Site icon suprovatsatkhira.com

পাইকগাছায় ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সুপারিশে গড়ে ওঠা দেশের প্রথম ভুবন মোহিনী বালিকা বিদ্যালয়

Exif_JPEG_420

এম.এম. নজরুল ইসলাম, পাইকগাছা: খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়–লী গ্রামে ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সুপারিশে বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের (পিসি)পিতার হাতে গড়া দেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়টি আজও জাতীয়করণ হয়নি। একটি নতুন ভবন নির্মাণাধীন থাকলেও মূল ভবন রয়েছে জরাজীর্ণ। অবিভক্ত বাংলার বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিদের এই বিদ্যালয়ে পরিদর্শন থাকলেও জাতীয়করণ না হওয়া হতাশা বিরাজ করছে অত্র এলাকা সহ খুলনা বাসীর। শিক্ষক – শিক্ষার্থীরা গর্বিত হলেও অজানা বেদনা তাড়িয়ে বেড়ায়। শিক্ষা বান্ধব প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সুধী মহল সহ সর্ব স্তরের জনগণ। জানা যায়, খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়–লী গ্রামে ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট হরিশ্চন্দ্র রায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র (পিসি) রায়। তাঁর জন্মের ১১ বছর আগে অর্থাৎ ১৮৫০ সালে তাঁর বাবা হরিশ্চন্দ্র রায় স্ত্রীর নামে ভুবন মোহিনী বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয়দের দাবি এটি বাংলাদেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। অথচ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ১৭০ বছরেও ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠে একটি বহুতল ভবনের কাজ নির্মাণাধীন থাকলেও মূল ভবনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বর্তমানে দেশে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হলেও সে তালিকায় দেশের সর্ব প্রথম প্রতিষ্ঠিত বালিকা বিদ্যালয়টি স্থান পায়নি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, ১৮৫০ সালের পূর্বে কোন এক সময় পাইকগাছার রাড়–লী গ্রামে বেড়াতে আসেন জ্ঞানের ভান্ডার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি আচার্য্য পিসি রায়ের পিতা হরিশ্চন্দ্রকে নারী শিক্ষার উন্নয়নে একটি আলাদা নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য সুপারিশ করেন। ঈশ্বরচন্দ্রের সুপারিশ অনুসারে হরিশ্চন্দ্র রায় স্ত্রীর নামে রাড়–লী গ্রামে ভুবন মোহিনী বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং স্ত্রীকে ঐ বিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী হিসেবে ভর্তি করেন। এটি বাংলাদেশের ও ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৬ জন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারী রয়েছেন। ছাত্রী আছে তিন শতাধিক। এ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে ৪৫ জন ছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শত ভাগ পাশ করেছে।‘দেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়টি ১৭০ বছর নারী শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। স্বাধীনতার পর দেশের শত শত নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হলেও দেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়টি আজও জাতীয়করণের আলো দেখেনি। অজ পাড়া গায়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের দৃষ্টি গোচর হয়নি। কিন্তু ১৯৩৮ সালের ২০এপ্রিল তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত বালিকা বিদ্যালয়ের নাম শুনেই ছুটে আসেন রাড়–লী গ্রামে। পরিদর্শন করেন বিদ্যালয়টি, মন্তব্য লেখেন পরিদর্শন খাতায়। এগিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকা বাসীর। পাঁচ বছর পর ১৯৪৩ সালের ২৬ এপ্রিল একই সংবাদ শুনে ছুটে আসেন অবিভক্ত ভারতের ইতিহাস খ্যাত মেঘনাদ সাহাসহ চার জন প্রতিনিধি দল। উনারা নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য বাংলার প্রথম বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য পিসি রায়ের পিতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পরিদর্শন খাতায় তাদের মতামত তুলে ধরেন। আরও যে তিন জন বরেণ্য ব্যক্তি প্রতিনিধি দলে ছিলেন তারা হলেন,প্রফুল্ল চন্দ্র মিত্র, বীরেন চন্দ্র গুহ ও বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৮৬ সালের১০ জুলাই বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন, অধ্যাপক কে, আলী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি ইফতেখার হোসেন। ১৯৯২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নায়েমের মহাপরিচালক, ১৯৯৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো: ফজলুর রহমান। ২০০২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ড: এ এফ এম মনজুর কাদির। প্রত্যেক বরেণ্য ব্যক্তিরা পরিদর্শন শেষে মন্তব্যে নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় বিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ কামনা করেছেন। আবার বর্তমানে বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র (পিসি)রায়ের জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী সরকারী ভাবে পালিত হয় রাড়–লী গ্রামে। সেখানে সরকারের উচ্চ মহলের কর্মকর্তা সহ স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে হৃদয় কাঁপানো বক্তব্য পেশ করেন। অপর দিকে এই বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানীর মাতার নামে প্রতিষ্ঠিত বাংলার প্রথম বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বক্তব্য দেন একই মঞ্চে। কবে হবে তাদের প্রিয় বিদ্যাপীঠ জাতীয়করণ? সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২ আগস্ট পিসি রায়ের জন্ম দিবসে খুলনা জেলা প্রশাসক, স্থানীয় এমপি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সরকারী উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অত্র বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী লাবিবা হাসনাত তার বক্তব্যে বলে, ‘দেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করি। কিন্তু যখন অবহেলিত বিদ্যালয়ের করুণ চিত্র দেখি তখন খুব কষ্ট হয়। যে প্রতিষ্ঠান প্রায় ২০০ বছর ধরে নারী শিক্ষার উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে, কেউ তার খবর রাখেন না।’ একই আক্ষেপ বিদ্যালয়টির নবম শ্রেণির ছাত্রী ডরতী দাশ ও দশম শ্রেণির অন্তরা খাতুন সহ সকল শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম কুমার ঘোষ বলেন, ‘১৮৫০ সালে একজন বরেণ্য ব্যক্তির প্রতিষ্ঠিত ও বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানীর মায়ের নামে হওয়া দেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় আজও অবহেলিত। স্বাধীনতার পর দেশের শত শত বালিকা বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে। অথচ ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কিংবা জাতীয়করণে কারও কোনো দৃষ্টি নেই। প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আমরা সকলেই অবহেলিত। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেশের প্রথম এ বালিকা বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের ঘোষণা চাই।’

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version