কলারোয়া প্রতিনিধি : করোনা মোকাবেলায় ঘরবন্দি মানুষের খাদ্য সহয়তায় দলমত নির্বিশেষে গরিব অসহায়দের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী (ত্রাণ) পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়ার পর তালিকা তৈরীর কাজ শুরু করে। এরপ্রেক্ষিতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা প্রায় ৪২ হাজার মানুষের চাহিদার তালিকার বিপরীতে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে ১১ হাজার ১শ’ ৫৬ জনের।
কলারোয়া পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র, কাউন্সিলর ও ১২টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী ৪১ হাজার ৯শ’ ৫৯ জন গরীব, অসহায় ও দিনমজুর মানুষের তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে পৌরসভায় ৭ হাজার জন, জয়নগর ইউনিয়নে ৩ হাজার জন, জালালাবাদ ইউনিয়নে ৪ হাজার জন, কয়লা ইউনিয়নে ১ হাজার ৫শ’ জন, লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নে ১ হাজার ৫শ’ জন, কেঁড়াগাছি ইউনিয়নে ৩ হাজার ৫শ’ জন, সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে ৩ হাজার ৫শ’ জন, চন্দনপুর ইউনিয়নে ৫ হাজার ২শ’ ৯৯ জন, কেরালকাতা ইউনিয়নে ২ হাজার ৪শ’ ৩৫ জন, হেলাতলা ইউনিয়নে ২ হাজার ৪শ’ ৭৯ জন, কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নে ২ হাজার জন, দেয়াড়া ইউনিয়নে ২ হাজার ৭শ’ ৪৬ জন ও যুগিখালী ইউনিয়নে ৩ হাজার জন’।
ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানরা আরও জানান, ‘তাদের চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক ধাপে আসা খাদ্য সামগ্রী কলারোয়া পৌরসভা ও উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে মোট ১১ হাজার ১শ’ ৫৬ জনের মাঝে মাথাপিছু ১০ কেজি চাল এবং ২ লাখ ৭২ হাজার ২শ’ টাকা রেশিও অনুযায়ী ডাল, তেল ও আলু নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে গরীব ও অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে যা চলমান রয়েছে। তাদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যে যেসব খাদ্য সামগ্রী পৌছেছে তা অত্যন্ত অপ্রতুল। যার কারনে খেটে খাওয়া গৃহবন্দি মানুষসহ নিন্ম মধ্যবিত্তরা দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছে। যদিও কয়েক জনপ্রতিনিধি তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সাবান, মাক্স, তেল, ডাল, আলু, দিয়েছেন বলে তারা জানান।
এদিকে, কলারোয়া পৌরসভায় সরকারের খাদ্য সামগ্রী (ত্রান) বিতরণে অব্যবস্থাপনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পৌর বাসিন্দারা। পৌর বাসিন্দা এমএ কাশেম জানান, ‘আগামী পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে মুখ দেখে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে এমন প্রতিদিনই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় না করায় এক ব্যক্তি একাধিকবার খাদ্য সামগ্রী পাচ্ছেন। আবার অনেকে এখনো পর্যন্ত কোন প্রকার সহায়তা পায়নি। অপরদিকে আগে খাদ্য সামগ্রী পাওয়া অধিকাংশ মানুষই জানান, ‘তাদেরকে ১০ কেজি চাল ও ১ কেজি আলু দেয়া হয়েছে। ডাল, তেল, সাবান বা অন্য কোন কিছুই তারা পায়নি। যদিও এমন অভিযোগ উপজেলার দেয়াড়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নেও। তবে, প্রায় এক মাস গৃহবন্দি থাকা নিন্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি পড়েছে চরম বিপাকে। তারা এমন পরিস্থিতিতে কারো কাছে হাত পাততে পারছেন না। এছাড়া খাদ্য সামগ্রী বঞ্চিত দিনমজুর, অসহায় মানুষেরা এভাবে বঞ্চিত হতে থাকলে তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না বলেও তারা জানান।
এ বিষয়ে কলারোয়া পৌর সভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মনিরুজ্জামান বুলবুল জানান, ‘পৌর এলাকার ৭ হাজার জনের চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৪শ’ জনের চাল এবং নগদ ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও ২০ হাজার টাকার শিশু খাদ্য হাতে পেয়েছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ৬শ’ জনের মাঝে মাথাপিছু ১০ কেজি করে চাল ও উক্ত টাকার রেশিও অনুযায়ী ডাল ও তেল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৮শ’ জনের খাদ্য সামগ্রী ১/২দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে’।
জয়নগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামসুদ্দীন আল মাসুদ বাবু জানান, ‘ইউনিয়নের ৩ হাজার জনের চাহিদার বিপরীতে এ পর্যন্ত ৬শ’ ৬৯ জনের খাদ্য সামগ্রী বাবদ চাল ও নগদ ১০ হাজার টাকা হাতে পেয়েছেন। এর মধ্যে ৫শ’ ৯৯ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৭০ জনের চাল ১/২ দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে’।
জালালাবাদ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, ‘ইউনিয়নের ৪ হাজার জনের চাহিদার বিপরীতে এ পর্যন্ত ৬শ’ ১৮ জনের খাদ্য সামগ্রী বাবদ চাল ও নগদ ১১ হাজার ৫শ’ টাকা হাতে পেয়েছেন। এর মধ্যে ৩শ’ ৪৮ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২শ’ ৭০ জনের চাল ১/২ দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে’।
কয়লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ ইমরান হোসেন জানান, ‘ইউনিয়নের ১ হাজার ৫শ’ জনের চাহিদার বিপরীতে এ পর্যন্ত ২শ’ ৯৮ জনের খাদ্য সামগ্রী বাবদ চাল ও নগদ ১১ হাজার টাকা হাতে পেয়েছেন। এর মধ্যে ১শ’ ৬৫ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৩৩ জনের চাল বিতরণ শুরু করা হয়েছে’।
লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নূরল ইসলাম জানান, ইউনিয়নের ১ হাজার ৫শ’ জনের চাহিদার বিপরীতে এ পর্যন্ত ৪শ’ ২৯ জনের চাল ও নগদ ১৩ হাজার টাকা হাতে পেয়েছেন। এর মধ্যে ২শ’ ১২ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২শ’ ১৭ জনের চাল ১/২ দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে’।
কেঁড়াগাছি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিল জানান, ‘ইউনিয়নের ৩ হাজার ৫শ’ জনের চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৭শ’ ৭৩ জনের খাদ্য সামগ্রী বাবদ চাল ও নগদ ১২ হাজার ৫শ’ টাকা হাতে পেয়েছেন। এর মধ্যে ৫শ’ ৫৩ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২শ’ ২০ জনের চাল ১/২দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে’।
সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জানান, ‘ইউনিয়নের ৩ হাজার ৫শ’ জনের চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৮শ’ ৮২ জনের খাদ্য সামগ্রী বাবদ চাল ও নগদ ২১ হাজার ৫শ’ টাকা হাতে পেয়েছেন। এর মধ্যে ৭শ’ ৩২ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৯০ জনের চাল ১/২দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে’।
চন্দনপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি জানান, ‘ইউনিয়নের ৫ হাজার ২শ’ ৯৯ জনের চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৯শ’ ১২ জনের খাদ্য সামগ্রী বাবদ চাল ও নগদ ৩ হাজার ৫শ’ টাকা হাতে পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪শ’ ৫ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৫শ’ ৭ জনের চাল ১/২ দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে’।
কেরালকাতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ জানান, ‘ইউনিয়নের ২ হাজার ৪শ’ ৩৫ জনের চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৭শ’ ৪৫ জনের চাল ও নগদ ১৪ হাজার ৫শ’ টাকা হাতে পেয়েছেন। এর মধ্যে ৩শ’ ৯৫ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৩শ’ ৫০ জনের চাল ১/২ দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে’।
হেলাতলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ‘ইউনিয়নের ২ হাজার ৪শ’ ৭৯ জনের চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৬শ’ ৭৭ জনের খাদ্য সামগ্রী বাবদ চাল ও নগদ ১০ হাজার ৭শ’ টাকা হাতে পেয়েছেন। এরমধ্যে ৩শ’ ৮৪ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২শ’ ৯৩ জনের চাল ১/২ দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে’।
কুশোডাঙ্গা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আসলাম হোসেন জানান, ‘ইউনিয়নের ২ হাজার জনের চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৫শ’ ৩৪ জনের খাদ্য সামগ্রী বাবদ চাল ও নগদ ১২ হাজার টাকা হাতে পেয়েছেন। এর মধ্যে ৩শ’ ৮০ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১শ’ ৫৪ জনের চাল ১/২ দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে’।
দেয়াড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জানান, ‘ইউনিয়নের ২ হাজার ৭শ’ ৪৬ জনের চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৫শ’ ২২ জনের খাদ্য সামগ্রী বাবদ চাল ও নগদ ১২ হাজার ৫শ’ টাকা হাতে পেয়েছেন। এর মধ্যে ২শ’ ৯২ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২শ’ ৩০ জনের চাল ১/২ দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে’।
যুগিখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রবিউল হাসান জানান, ‘ইউনিয়নের ৩ হাজার জনের চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৬শ’ ৯৭ জনের খাদ্য সামগ্রী বাবদ চাল ও নগদ ১১ হাজার ৫শ’ টাকা হাতে পেয়েছেন। এর মধ্যে ৫শ’ ৫ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১শ’ ৯২ জনের চাল ১/২ দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে’।
এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরএম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, ‘উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তুতকৃত তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এরইমধ্যে উক্ত চাহিদা পত্রের বিপরীতে কয়েক দফায় যে পরিমান চাল এসেছে তা কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নিয়ম মাফিক বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া চাহিদার অবশিষ্ট চাল পর্যায়ক্রমে প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।