এপ্রিল ১৩, ২০২০
করোনা সচেতনতায় উপকূলে ত্রাণ হিসেবে সুপেয় পানি!
গাজী আল ইমরান : বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাস নামটি বিশ্বের সকল জাতি ধর্ম পেশার মানুষের কাছে একটি অতি পরিচিত আতঙ্কিত নাম। বিশ্বের বহু নেতারা সকালের চায়ের কাপে আলোচনায় নিজের দেশকে রক্ষা করতে বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার ঝড় তুলে থাকেন।কিন্তু করোনা ভাইরাস থেকে মানুষ কে বাচাতে সেই বিশ্ব নেতারা আজ নিরুপায়। যারা একটি দেশকে বাচাতে নানা রকম পদক্ষেপ নিতে চায়ের কাপে ঝড় তুলে থাকেন, ঠিক তারাই আজ একটি মাত্র মানুষকে বাচাতে নিরুপায়। অর্থাৎ করোনা নামক ভাইরাসের কাছে পুরো পৃথিবী এখন নিস্তব্ধ। সারা বিশ্ব যেন একেবারেই থমকে গেছে। আর এই ভাইরাস থেকে বাচতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় সুপেয় পানি ও সাবান দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর হাত ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে, অথচ এই উপকূলের মানুষের কাছে সুপেয় পানি মানে করোনার চেয়ে এক মহা আতংকের নাম। দূর গ্রাম থেকে এক কলস পানি আনতে একজন ব্যক্তির সময় লাগে ৩/৪ ঘন্টা, যে পানি তিন থেকে চার জনের সংসারে ২ দিন চালাতে হয়। অথচ তাদের কাছে সুপেয় পানি দিয়ে হাত ধোয়ার কথা বলা রুপ কথার গল্পের মতো শোনায়। যেখানে বেচে থাকার তাগিদে প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমান পানি খেয়ে তাদের দিন চলে, পানি কম খাওয়ার কারনে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গ্রামের নারী পুরুষ, শিশু বৃদ্ধ, সেখানে নতুন করে করোনা ভাইরাসের কারনে এই সুপেয় পানি দিয়ে হাত ধোয়া গল্পটা যেন তারা কোনো মতেই শুনতে চাচ্ছেন না। একজন নারী দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এক গ্রাম পেরিয়ে অন্য গ্রামে গিয়ে পানি সংগ্রহ করে থাকে। অথচ করোনার কারনে বর্তমানে বাড়ির বাহিরে যেতে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা, সেখানে বেচে থাকতে সুপেয় পানি পাওয়াটাও কষ্টের। সরকারি বেসরকারিভাবে বর্তমান সময়ে জীবানু মুক্ত রাখতে দেওয়া হচ্ছে সাবান সহ নানা ধরনের জীবানু নাশক সামগ্রী। কিন্তু এই সামগ্রী ব্যবহারের জন্য যে জিনিসটি মৌলিক প্রয়োজন সেটি হলো পানি, আর এই পানিই আজ দুস্প্রাপ্য। মানুষকে সুরক্ষা রাখতে সরকারি বেসরকারিভাবে এখনই দরকার ত্রানের পাশাপাশি সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। উপজেলার ঈশ্বরীপুর, কৈখালী, নূরনগর, মুন্সিগঞ্জ, পদ্মপুকুর গাবুরা সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে চলতি সময়ে দেখা দিয়েছে অতি মাত্রায় পানি সংকট। ফাল্গুন শেষ হয়ে চৈত্রের শুরু থেকেই পুকুরে পানি শূন্যতা দেখা দিলেই উপকূলের মানুষের মাঝে দেখা দেয় পানির জন্য হাহাকার।ঠিক এবার একই সময়ে মানুষের মাঝে উপস্থিত হয়েছে মহামারী করোনা। বর্তমান সময়ে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যেম প্রতিটি ইউনিয়নে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সুপেয় পানির ভ্রাম্যমাণ প্লান্ট স্থাপন সহ নানা ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করা যেতে পারে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় দুর্যোগ কালীন সময়ে যেভাবে মানুষের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ ব্যবস্থাপনায় পানি সরবরাহ করা হয় ঠিক একই ভাবে এখনই পানি পৌছানো প্রয়োজন বলে মনে করেন এলাকাবাসী। বর্তমানে উপকূলবাসী অতীতের বিভিন্ন বড় বড় দুর্যোগের চেয়েও অনেক বেশী ঝুঁকিপূর্ণ দুর্যোগের মধ্য রয়েছেন বলে মনে করেন এই এলাকার সুশীল সমাজের মানুষ। এমতাবস্থায় খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি মানুষের বেচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজন যেটা সেটা হলো পানি, সুতরাং বর্তমান প্রেক্ষাপটে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা অতি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন এলাকাবাসী। লেখক : গাজী আল ইমরান, সভাপতি, শ্যামনগর উপজেলা রিপোর্টার্স ক্লাব। 8,412,737 total views, 890 views today |
|
|
|