রাকিবুল ইসলাম: বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। ইতোমধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ১১ জন ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। ভারতের দিল্লী, কেরালা, তেলেঙ্গানাসহ বিভিন্ন প্রদেশে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সে কারণে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো নিরাপদ বলা কঠিন। ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বহু দেশকে সতর্ক করা হয়েছে। সম্প্রতি আমেরিকার একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে করোনা ভাইরাসের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও দেশের সব বন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী পাসপোর্ট যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। পাসপোর্ট যাত্রীদের পাশাপাশি বন্দর দিয়ে আমদানি করা সকল প্রকার ফল, মাছসহ সকল কাঁচামাল সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেয়ার কথা। কিন্তু সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরে এসব পণ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ছাড়পত্র দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব পণ্য পরীক্ষার জন্য নেই কোন ল্যাব তারপরও সংশ্লিষ্ট বিভাগ নামমাত্র পরীক্ষা করে টাকা আর ফলের বিনিময়ে আমদানিকারকদের ছাড়পত্র দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সঠিক পরীক্ষা ছাড়া এসব পণ্য দেশে প্রবেশ করলে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি করা ফল ও মাছের মাধ্যমেও ভাইরাস আসতে পারে। কিন্তু ভোমরা বন্দরে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করার কোন ব্যবস্থা স্থল বন্দর স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে না থাকায় তারা আতঙ্কগ্রস্ত। এসব বিষয়ে কথা বলতে বলতে ভোমরা স্থল বন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগ ও উদ্ভিদ কোয়ারেন্টাইন বিভাগের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন অনেক ব্যবসায়ী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোমরা বন্দরের কয়েকজন সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা জানায়, ‘ভোমরা বন্দরে নিয়োজিত স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করছেন না। আমরা ব্যবসার স্বার্থে মুখ খুলতে পারি না। কিন্তু বর্তমান সময়ে মুখ খোলাটা জরুরী। কেননা ভারতীয় যে সকল ফল বা মাছ আসে সেটা আমাদের পরিবারেও আমরা ব্যবহার করি। এসব পণ্য বন্দরে যথাযথ নিয়মে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না। যেটা পরীক্ষা না করেই আমাদের দেশে প্রবেশ করছে। এই পণ্য থেকে আমি অথবা আমার পরিবারের সদস্যদেরও মারাত্মক ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া পচনশীল পণ্যে ফরমালিন ব্যবহার করেন অনেকেই। আর এসব পণ্যের ফরমালিন পরীক্ষা করার জন্য স্থলবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগ আছে। কিন্তু কাজের সময় দেখা যায় ফলের গাড়ি আসলে স্বাস্থ্য বিভাগের অফিসে আমরা গাড়ি প্রতি কিছু ফল দিয়ে আসি পরীক্ষা করার জন্য। তারপর স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন ওই ফল পরীক্ষা করে কিনা জানি না। কেননা আমরা কোনদিন পরীক্ষা করতে দেখিনি। এরপর আমাদের গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুমতি পত্র দিলে আমরা বন্দর থেকে গাড়ি ছাড়ি। এছাড়া মাঝে মাঝে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন এসেও গাড়ি থেকে ফল নিয়ে যায় পরীক্ষা করতে। তবে এখানে ফরমালিন পরীক্ষা করার ল্যাব নাই’। ভোমরা বন্দরে উদ্ভিদ কোয়ারেন্টাইন বিভাগ আছে যারা ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যে পোকা মাকড় আছে কিনা পরীক্ষা করেন। তবে কর্তৃপক্ষ মাঠে না গিয়ে অফিসে বসেই খাতা কলমে পোকামাকড় পরীক্ষা করেন বলে জানায় একাধিক ব্যবসায়ী।
এ বিষয়ে ভোমরা স্থলবন্দরের সহকারী স্যানিটারি ইনস্পেকটর মিজানুর রহমান দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে শুধু মাত্র ফরমালিন আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। এর বাইরে অন্য কিছু পরীক্ষা করার অনুমতি ও সরঞ্জাম না থাকায় আমরা অন্য কোন জীবাণু বা ভাইরাস পরীক্ষা করতে পারি না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের নির্দেশনা পেলে আমরা পরীক্ষা শুরু করব।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মসিউর রহমান দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে জানান, ভোমরা বন্দরে মৎস্য বিভাগের কোন ল্যাব নেই। জনবল সংকট থাকায় বন্ধরে একজন ল্যাব সহকারী মাছের নমুনা সংগ্রহ করেন। কোন মাছ নিয়ে সন্দেহ হলে খুলনায় মৎস্য বিভাগের ল্যাবে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়। ভারত থেকে কিছু সামুদ্রিক মাছ আমদানি হয়। এসব মাছের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই।
এ বিষয়ে ভোমরা স্থল বন্দরে অবস্থিত কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রে যোগাযোগ করা হলে কোন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের ছাড়পত্র ছাড়া আমদানিকৃত কোন ফলের গাড়ি ছাড় হয় না। বর্তমানে আমরা অনুমানের ভিত্তিতে ফল পরীক্ষা করি। আমাদের এখানে আধুনিক ল্যাব না থাকায় কোন ফল নিয়ে সন্দেহ হলে তা ঢাকাতে প্রেরণ করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এই বন্দরে আমদানি করা কোন ফলে বিষাক্ত কিছু পাওয়া যাইনি বলে তিনি জানান।