নূর মনোয়ার: শিশুরা আগামীর ভবিষ্যৎ। শিশুদের সুরক্ষায় স্বাভাবিক বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে ১৯১টি দেশ সর্বসম্মতিক্রমে জাতিসংঘে শিশু অধিকার সনদ অনুমোদন করে। বিশ্বের প্রতিটি দেশে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের লক্ষ্যে শিশুর প্রতিটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। বর্তমানে আমেদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্রে শিশুপার্ক তাৎপর্যপূর্ণ। সাতক্ষীরার প্রাণকেন্দ্রে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে অবস্থিত একমাত্র শিশু পার্ক। কয়েক বছর পূর্বে একটি বে-সরকারি সংস্থার উদ্যোগে পৌরসভা কর্তৃক পুনরায় পার্কটি চালু করা হয়। বসানো হয় দোলনাসহ বিভিন্ন রাইড। কিন্তু রক্ষনাবেক্ষণ ও কতৃপক্ষের উদাসীনতায় পরিবেশগত উন্নয়নে কোন কাজ না করায় দীর্ঘদিন শহীদ আব্দুর রাজ্জাক শিশু পার্কটির বেহাল দশা। বর্তমানে এই স্থানটিতে শিশুদের পরিবর্তে মাদকসেবী আর অসামাজিক কার্যকলাপরতদের পদচারণায় মুখরিত।
এ বিষয়ে পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার বাসিন্দা সামসুর বাবু জানান, আমার ছেলে বায়নায় আমাকে প্রায় শিশু পার্কে আসতে হয়। মামুন চক্রাকার রাইডে চড়ে, আগে সে নিজে ঘোরাতে পারত রাইডার জাম হয়ে যাওয়ায় এখন আমাকে ঘোরাতে হয়। পার্কে আমাকে আতঙ্কগ্রস্ত থাকতে হয়। দ্রæতগতির মোটর সাইকেল আরোহীদের জন্য, কখন না কোন দুর্ঘটনা হয়। কর্তৃপক্ষ শিশু পার্কের দক্ষিণ পাশে একটি গেট তৈরি করলে কোন দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে না, পরিবেশটাও সুন্দর থাকে। এ বিষয়ে প্রাক-শিশু শ্রেণির মেঘার পিতা হাসান মনি জানান, আমার পার্কের পাশেই বাড়ি, প্রতিদিন দোলনা চড়তে মেয়েকে নিয়ে আসতে হয়। পার্কে ২০টি দোলনার মধ্যে ৭টি নেই, ২টি দোলনার শিকল ছাড়ানো, ৪টি ¯িøপার ও ১টি রাউন্ড রাইড ভাল আছে। বর্তমানে ১১টি দোলনা ভালো আছে। আমার মেয়েকে নিয়ে প্রতিদিন অনেকখন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, মেয়ে মেঘা আমাকে বার বার বলতে থাকে, ‘আব্বু আমি কখন দোলনায় চড়বো’। কোন একটি দোলনা থেকে কোন এক শিশু নেমে অন্য রাইডে খেলতে গেলে তখন মেঘার দোলনায় বসার সুযোগ হয়। তাছাড়া রাউন্ড রাইডটা শিশুরা ঘুরাতে পারে না, জ্যাম হয়ে ঘুরতে চায় না। আর পাবলিক টয়লেট বন্ধ থাকায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে সাধারন মানুষ বসে যাচ্ছে পার্কের কর্ণারে। আর তাই নিয়ে মেঘার হাজারও প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় আমাকে। পার্কের মধ্যের রাস্তাটা এখন এই অঞ্চলের বাইপাস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শিশু পার্কের পাঁয়ে হাটা রাস্তাদিয়ে এখন মোটর ভ্যান, ইজিবাইক আর দ্রæত গতিতে মোটর সাইকেল চলে, ধুলোর জন্য শিশুপার্কের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকা যায় না। বর্তমানে শিশুপার্কের যে পরিবেশ তাতে শিশুদের উপকারের থেকে ক্ষতিই হচ্ছে বেশি, কর্তৃপক্ষ শিশুপার্কের নামটি ব্যবহার না করতে পারে।
সুলতানপুর এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, সাতক্ষীরা শহরে বিনোদনের স্থান না থাকায় প্রায় সময় বাচ্চাদের নিয়ে রাজ্জাক পার্কে আসি কিন্তু এখানকার পরিবেশ অনেক খারাপ, স্কুল টাইমে উঠতি বয়সী কিশোর কিশোরীদের অবাধ চলাচল ও অসামাজিক আচরণের কারণে এই পার্কে আসার উপায় নেই। এছাড়া সন্ধ্যার পর এই স্থানটি মাদক সেবীদের কারণে অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল করিম জানান, নতুন চক্রাকার রাইড চালু হবে। এছাড়া শিশুপার্কের সকল দরপত্র হয়ে গেছে খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।
পৌরসভার সচিব সাইফুল ইসলাম বিশ্বাস জানান, ইতিমধ্যে লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিশুপার্কের দক্ষিণ পাশে গেট নির্মাণ আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনার মধ্যে আছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে জানান, সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক শিশু পার্ক উন্নয়নে সাতক্ষীরা পৌরসভা ও ব্র্যাক যৌথভাবে কাজ করছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পরিকল্পনা সম্পূর্ণ হবে। এপ্রিলের ২-৩ তারিখের মধ্যে বড় কোন সমস্যা না হলে শিশুপার্কের কাজ শুরু হবে। আধুনিক পাবলিক টয়লেটের কাজ শুরু হয়েছে। নতুন আর একটি চক্রাকার রাইড তৈরি হবে। এছাড়া শিশুপার্কের সব থেকে আকর্ষণীয় রাইড টি চালু হচ্ছে যেটা দিনাজপুরের স্বপ্নপুরের মত ক্যাবল রাইড। আমরা সকলেই চেষ্টা করছি শিশুপার্কের সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে।
অরক্ষিত শহীদ আব্দুর রাজ্জাক শিশু পার্ক
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/