ে এখন সবাই বাড়ি। আমি গাছ কেনা-বেচা কাজ করি। কিন্তু এখন কোনই কাজ নেই। বাড়িতে স্ত্রী, সন্তান আছে। আমার সংসার ঠিক মত চলে না। যা ইনকাম করতাম তাই দিয়ে কোন রকম বাজার চলত। এখন তাও হচ্ছে না। এখনো কোনদিন সরকারি কোন অনুদান আমি পাইনি। আব্বা, মা কেউ বেচে নাই। আব্বা বসত-ভিটা ছাড়া আর কিছুই রেখে যাইনি। সরকার যদি আমাদের কিছু না দেয় তাহলে না খেয়ে মরতে হবে’।
খলিষখালী বাজারের সেলুন ব্যবসায়ী (নাপিত) পংকজ কুমার বারিক জানান, ‘পুলিশ এসে আমার দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। চুল কেটে যা ইনকাম করতাম তাতে ভালই চলত আমার সংসার। এখন ঘরে বসে আছি। বাইরে বের হলে নাকি করোনা ভাইরাসের জন্যে মরতে হবে। আবার ঘরে থাকলে খাবার নাই। সরকার বলছে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। সরকার সব খাবার দিলে আর ঘর থেকে বের হব না।
তিনি কান্না জড়িত স্বরে জাানন, ‘ঘরে যে খাবার ছিল তা সব শেষ। এখন খাব কি জানি না। যারা সরকারি চাকরি করে তারা তো ঘরে বসেই মাস গেলে সরকারি বেতন পাবে। আমরা যারা কর্মহীন ভাবে ঘরে বসে আছি আমরা কি পাবো?
এ বিষয়ে খলিষখালী ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিক মোজাফফর রহমান জানান, ‘আমি ২ বার সরকারি বরাদ্দ পাইছি। প্রথমবার ৩৫০ মে.টন চাল পাইছি। যা ৩৫০ জন হত দরিদ্র পরিবারের মাঝে নিজ উদ্যোগে বাড়িতে বাড়িতে বিতরণ করেছি। গতকাল আরো ৩৫০ মে.টন যে চাল পেয়েছি তা আজ দুপুর থেকে ৪ টি ওয়ার্ডে মোট ১৫০ পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছি। এছাড়া কোন আর্থিক বরাদ্দ আমি পাইনি।
আমার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৬৫ পরিবারকে সহায়তা করছি। সেই সাথে গ্রাম্য ডাক্তারদের ও করোনা ভাইরাস প্রটেকশান সামগ্রী বিতরণ করেছি ব্যক্তিগতভাবে । যে সরকারি বরাদ্দ পাচ্ছি তা দিয়ে আসলে সবার চাহিদা মেটানো সম্ভব না। সরকারি ভাবে যদি আরও একটু বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয় তাহলে কর্মহীন মানুষদের কিছুটা দুঃখ কষ্ট লাঘব হবে। এই যে চাল দিচ্ছি এটা দিয়ে কত দিনই বা চলবে তাদের। কারোর পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনেক। তাদের তো এই চাল দিয়ে ৫-৭ দিন চলবে কি না জানি না’।
8,578,300 total views, 6,070 views today |
|
|
|