ডিসেম্বর ৬, ২০১৯
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ : রাখে আল্লা মারে কে ?
![]() ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্থপতি বিশ্বের অন্যতম অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বৎসরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। পাক হানাদার বাহিনী সাতক্ষীরায় আসলে আমরা পরিবারসহ পশ্চিমবঙ্গে ২৪ চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়া থানাধীন কাটিয়ায় আব্বার মামার বাড়িতে স্বপরিবারে আশ্রয় গ্রহণ করি। সেখানে মাহমুদপুরের জুলফিকার সিদ্দিক এর সাথে আমার পরিচয় হয়। দুইজন যুক্তি করে বশিরহাট আকাশ বাণী ভবন মুক্তিযোদ্ধা বাঁচাই কেন্দ্রে যেয়ে নাম লিপিবদ্ধ করি। ভর্তি কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন খায়রুজ্জামান বাচ্চু ভাই। তিনি আমাদের টাকী যেতে নির্দেশ দিলেন। পরের দিন আমি ও জুলফিকার অন্যান্য ছেলেদের সাথে টাকী চলে যাই। ক্যাম্পটি (ণড়ঁঃয ঈধসঢ়) ইউথ ক্যাম্প বলে পরিচিত ছিল। ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন শ্রদ্ধেয় ক্যাপ্টেন শাহাজান মাস্টার, হিরেন গোলদার, আফজল হোসেন, আলী আকবর প্রমুখ। সেখানে এক ভয়াবহ দৃশ্যের সম্মুখীন হই। শত শত ছেলে কয়েকটি তাবুতে স্কুলের বারান্দা, পরিত্যক্ত বাড়িতে কোনরকম থাকতে হতো। খাওয়া দাওয়ার ভীষণ কষ্ট ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সেখানে কিছুদিন থাকার পর আমাকে মেডিকেল প্রশিক্ষণার্থী (এম.সি) হিসেবে বাচাই করে অন্যান্যদের সাথে ভারতীয় ক্যাপ্টেন এ.পি.সিপাহর পিপা ক্যাম্পে পাঠান হয় এবং জুলফিকার অন্যত্র চলে যায়। পিপা ক্যাম্পে প্রায় দেড় মাস অন্যান্য ছেলেদের সঙ্গে মেডিকেল ও হালকা সামরিক প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের ৮নং সেক্টর হেড কোয়াটার কল্যাণীতে পাঠান হয়। ৮নং সেক্টর হেড কোয়া টারের নিকট ভারতীয় সেনা ক্যাম্পে বিভিন্ন হালকা অস্ত্রের প্রশিক্ষণ শেষ করে হাকিমপুর অপারেশন ক্যাম্পে পাঠান হয়। আমার সঙ্গে রফিক মাস্টার, আমিরুল, জুলফিকার, তপন দা, বমেন দা, নারায়ণ ভদ্র, দিনেশ, পবিত্র, প্রভাত আরো অনেকে ছিল। আমরা কল্যাণী হতে হাকিমপুর পৌঁছাই তখন রাত্র গভীর মিত্র বাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানী বাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছিল এবং ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আতিয়ার ভাই ও প্রখ্যাত আনসার কমান্ডার মরহুম এলাহী বক্স সরদারের সাথে দেখা হয়। তাঁরা আমাদের সাবধানে থাকতে বলেন। সাবজেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন বীর বিক্রম আমাদের সম্মুখ ভাগে যাওয়ার জন্য ইপিআর সুবেদার মালেককে নির্দেশ দেন সুবেদার মালেক, সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মাহবুবকে বলেন স্যার এরা সম্মুখ যুদ্ধে টিকে থাকতে পারবে না এদের দ্বারা আমাদের অস্ত্র গোলা বারুদ সম্মুখ ভাগে নিতে হবে। উভয়পক্ষের প্রচন্ড গোলাগুলির মধ্যে আমরা মিত্র বাহিনীর সাথে ভাদলী কাকডাঙ্গার দিকে যেতে থাকি এই যুদ্ধে কলারোয়ায় আমজাদের গায়ে গুলি লাগে ভাগ্যক্রমে চিকিৎসায় সে বেঁচে যায় এখনও সে জীবিত আছে। একদিন আমরা মুক্তিযোদ্ধারা হাকিমপুর সোনাই নদী পার হয়ে সম্মুখ ভাগে যাওয়ার জন্য নৌকার অপেক্ষা করছিলাম। নৌকায় উঠার সময় মিত্রবাহিনীর একজন জওয়ান এসে বলল মুক্তি ভাইরা তোমরা অপেক্ষা কর আমরা আগে যাব। আমরা নৌকা থেকে নেমে যাই। মিত্র বাহিনীর জওয়ানরা নৌকায় উঠে নদীর মাঝখানে আসলে একটি পাকিস্তানী গোলা নৌকার পার্শ্বে পড়ে এতে মিত্র বাহিনীর কয়েকজন জওয়ান শহীদ ও আহত হন। এই নৌকায় আমরা থাকলে অবশ্যই মারা পড়তাম আল্লাহর ইচ্ছায় বেঁচে গিয়েছিলাম। হাকিমপুরে গেরিলা গ্রæপ কমান্ডার শাহাদাত ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীনের নির্দেশে তিনি রফিক, আমিরুল জুলফিকার ও আমাকে আমাদের নিজ এলাকায় নিয়ে আসেন এবং আমাকে ভাড়–খালীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত গেরিলা কমান্ডার সামছুর রহমান ঢালীর গ্রæপে পাঠাইয়া দেন। সামছুর ভাই পূর্ব পরিচিতি ঘোনা হাইস্কুলে একত্রে পড়তাম। আমরা ১৩ জন সামছু ভাইয়ের দলে ছিলাম যথা- সামছুর রহমান ঢালী কমান্ডার, আব্দার রহমান ২য় কমান্ডার, মফিজ উদ্দিন ৩য় কমান্ডার, মতিয়ার, ফজলু, হাসান, আব্দুল্যা, মজিবর, কাসেম সরদার, কাসেম, রশিদ, আসাদুল ও মুসা আমিন মোট- ১৩ জন। ভাড়–খালী খালের পশ্চিম পার্শ্বে আমাদের অবস্থান ছিল এবং খালের পূর্ব ঘোলা ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মাহমুদপুর, গাংনী ও ভোমরায় পাক হানাদারদের শক্ত ঘাটি ছিল। আমরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নাজুক অবস্থায় ছিলাম। পাক বাহিনীর সঙ্গে আমাদের প্রায়ই খন্ড যুদ্ধ লেগেই থাকত। শাহাদাৎ ভাইয়ের গ্রæপের মুক্তিযোদ্ধারা কামরুজ্জামান বাবু, সোনা ভাই মালেক, আব্দুল্লাহ, আশু, গৌর ও অরুনদা সাতক্ষীরা পাওয়ার হাউজ উড়িয়ে দিলে পাক বাহিনীর মনোবল একেবারেই ভেঙে যায়। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণের মধ্যে পাক বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। 5,945,004 total views, 270 views today |
|
|
|