ডেস্ক রিপোর্ট: সামাজিক জীব হিসাবে মানুষ কখনও একা বসবাস করতে পারে না। সেজন্য প্রয়োজন হয় প্রতিবেশী, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সহযোগিতা। কেননা সহযোগিতা এবং প্রেরণা জোগান একজন ব্যক্তি সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রয়োজন হয় সহায়ক হিসাবে সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিবর্গের এবং রাষ্ট্র পরিচালনা কারী গণের। আর যাদের জন্য এই সহযোগিতা বা প্রেরণা জোগান নিতান্তই প্রয়োজন তারা হলেন দলিত শ্রেণির মানুষজন। আর দলিত মানেই সমাজে অস্পৃশ্যতা, নিচু শ্রেণির ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠী। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যেমন-ভারত, নেপাল এর মতো বাংলাদেশের কোথাও দলিতদের নির্দিষ্ট সংখ্যার উল্লেখ নেই। তবুও আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১ কোটি রয়েছে দলিত জনগোষ্ঠী। শুধু তাই নয়, দলিত জনগোষ্ঠীর অবস্থান কেবল এখানেই শেষ নয়। দেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ ভাগ দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে তারা। আর এই ২৫ ভাগের ৬ ভাগই রয়েছে দলিত জনগোষ্ঠী। রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্য ও সামাজিকভাবে অস্পৃশ্যতার শিকার জনগোষ্ঠী হচ্ছে দলিত শ্রেণির মানুষ। যারা কিনা কালক্রমে পেশাচ্যুত, প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হচ্ছে নিরাপত্তাহীনতায় এবং পর্যাপ্ত রাষ্ট্রীয় পরিসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ. এই জনগোষ্ঠীরাই দেশের মোট জনশক্তির একটা বড় অংশ যারা চামড়া, চামড়াজাত দ্রব্য ও বাঁশ-বেতের সনাতন শিল্পী হিসাবে জাতীয় আয়ের সঞ্চালনে অবদান রাখছে, যেটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। এই শিল্পী গোষ্ঠী সরকারী-বে সর কারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নিজেদের অবদানে আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। তাই দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য তাদেরকে বিবেচনা করা আবশ্যক। আমাদের দেশে দলতি সম্প্রদায়কে জনসংখ্যা না ভেবে জনশক্তিতে এবং জনসম্পদে পরিণত করার জন্য এই জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য ১৩ টি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে. আয়োজনকারী সংগঠন কর্র্তৃক ধারণাপত্রে সরকারিভাবে ঋষি এবং হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য খাসজমি বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্যকর আবাসনের ব্যবস্থা করা, সরকারী উদ্যোগে ঋষি ও হরিজন কলোনিগুলোতে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা, প্রা-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করা, ঋষি এবং হরিজন শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তির নির্দেশনা বলী শিথিল করা, ঝরে পড়া রোধে প্রয়োজনীয় কোচিং এবং শিক্ষা বৃত্তি সকল দলিত শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোটা পরিবর্তন করা, ঋষি ও হরিজন কলোনিতে মাতৃত্বকালীন ভাতা বরাদ্দ করা, কলোনিতে সরকারী পুষ্টি প্রকল্প চালু করা, ঋষি সম্প্রদায়ের চামড়া শিল্পকে আধুনিকায়ণে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রাদি সরবরাহ করা, বিকল্প পেশার সাথে জড়িত হওয়ার জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, সরকারী চাকুরির ক্ষেত্রে দলিত সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েদের জন্য কোটা ব্যবস্থা করাসহ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তনুযায়ী চাকুরি কোটায় ৮০ ভাগ পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বিদেশে প্রেরণের জন্য ৮০ভাগ কোটা বরাদ্দ রাখা। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১০ টায় সাতক্ষীরার চায়না-বাংলা শপিং কমপ্লেক্স এর হলরুমে ব্রট এর সহযোগিতায় শারি ও স্বদেশ সাতক্ষীরার আয়োজনে দলিত জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণে রাষ্ট্রের করণীয় শীর্ষক এক সংলাপ সভায় উপরোক্ত দাবি জানানো হয়।
স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্তের সঞ্চালনায় সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রোফেসর আব্দুল হামিদ। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। তিনি বলেন বর্তমান সরকার সকল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য মুন্ডা, হরিজনসহ সকল নাগরিকরা যারা অনাদরে, অবহেলায় ভুগছে তারা আর সরকারী সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে না। মুজিববর্ষ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন বর্তমান সরকার তাদের উন্নয়নে অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। তিনি বলেন কেউ কারো কাজ করে দেয়ানা, নিজেদের অধিকার নিজেদের আদায় করে নিতে হয়। তিনি মুন্ডা এবং হরিজন সম্প্রদায়ের শ্মশানের জায়গা উদ্ধারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বলেন সমাজে এখনও অনেক কলুষিত লোক রয়েছে যারা সবসময় অন্যের জায়গা জমি জবরদখল করতে চায়,তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের থেকে সকলকে সাবধান হতে হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের সংগঠিত হতে হবে। মানুষের চরিত্রে পরিবর্তন আনতে হবে। সমাজে যারা অসহায়-হতদরিদ্র রয়েছে তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করার অঙ্গিকার করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শেখ সহিদুর রহমান, সাতক্ষীরা মহিলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক জ্যো¯œা আরা, সুনাম সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. সোমনাথ ব্যানার্জী, রেড ক্রিসেন্ট সাতক্ষীরা জেলা শাখার নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো: আবু সাইদ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শারি’র অ্যাডভোকেসি কো-অর্ডিনেটর রঞ্জন বকসী নূপু, বরসা’র সহকারী পরিচালক মো: নাজমুল আলম মুন্না, চুপড়িয়া মহিলা সংস্থার সভানেত্রী মরিয়ম মান্নান, শিউলি মুন্ডা, সাবেক অধ্যক্ষ সুভাষ সরকার, হেড সংস্থার নির্বাহী পরচিলক লুইস রানা গাইন, কার্ত্তিক দাস, দলিত পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গৌরপদ দাস, হরিজন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জীবন কুমার প্রমুখ। সংলাপ সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করে শিক্ষার্থী প্রভাতী দাস।