তালা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলা সদরের জেয়ালায় প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার লিটার দুধ বিক্রি করতে না পারায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে খামারীরা অবিক্রিত ওই দুধ ফেলে দিচ্ছেন খালে। উপজেলার মধ্যে তিনটি গ্রামে (জেয়ালা, আটারই ও জেয়ালা নলতা) প্রায় ১২ হাজারের বেশি দুগ্ধ গাভি রয়েছে। যা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। জেলার ওই এলাকাটি ইতোমধ্যে সারা বাংলাদেশে দুগ্ধ পল্লী হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছে।
উৎপাদিত দুধের বেশির ভাগই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন ওইসব খামারীরা। তবে করোনা ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট আন্তঃজেলা যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ওই এলাকার দুগ্ধ খামারে উৎপাদিত দৈনিক প্রায় ৫০ হাজার লিটার দুধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক দুগ্ধ খামারী।
দুগ্ধ খামারীরা জানায়, ‘উৎপাদিত দুধের মধ্যে আকিজ গ্রুপ দৈনিক ৬শ’ লিটার দুধ সংগ্রহ করে এবং মিল্ক-ভিটা দৈনিক ৮ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করে। অবশিষ্ট দুধ তারা সাতক্ষীরা খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী সকল জেলার মিষ্টান্ন ভান্ডার, হোটেল ও অন্যান্য বেসরকারি ফার্মে সরবরাহ করেন।
তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশের অন্যান্য জেলা লক-ডাউন হওয়ায় এবং সাতক্ষীরা জেলার সাথে অন্যান্য জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উৎপাদিত দুধ কোথাও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি জেলার সকল মিষ্টান্ন ভান্ডার ও হোটেল বন্ধ থাকায় ওইসব গ্রাহকরা দুধ কিনছে না। ফলে সব উৎপাদিত দুধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে’। তারা আরও জানান, এলাকায় অল্প কিছু দুধ বিক্রি হচ্ছে তবে সেগুলো ৫-১০ টাকা কেজি দরে।
এ বিষয়ে জেয়ালা দুগ্ধ পল্লী সমিতির সভাপতি দিবস চন্দ্র ঘোষ জানান, ‘করোনার কারণে সব কিছু বন্ধ থাকায় প্রতিদিন প্রায় ৪৫-৫০ হাজার হাজার লিটার দুধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিছু খামারী ১০ টাকা কেজি দরে অল্প পরিমাণে দুধ বিক্রি করছে। বাকি সবাই দুধ ফেলে দিচ্ছে খালে।
তিনি আরও জানান, ‘যদি এভাবে আর কয়েকদিন চলতে থাকে তবে সকল গাভি খাদ্যের অভাবে মারা যাবে। খামারীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে ও তারা সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসবে। তাছাড়া দুধ বিক্রি না হলে গাভির খাবার কিনবে কীভাবে। এমতাবস্থায় সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তবে দেশের অর্থনৈতিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার পাশাপাশি খামারীরা না খেয়ে মরবে। এজন্য খামারীদের পক্ষ থেকে সরকারি আর্থিক সহায়তার আবেদন জানাচ্ছি’।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল জানান, ‘গাভির দুধের জন্য সারা দেশে সাতক্ষীরার একটি আলাদা সুনাম রয়েছে। কয়েকবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন এই দুগ্ধ পল্লীর খামারীরা। শিশু খাদ্যের জন্য এ জেলায় যে বরাদ্দ দিয়েছেন, এই বরাদ্দের মাধ্যমে এই দুধ ক্রয়ের একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। এছাড়া মিল্ক ভিটার মাধ্যমে এই দুধ সংগ্রহ করা হবে।
তিনি আরও জানান, মিল্ক ভিটার চেয়ারম্যানকে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে শিশু খাদ্যের জন্য যে দুধ প্রয়োজন তা যেন সাতক্ষীরা জেলা থেকে নেয়া হয়। এছাড়া এ বিষয়টি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথেও আমরা ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছি’।