রিয়াদ হোসেন,খেশরা (তালা) প্রতিনিধিঃ এলাকায় জর্জ বলে পরিচিত এই ব্যক্তিটি।
তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম মো. রহমত আলী। করোনাকে উপেক্ষা করে পেটের জ্বালায় সংসার চালাতে এই ভাঙ্গা ভ্যান নিয়ে রাস্তায় চলতে দেখা গেছে তাকে। শনিবার বিকালে খেশরার ফারুক মার্কেটের কাছাকাছি দেখা হয় তার সাথে।
বলছিলাম তালার খেশরার শাহাজাতপুর পূবালী পাড়ার বাসিন্দা মো. রহমত আলীর কথা।
জন্ম ১৯৬৭ সালে পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলীতে।জন্মের কিছুদিন পর পিতা সিরাজ সরদার মারা গেলে চলে আসেন মামার বাড়িতে। সেই থেকেই জীবিকা নির্বাহ করতেন এই এলাকায় কখনও পরের জমিতে কাজ করে,কখনও ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতে দেখা গেছে তাকে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথেই বিভিন্ন রোগ এসে বাসা বাধে রহমত আলীর শরীরে। ধীরে ধীরে ভ্যান চালানোর শক্তি হারিয়ে ফেললেও সংসার চালানোর তাগিদে বাধ্য হয়ে রাস্তায় যেতে হয় তাকে। পুরাতন একটি ভ্যান চিত্রে দেখলেই বোঝা যায় তার ভ্যানের নির্মম ইতিহাস। করোনার এই সংকটপূর্ণ সময়ে বেচেঁ থাকার কথা চিন্তা না করে, দুমুঠু ভাতের তাগিদে সংসারে ছেলে,মেয়ে,বৌ এবং মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রতিদিন এই ভাঙ্গা ভ্যান নিয়ে রাস্তায় বের হয় সে। তবে যাত্রী একজন বা দুজনের বেশি নেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ভার নিতে পারে না তার ভ্যানটি। যাত্রীরা সচারচার উঠতে চায় না তার ভ্যানে।ভেঙ্গে পড়ার ভয়তে।বেশিরভাগ সময় ছোট খাটো মাল বহন করে সে এই ভ্যানে। করোনার কারনে রাস্তায় উঠে মাল বা যাত্রী কোনটাই পাচ্ছে না সে। বর্তমানে তার সংসার মায়ের বয়স্ক ভাতা ও বৌয়ের হাঁস মুরগি পালনের টাকা দিয়েই চালাতে হচ্ছে সংসার।
মায়ের বাবার বাড়ির ৯ শতক জমির উপর বসবাস করে এই রহমত আলী। বাড়তি এমন কোন জমি জায়গা নেই যে জমিতে তার সংসার চলবে। তবে হ্যাঁ আছে ২ বিঘা খাস জমি নিজের নামে বন্দেবস্ত করা। তবে সেটাও দখলে নেই তার। একই এলাকার বাসিন্দা ফেলু (ডাকনাম) তার জমি হারি নিলেও দেয়নি সে হারির টাকা। কত বৈশাখ চলে যায় তবুও হারির টাকা দেওয়ার বৈশাখ আর আসে না এই ফেলুর।
করোনার এই অবস্থায় কোনমতেই চলছে না তার সংসার। বর্তমানে এই রহমত আলীর মতো একজনও পাওয়া যাবে না এই এলাকায় বলে উল্লেখ করেন এলাকার সমাজ সেবক মো. রেজাউল ইসলাম।
তার এই বাঁচা মরার লড়াইয়ের কথা জানতে রহমত আলীর সাথে কথা হয় তিনি বলেন,
আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার কোন মতে দিন চলছে না। বাপু, তোমরা আমার এ বিপদ বুঝবা না। তোমাদের সংসার থাকলে তোমরা বুঝতে। আমার মায়ের বয়স্ক ভাতার টাকা আর তোমাদের চাচির কাজ করা টাকা দিয়ে আমার এ সংসার এখন চলছে। সবার কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে আমার বড় মেয়েটার বিয়ে দিছি। আল্লাহর রহমতে আমার মেয়েটা ভালো আছে। তোমরা পারলে আমার একটা ভ্যানের ব্যবস্থা করে দেও যাতে আমি ভ্যান চালিয়ে সংসারটা চালাতে পারি। এ পর্যন্ত কোন চেয়ারম্যান, মেম্বর আমারে কিচ্ছু দেয়নি। এখন করোনায় কোন কাজ করতে না পারায় আমার সংসার আর চলছে না। শুনেছি আমাগি ইউএনও খুব ভালো। উনি নাকি খাবার দিচ্ছে। উনাকে বল আমার একটা ব্যবস্থা করতে। আমি না খেয়ে মরতে চায় না,ছেলে মেয়ে নিয়ে বাঁচতে চায়।
তার সম্পর্কে সাবেক ইউ পি চেয়ারম্যান এস এম লিয়াকত হোসেন বলেন, আমার সময়কালে আমি তার ভিজিডি চালের কার্ড করে দিয়েছিলাম। তার মায়ের বয়স্ক ভাতার কার্ডটি ও আমার করে দেওয়া।
আমার মেয়াদ শেষ হলে আমি নিজের অর্থায়নে তাকে বিভিন্ন সময় টাকা দিয়ে সাহায্য করেছি। কিছুদিন আগেও তার ভ্যানটি ঠিক করে দেওয়ার জন্য আমি টাকা দিয়েছি। তবে এই ভাইরাস করোনার সময় আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিনয়ের সাথে অনুরোধ জানাচ্ছি তাকে এই সময়ে একটু সহযোগিতা করার এবং তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন একটি নতুন ভ্যান যাতে পায় তার একটি ব্যবস্থা করার।