খলিষখালী (পাটকেলঘাটা) প্রতিতিনিধি : করোনা ভাইরাসের প্রভাবে তালা উপজেলার খলিষখালী ইউনিয়নে ইতোমধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি অনুদান ইউনিয়নের জনসংখ্যার বিপরীতে পর্যাপ্ত না হওয়ায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে অনাহারে দিন কাটছে বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের। কথা হয় ইউনিয়নের কাশিয়াডাঙ্গা বাজারের চায়ের দোকানদার মো. একরামুল ইসলামের সাথে।
তিনি বলেন, ‘৫ বছর আগে দূরারোগ্য ব্যধিতে আমার ডান পা হারাতে হয়। বর্তমানে একটি পা দিয়ে লাঠি ভর করে কাশিয়াডাঙ্গা বাজারে চা বেচেই বিধবা মা, স্ত্রী ও ১২ মাসের দুধের শিশুকে নিয়ে খুব কষ্টে সংসার চালাই। একদিন চায়ের দোকান না খুললে আমার বাড়িতে চুলা জ্বলে না। আর এই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জন্য গত ২৬ তারিখ থেকে দোকানপাট সব বন্ধ। এর মধ্যে এই ১৯ দিনে চেয়ারম্যানের থেকে পাওয়া ১০ কেজি চাল আর নিজের কাছে যা কিছু ছিল তাই দিয়ে কোন রকম দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে আসছি। এখন ঘরে নেই রান্না করার মত চাউল নেই পকেটে টাকা।
মা, স্ত্রী সন্তান নিয়ে কি করবো বুঝতে পারছি না’। তিনি আরও জানান, ‘সবাই বলছে ঘরে থাকুন, খাবার আপনার বাড়ি পৌঁছে যাবে’ কিন্তু আমার খাবার কবে আসবে? ১০ কেজি চাউল দিয়ে কয়দিন চলতে পারে। তাতে ছোট্ট একটা দুধের শিশু। আমার সম্পদ বলতে পৈত্রিক ভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে অনেকবার ধন্না দিলেও এ পর্যন্ত প্রতিবন্ধী কার্ডটিও মেলেনি আমার ভাগ্যে। এমনকি আমার বাবা মারা গেছে প্রায় ২৫ বছর। এর মধ্যে আমার বয়স্কা মা একটা বয়স্ক ভাতা কার্ডও পায়নি’।
প্রতিবন্ধি একরামুল আক্ষেপ করে আরও জানান, ‘মেম্বারের কাছে গেলে মেম্বার বলে চেয়ারম্যানের কাছে যেতে আর চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি বলেন মেম্বারের কাছে সব দিয়েছি। কিছুদিন আগে তালা উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুর্শিদা পারভিন পাপড়ি আফার সাথে কথা বললে উনি আমাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেনের সাথে দেখা করিয়ে দেবে বলে যেতে বলে। তাই আমি গত পরশু তালা উপজেলা পরিষদে নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অনেক আশা নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানেও বঞ্চিত। নির্বাহী অফিসার সাধারণ জনগনের সাথে কথা বলবে না বলে জানিয়ে দেয়’।
তিনি আবেগাআপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি আর কোথাও যাব না। কারোর কাছে কিছু চাইবো না, দরকার হয় না খেয়ে মরবো’।
এ বিষয়ে খলিষখালী ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিক মোজাফফর রহমান জানান, ‘আমি খবর পেয়েই তাকে সংবাদ দিয়ে ১০ কেজি চাউল দিছি। তাছাড়া খলিষখালী ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার লোকের খাদ্য সংকট। সরকারি অনুদান যা পেয়েছি ৩শ’ ৫০ টি পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছি। এত লোকের খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলা কঠিন।
এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে ১শ’ ৬৫ টি পরিবারকে সহায়তা করেছি। এই করোনা পরিস্থিতি যদি ভালোর দিকে যাই পরবর্তীতে তাকে অবশ্যই পঙ্গু ভাতার কার্ড করে দেয়া হবে। সে কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলো আমি জানি। কিন্তু এটা বছরে একবার অনুমোদন হয় উপজেলা থেকে। পরবর্তীতে অনুমোদন আসলে তাকে অবশ্যই কার্ড দেয়া হবে।
তাছাড়া পরবর্তীতে করোনা ভাইরাসের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সহায়তা আসলে তাকে আবারও সহায়তা করা হবে’। তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে কেউ সহায়তা চাইলে আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করি। কাউকে সহজে ফেরাই না’।