ডেস্ক রিপোর্ট : সুন্দরবনঘেষা সাতক্ষীরা উন্নয়নের অন্যতম নির্দেশন বাইপাস সড়ক। যেটি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হতে বিনেরপোতায় মিলিত হয়েছে। এ সড়কটি নির্মাণের পর গণ ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ ১৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ থেকে বিনেরপোতা বিসিক মোড় পর্যন্ত ১২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি নির্মাণ করেন। উদ্বোধনের আগে সড়কটি বন্ধ থাকলেও সংযোগ সড়কগুলো দিয়ে স্থানীয়দের চলাচল স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকে সাতক্ষীরাবাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষিত বাইপাস সড়কটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সড়কে বৈধ কিংবা অবৈধ চালকদের একটি বড় অংশ নিষেধ না মেনে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সড়ক পরিবহণ খাতে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা আনতে জেল-জরিমানা বাড়িয়ে আইন কার্যকর করতে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানগেছে। তবে অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া চালনায় দুর্ঘটনায় একের পর এক প্রাণ ঝরছে এমন অভিযোগ পথচারীদের। তারই আলোকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে বাইপাস সড়কে লাশের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। আর আহত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ।
এদের মধ্যে বাইপাস সড়কে চলতি বছরের ১৫ মে সাতক্ষীরার বাইপাস সড়কে ট্রাক উল্টে চালক শ্যামনগর উপজেলার ভড়ভড়িয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলি গাইনের ছেলে মফিজুল ইসলাম (৩৮)নিহত হয়। ১৮ আগস্ট দেবনগর এলাকায় পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা গ্রামের হাফিজুল ওরফে হাফি সরদারের ছেলে সাগর হোসেন (২৫) ও রহমত আলী একই গ্রামের আনার উদ্দিনের ছেলে নিহত হয়। দুই বন্ধু দ্রæত গতিতে মোটরসাইকেলে যাওয়ার পথে পিলারের সঙ্গে তাদের মোটরসাইকেলটি ধাক্কা লেগে একজন ঘটনাস্থলে এবং অপরজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। এসময় আহত হয় খুলনার ময়লাপোতা এলাকার খলিলুর রহমানের ছেলে নুর মোহাম্মদ ও ডুমুরিয়া এলাকার সোবহান শেখের ছেলে তাজুল ইসলাম। ১৩ অক্টোবর বাইপাস সড়কে পিকআপের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে আলীপুর গ্রামের জবেদ আলীর ছেলে হযরত আলী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন মধুমল্লারডাঙ্গি গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে নজরুল ইসলাম। ৫ নভেম্বর বকচরা মোড় এলাকায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মৃত সিদ্দিক হোসেনের ছেলে শামীম হোসেন ছট্টু (৪৫) নিহত হয়। ১৬ নভেম্বর মুথারেশপুর এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয় ৫জন। ১৯ নভেম্বর বাইপাস সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হয় সদরের ভবানীপুর গ্রামের মৃত কেরামত আলীর ছেলে ভ্যানচালক এখছার আলী(৪৮)। ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার বাইপাস সড়কে দ্রæতগামী সোহাগ পরিবহণের বাসের চাপায় মটর সাইকেল আরোহী মোমেনা খাতুন তনু (২৪) নিহত হয়েছে। মারাত্মক আহত হয়েছে মটর সাইকেল চালক রফিকুল ইসলাম। চলতি বছরের জানুয়ারী২৫ তেলবাহী ট্রাক ও মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে জাহিদ হোসেন (২৫) নিহত হয়। বাইপাস সড়কের সাথে মিলিত হওয়া সংযোগ সড়কের মধ্যে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে মেডিকেল হতে সংযুক্ত বাইপাস, মন্টু মিয়ার বাগান বাড়ি হতে ইটাগাছা সড়ক, সার্কিট হাউস হতে পরান্দাহ সড়ক, কাশেমপুর হতে বকচরা সড়ক, কদমতলা হতে বৈকারী, যশোর রোড়, লাবসা চাররাস্তা মোড়, আখড়া খোলা হতে দেবনগর সড়ক, মুথারেশপুর সড়ক, বিনেরপোতা সড়ক। এসব সড়কের সাথে বাইপাস মিলিত হয়েছে। কিন্তু সংযোগ স্থানে নেই গতিরোধক ব্যবস্থা। যে কারণে বিভিন্ন সংযোগ থেকে আসা যানবাহন প্রধান সড়কে উঠতে যেয়ে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি জনশূন্য সড়কে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। এছাড়া সড়কের দু পাশের ঝোপঝাড়ের কারণে সড়ক দুর্ঘটনাও ঘটছে বলে মনে করেন অনেকে।
কয়েকজন পথচারী অভিযোগ করে জানান, অপরিকল্পিত ভাবে বাইপাস নির্মাণ করায় দুর্ঘটনা ঘটছে। সে কারণে বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগের দাবির পাশাপাশি গতিরোধকের দাবি করেন। জাহাঙ্গির আলম নামের একজন চালক জানান, সংযোগ সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যদি বিট বা গতিরোধক দেওয়া হয় তাহলে দুর্ঘটনা অনেকটা কমবে। সাথে সাথে সকলকে সড়ক আইন সম্পর্কে জানার আহŸান জানান।
জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর কামরুল ইসলাম বলেন, মোটরসাইকেল ও ট্রাকের গতিরোধ করে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রতি শুক্রবার চেকপোস্ট বসানো হয় বাইপাস সড়কে। জনবলের অভাবে বাকি দিনগুলোতে করা সম্ভব হয় না।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজামউদ্দীন বলেন, চালকের দ্রæতগতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। এটি কোনোভাবেই কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করা যাচ্ছে না। দুর্ঘটনা কমানোর জন্য সড়ক ও জনপদ বিভাগের পক্ষ থেকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সব মিলে এখন কেবলমাত্র সচেতনতায় পারে দুর্ঘটনা কমাতে। আর সে জন্য সড়কের বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন সচেতনমহল।
সংযোগস্থলে গতিরোধক ও সাইনবোর্ড স্থাপনের দাবি : বাইপাস সড়কে লাশের পাশাপাশি আহতের সংখ্যা বাড়ছে
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/