তালা প্রতিনিধি : করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে তালার বে-সরকারি সংস্থা উত্তরণ। দাতা সংস্থা স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশ ও ইউকেএইড, মিজেরিয়র জার্মানী, বোথ-এন্ডস নেদারল্যান্ডস ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর সহযোগিতায় এবং নিজস্ব তহবিল দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জরুরী পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা উপকরণ, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদানসহ সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
উত্তরণ জরুরীভাবে “স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশ ও ইউকেএইড” এর পক্ষ থেকে এ দুর্যোগ মোকাবেলায় ৪৫ দিনের জন্য জরুরী সহায়তা গ্রহণ করে। যার মেয়াদকাল ৩ এপ্রিল থেকে ১৭মে পর্যন্ত। উত্তরণ উক্ত ফান্ডের সহায়তায় যশোর ও সাতক্ষীরা জেলায় ১৪০০ দরিদ্র পরিবারের মধ্যে হাইজিন কিট প্যাকেজ (গোসলের সাবান ১০ টি করে , কাপড় ধোয়া সাবান ৫ টি , স্যানিটারী প্যাড ২ প্যাকেট করে, ট্যাপযুক্ত বালতি ১ টি করে, সর্জিকাল মাস্ক ৫০ টি করে, মগ ১ টি করে , ২ পৃষ্ঠার করোনা প্রতিরোধের নীতিমালা
১টি করে, মাস্ক ৫২০ প্যাকেট), সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ২ লাখ কপি, সচেতনতামূলক মাইকিং ২০দিন, সচেতনতামূলক প্যানা ৩১০টি, হাত ধোয়ার স্থান ১০টি, হোম কোয়ারেন্টাইন গাইডলাইন ৫ হাজার ৫শ’ কপি, রাস্তা ও জনসমাগম স্থান জীবানুমুক্ত করণ এক হাজার স্থানে, সচেতনতামুলক সামাজিক দুরত্ব বৃত্ত ২০ স্থানে, বিøচিং পাউডার ১হাজার কেজি কেজিসহ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ হতদরিদ্র জনগণ, ভলেন্টিয়ার, হাসপাতাল, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদেরকে প্রদান করার মাধ্যমে নিরাপদ রাখার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উত্তরণ এর প্রকল্প সমন্বয়কারী জাহিন শামস্ স্বাক্ষর বলেন, কোভিড-১৯ এর ব্যাপক আকারে বিস্তৃতি রোধে সরকারের সাথে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। ১৫ জন স্টাফ এবং ৩ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সকলকে বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে রাখার জন্য গত ১৫ মার্চ থেকে অদ্যাবধি বিরতিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে তারা।
একই সাথে স্থানীয় ও জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য উত্তরণ অক্সিজেন, নেবুলাইজার, পিপিই, মাস্ক ও বিভিন্ন চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে যাচ্ছে যাতে হাসপাতালগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদান করতে পারে।
জরুরী ভিত্তিতে উত্তরণ প্রথম পর্যায়ে গত ১৫ মার্চ তারিখ থেকে তালা সদর হাসপাতালকে করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রথম কার্যক্রম শুরু করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে গত ২৩ মার্চ থেকে করোনা প্রতিরোধ ও মোকাবেলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে উত্তরণ নিজস্ব তহবিল হতে সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর জেলার গ্রামগুলোকে জীবানুমুক্ত করাসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করে যা চলমান রয়েছে।
উত্তরণ বিøচিং পাউডার, এন-৯৫ মাস্ক, পিপিই, সার্জিক্যাল ক্যাপ,সার্জিক্যাল মাস্ক, গøাভস, কাপড়ের ক্যাপ, স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াশ বোতল, স্যাভলন সাবান, হেক্সাসল, টিস্যু বক্স, সানগøাস, প্যানা, স্প্রে মেশিন, পলিথিন পিপি, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ সমূহ হতদরিদ্র, ভলান্টিয়ার, হাসপাতাল, প্রশাসন, সেবা কর্মী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের মধ্যে সরবরাহ করে জনসচেতনতায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে ।
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় উত্তরণ দাতা সংস্থা বোথ-এন্ডস, নেদারল্যান্ডস এর জরুরী অর্থায়নে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ৩৮টি অক্সিজেন সিলিল্ডার, ৩৮টি ফ্লোমিটার ও ৩৮টি নেবুলাইজার প্রদান করে সাধারণ মানুষের জন্য করোনা চিকিৎসা সেবায় হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে এবং তা সফল হয়েছে।
এছাড়া উত্তরণ দাতা সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর জরুরী অর্থায়নে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি, দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলায় হতদরিদ্র ১ হাজার পরিবারের মধ্যে সাবান, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রদান করা হয়। তাছাড়া ভলেন্টিয়ারদের নিরাপত্তা জনিত ৪০টি পিপিই ও ৪০টি গøাভস ও ৪০টি মাস্ক সরবারহ করা হয়।
উত্তরণ পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, সরকার ও দাতা সংস্থার সাথে যুক্ত থেকে প্রাণঘাতী করোনা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবে উত্তরণ।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, সরকারের পাশাপাশি উত্তরণ করোনা সংক্রমণ মেকাবেলায় শুরু থেকে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। তারা জনসচেতনতার জন্য মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, প্যানাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকরণ সরবরাহ করছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সিলিল্ডার, ফ্লোমিটার ও নেবুলাইজার প্রদান করেছে উত্তরণ। এছাড়া দরিদ্র পরিবারের মধ্যে হাইজিন কিট প্যাকেজ বিতরণ করে সংস্থাটি।
সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, অত্র অঞ্চলে যে কোন দুর্যোগে এগিয়ে আসে উত্তরণ। সরকারের পাশাপশি সংস্থাটি করোনা ভাইরাস মোবাবেলায় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিল্ডার, ফ্লোমিটার,সার্জিক্যাল মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ করেছে। এছাড়া জনসচেতনতায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে সংস্থার কর্মীরা।