নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রামন প্রতিরোধে বিদেশ থেকে ফিরে আসা ৩৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মরণঘাতী এই ভাইরাস প্রতিরোধে গতকাল বুধবার বিকালে জেলা কমিটি এক জরুরী সভা করে। সভায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়। ভাইরাস প্রতিরোধে অবহেলা কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গতকাল রাত থেকেই এক জন ম্যজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ মাঠে নেমেছে। এদিকে হোম কোয়ারেন্টাইন অমান্য করে খোলামেলা ভাবে চলাফেরা করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২৪ ঘন্টায় বিদেশ ফেরত জেলার ৫ টি উপজেলায় আরো নতুন ২৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত মঙ্গলবার বেলা ১২ টা থেকে বুধবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত তাদের এই কোয়ারেন্টানে নেয়া হয়। এনিয়ে গত তিন দিনে বিদেশ থেকে ফিরে আসা সাতক্ষীরার ৩৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হলো। হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া এসব মানুষ সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, সদর উপজেলায় ১০ জন, আশাশুনি উপজেলায় ৬ জন, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৮ জন, দেবহাটা উপজেলায় ২ জন ও শ্যামনগর উপজেলায় ১১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা.হুসাইন সাফায়াত জানান, সাতক্ষীরায় ইতিমধ্যে বিদেশ ফেরত মোট ৩৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে। এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এরা সবাই ভারত, ইটালী, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছেন। তবে ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন এমন লোকের সংখ্যা বেশী। এসব ব্যক্তিদের বিশেষ নজরদারীতে রাখা হয়েছে। এ সব ব্যক্তিরা যেন ঘরের বাইরে ঘোরাফেরা না করে সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের উপর স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ ও গ্রাম পুলিশকে নজরদারিতে রাখতে বলা হয়েছে। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে তাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে শান্তির আওতায় আনা হবে। তিনি আস্বস্থ করে বলেন, সাতক্ষীরায় এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন কোন রোগী পাওয়া যায়নি।
ভাইরাস প্রতিরোধে জেলা কমিটির জরুরী সভা: করোনো ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সাতক্ষীরা জেলা কমিটির জরুরী সভা বুধবার বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় করোনো ভাইরাস প্রতিরোধে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে জেলার সকল ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি কার্যকর পূর্বক সর্বোচ্চ তদারকির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও থানার ওসির সমন্বিতভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সভায় বিদেশ ফেরত মানুষসহ সন্দিগ্ধ মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ক্ষেত্রে অবহেলা দেখলে জেল জরিমানার পাশাপাশি বুধবার রাত থেকেই ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত টিম মাঠে নামবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনো ভাইরাস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বন করা হবে। এছাড়া করোনো ভাইরাস প্রতিরোধে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজকে প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে জানানো হয়, ইতোমধ্যে সেখানে ১২ বেডের আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। সভা থেকে জেলাবাসীর প্রতি নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থানের আহবান জানিয়ে বলা হয়, জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত বাড়িতে অবস্থান করুন। একই সাথে জ্বর-সর্দি-কাশি-গলা ব্যথাসহ সংশ্লিষ্ট উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গ পরিত্যাগ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সভায় সকল প্রকার জনসমাগম এড়িয়ে চলে কোয়ারেন্টাইনের শর্ত না মানলে প্রশাসনকে তথ্য দেওয়ার জন্য জেলাবাসীর প্রতি আহবান জানানো হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি। সভায় করোনা প্রতিরোধ বিষয়ে আলোচনা করেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত, এনএসআইএর উপপরিচালক জাকির হোসেন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি প্রমুখ। কোয়ারেন্টাইনের শর্তভঙ্গ করায় মালদ্বীপ ফেরত যুবকের জরিমানা: সাতক্ষীরায় করোনো ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে হোম কোয়ারেন্টাইনের শর্ত না মেনে প্রকাশ্যে চলাফেরা করায় মো: কামরুজ্জামান নামে এক যুবককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার বিকালে জেলা কালেক্টরেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: জুবায়ের হোসেন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাকে এই জরিমানা করেন। দন্ডপ্রাপ্ত মো. কামরুজ্জামান শহরতলীর কামালনগর এলাকার বাসিন্দা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: জুবায়ের হোসেন জানান, বিকালে কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়ে সদ্য বিদেশ ফেরত কামালনগরের মো. কামরুজ্জামানের বাড়িতে তদারকি করতে যান। এসময় তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। এ সময় তার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে মোবাইল ফোনে তাকে বাড়িতে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সে বিদেশ থেকে গত ১৫ মার্চ দেশে ফিরেছে বলে স্বীকার করে। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতে হোম কোয়ারেন্টাইনের শর্ত না মেনে প্রকাশ্যে চলাফেরা করার দায়ে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সাথে এলাকাবাসীকে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সহায়তা করা ও তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
