Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরায় বিদেশ ফেরত ১১১ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় করোনা ভাইরাস সংক্রামন প্রতিরোধে বিদেশ ফেরত ১শ’ ১১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। গত তিন দিনে বিদেশ থেকে ফিরে আসা এসব ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা নিয়ে আজকের তথ্য আগামীকাল আর ঠিক থাকছে না। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া মানুষের সংখ্যা। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে জেলা প্রশাসন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দফায় দফায় জরুরি সভা করছেন। জেলার সবকয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সভা করে সতর্ক করা হচ্ছে গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত।

এদিকে হোম কোয়ারেন্টাইন অমান্য করায় গতকাল দুই ব্যক্তিকে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জানা গেছে,সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামের ইটালি ফেরত প্রবাসী, মো: মাহিদুর রহমান হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে বাইরে ঘুরাঘুরি করায় মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, এস এম মোস্তফা কামালের নির্দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন, বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো: জুবায়ের হোসেন। দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর আলোকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ঐ প্রবাসীকে ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

একই সাথে এবং তাকে ১৪ দিন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সেইসাথে এলাকাবাসীকে ও সতর্ক করা হয় যেন কোন প্রবাসী বা বিদেশি আসলে তার হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত হয়। অপরদিকে, শ্যামনগরের কুয়েত প্রবাসী রনজু ইসলামকে একই অপরাধে ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও ১৪ দিন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। হোম কোয়ারেন্টাইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রোগতত্ব বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডা: জয়ন্ত কুমার জানান, গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ১১১ জনকে হোমে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১৯ জন, আশাশুনিতে ১৬ জন, দেবহাটায় ২৫ জন, কালিগঞ্জে ৩৬ জন, শ্যামনগরে ২৬ জন ও তালায় ১১ জন।

হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা সবাই বিদেশ ফেরত। যদি কারোর করোনা ধরা পড়ে তবে তাদের জন্য জেলায় ইতিমধ্যে ৩৫ টি বেড রেডি করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয়ে করোনা আক্রন্তদের রাখার জন্য জন্যও বেড রেডি করার কাজ চলছে। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা.হুসাইন সাফায়াত জানান, বিদেশ ফেরত এসব ব্যক্তিদের বিশেষ নজরদারীতে রাখা হয়েছে। তারা যেন ঘরের বাইরে ঘোরাফেরা না করে সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের উপর স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ ও গ্রাম পুলিশকে নজরদারিতে রাখতে বলা হয়েছে।

কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে তাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তবে, সাতক্ষীরায় এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন কোন রোগী পাওয়া যায়নি। এদিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সুন্দরবনসহ সাতক্ষীরার সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশে জেলার সকল পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া পর্যটকদের পর্যটন কেন্দ্রে না যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, ‘করোনা সচেতনতায় লোকসমাগম এড়াতে জেলার সরকারি বেসরকারি সকল দর্শনীয় স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জনসাধারণকে পর্যটন এলাকায় না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে শহরের মোজাফ্ফার গার্ডেন, শ্যামনগর আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার, সুন্দরবনের কলাগাছিয়া পর্যটন কেন্দ্র, দেবহাটার রুপসী ম্যানগ্রোভ, আশাশুনির কেওড়া পার্কসহ সকল দর্শনীয় স্থান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে’।

অপরদিকে বন বিভাগের পক্ষ থেকেও সুন্দরবনের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন জানান, পশ্চিম সুন্দরবনের সকল পর্যটন স্পট আজ থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা সুন্দরবনের প্রবেশের জন্য নতুন করে কোন পাশ দিচ্ছি না। পর্যটকবাহী ইঞ্জিন চালিত ট্রলার চালকদেরও বিষয়টি জানিয়ে দেয়ে হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version