Site icon suprovatsatkhira.com

করোনায় জেলার সব সেলুন বন্ধ: নাপিতরা চরম বিপাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রামের সাপ্তাহিক হাটবারে বটতলায় ইটের পর ইট সাজিয়ে চৌকিতে বসে চুল কাটত এক শ্রেণির বয়স্ক মানুষ। গ্রম্যভাষায় তাদেরকে আমরা নাপিত বলেই জানি। ওরা নিখুঁত নিপুণ হাতে হাটে যাওয়া মানুষের ভদ্র মানুষের প্রলেপ এঁটে দেয়। এখনও কিছু কিছু হাট বাজারে চৌকি বসিয়ে চুল দাড়ি কাটা, ক্ষৌরকর্মে দাড়ি কামিয়ে দেয়।
ধীরে ধীরে নগর উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় এসব নাপিত বা নরসুন্দরদের কাজের ধরন। এখন হয়েছে সেলুন। এই সেলুনে যারা কাজ করে তারা নরসুন্দর। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সাতক্ষীরার নরসুন্দরদের দুর্দিন শুরু হয়েছে। দীর্ঘ দিনের জন্য সরকারি-বেসরকারি অফিস ছুটির সঙ্গে মানুষের বাইরে বেরোনো নিষেধাজ্ঞা চলছে। ফলে বন্ধ রাখা হয়েছে দোকানপাট। তাই সেলুনও বন্ধ আছে।
গ্রামের হাট বাজারে বা রা¯ত্মার মোড়ে এসব সেলুনের দোকান। শহরে কয়েকটি নামকরা সেলুনও আছে। এসির সুযোগ-সুবিধাও করা হয়েছে জেলার কয়েকটি সেলুনে।
সেলুন মালিক মুকন্দ বিশ্বাস জানান, সরকার সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকে তার সেলুনটি বন্ধ রয়েছে। দীন বন্ধু মজুমদার চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছিলো। সে জানায়, পুলিশ এসে সেলুন বন্ধ করে দিয়েছে। দোকানে থাকা অভ্যাস তাই বাড়ি না যেয়ে কাস্টমারের বসার আসনেই বসে সে ঘুমিয়ে নিচ্ছে। তিনি জানায়, সেলুনে চুল-দাড়ি কাটানোতে নাকি ঝুঁকি বেশি। এ কারণেই সেলুনে কয়েক দিন আগ থেকেই লোকজন আসা কমে যায়। এখন পুরোপুরি বন্ধ।
পুরাতন সাতক্ষীরায় একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে সেলুন করেছেন পরেশ নাথ। সে আশাশুনি থেকে কয়েক বছর শহরে এসে সেলুনের দোকান করে। তাঁর সেলুনও বন্ধ। সে জানায়, করোনাভাইরাসের কথা শোনার পর থেকেই মানুষজন সেলুনে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। সেলুন থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে এ ভয়েই এমন সিদ্ধান্ত। পরেশ বলেন, রোজ যে আয় হতো তা দিয়ে নিজের সংসার চলত। সমিতির কি¯িত্মর টাকাও দেয়া হতো দেকানের আয় থেকে। তাঁর সেলুনে আরো চারজন কারিগর কাজ করে। তাদের সংসারও চালাতে হয়। কিন্তু বন্ধ থাকায় এখন খুব বিপদে পড়তে হচ্ছে। সেলুন ভাড়া মাস শেষে দিতেই হবে। জিনিসপত্রের দাম বেশি। কীভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে চিন্তিত পরেশ মন্ডল। কারিগররাও বাড়িতে চলে গেছে বলে তিনি জানান।
কদমতলার অসীম গুপ্ত জানায়, সেলুনের জন্য ‘দোকান ভাড়া দিতে হয় মাসে ছয় হাজার টাকা। আর বাসা ভাড়া তিন হাজার টাকা। সারা মাস কাজ করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে এসব মেটাতে হয়। এরপর পরিবারের খরচ মিটিয়ে এমনিতেই তেমন কিছু থাকত না। এখন দোকান বন্ধ। কী করে দোকান ভাড়া দেব? কী করেই বা দেব বাসা ভাড়া? সেই চিন্তায় ঘুম আসে না। সে আরো জানায়, কারিগররা দিনে কাজ করে দিনের খাবার জোগাড় করে। পরিবারকে দেয়। তারাও খুব বিপদে আছে। সেলুন মালিকরা কোনোমতে সংসার চালাতে পারলেও কারিগরদের আর কোনো উপায় নেই। মহা বিপদ তাদের সামনে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে সবাইকে। কিন্তু এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে সেলুনে চুল-দাড়ি কাটার ব্যবস্থা করাত সম্ভব নয়। আবার একই কাঁচি দিয়ে চুল কাটতে হয়। সেটাও ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। এ কারণেই কেউ যাচ্ছে না সেলুনে।
সুলতানপুর বড় বাজারের গলির মধ্যে একটি সেলুনে কাজ করেন বয়োবৃদ্ধ নিমাই চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন কাজ করি। প্রতিদিন বাজার করি। প্রতিদিন খাই। সংসারে রোগাক্রান্ত স্ত্রী আছে, আছে আরো দুই সন্তান ও নাতি পুতি। কোনোমতে সংসার চলে। এখন কাজ বন্ধ। উপার্জন নেই। কষ্টে আছি। বাসায় বাজার নেই। হাতে যে টাকা ছিল। সেখান থেকে খরচ করা শুরু করেছি। কয়টা দিন আর চলতে পারে। তারপর কী করব। জানি না। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version