Site icon suprovatsatkhira.com

মাথার চুল দিয়ে মাইক্রো-প্রাইভেটকার টানতে পারা ইত্যাদিখ্যাত সবুর এখন রাস্তার পাগল

মো. রাকিবুল ইসলাম : নব্বইয়ের দশকে ইত্যাদি অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরা জেলা থেকে অংশগ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুস সবুর বর্তমানে চিকিৎসার অভাবে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। ১৯৯৬ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র থাকাবস্থায় তার বিশেষ কর্মের জন্য ডাকা হয় ইত্যাদির অনুষ্ঠানে। ইত্যাদি অনুষ্ঠানে সে মাথার চুল দিয়ে অনায়াসে এক সাথে ৪টি মাইক্রো টেনে নিয়ে সকলের মন জয় করেছিল। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! আব্দুস সবুর তার কৃতিত্ব দিয়ে সকলের মন জয় করলেও এখন হয়তো সবাই তাকে ভুলে গেছে। এমনকি তার জন্য সাহায্যের নিবেদন নিয়ে আসেনি ‘ইত্যাদি’ পরিবার, এমনটাই জানিয়েছেন সবুরের পরিবার। মস্তিস্ক বিকৃত না হলে হয়তো নতুন কোন কর্ম নিয়ে আবার সকলের সামনে এসে জানান দিত তার উদ্ভাবনী কৃতিত্ব। বার বার মনে করিয়ে দিত তার সকল কৃতকর্ম। কিন্তু জীবনের বাস্তবতার কাছে হার মেনে সেই মেধাবী ছাত্র বিশেষ কৃতিত্ব-মান আব্দুস সবুর পাগল হয়ে অতীত ভুলে বর্তমানে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। আব্দুস সবুর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের বল্লী গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তাকে সাবই ডিনা নামেই চীনতো। আব্দুস সবুর বল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। এরপর বল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ইতিহাস বিভাগে চান্স পেয়ে ভর্তি হয়। আব্দুস সবুরের শৈশবের সহপাঠী বিলকিস রেহেনা জানান, ‘আব্দুস সবুর ছোটবেলা থেকেই আলাদা ধরনের মেধাবী ও চালাক ছিল। সবসময় সকলের থেকে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করতো। তাছাড়া স্কুলে সবার সেরা ছিল। ছোট বেলা থেকে কবিতা লেখা গান শোনার প্রতি ছিল খুব আগ্রহ। সবুর যখন কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তখন সে মার্শাল আট শিখতো। কয়েকবার মার্শাল আর্টে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি/বেল্ট পেয়েছিল। তখন সবুরের মাথায় অনেক লম্বা চুল ও মুখে লম্বা দাড়ি ছিল। তার দাড়িতে তিন/চার জন বাচ্চা ঝুলিয়ে রাখতে পারতো। দীর্ঘদিন সে মাথার চুল দিয়ে মাইক্রো-প্রাইভেটকার টেনে নিয়ে যাওয়ার চর্চা করে। এক পর্যায়ে চুল দিয়ে গাড়ি টানার কাজে সফল হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার কিছুদিন পূর্বে তার এই কর্ম প্রতিভার জন্য ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়। আব্দুস সবুরের মাথার চুল দিয়ে এক সাথে ৪টি মাইক্রো টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ইত্যাদিতে দেখানো হয়। ওই সময় সবুরের লেখা ‘ঘোড়ার ডিম’ নামের একটি শিশু-তোষ উপন্যাসও প্রকাশ পায়। সে খুব মেধাবী ছিল। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩য় বর্ষের পরীক্ষা দেওয়ার কিছুদিন পরেই সবুরের মাথার সমস্যা দেখা দেয়। সেই থেকে আব্দুস সবুর বর্তমানে ৪৫ বছর বয়সে পাগল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আব্দুস সবুরের বোন সেলিনা আক্তার জানান, ‘আর্থিক সমস্যার কারণে আমার ভাইকে চিকিৎসা করাতে পারিনি। পরে ২০০১ সালে আমার চাচারা সবুরকে পাবনা পাগলা গারদে চিকিৎসা করার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তাররা বলে, মাথার চুল দিয়ে গাড়ি টানার ফলে সবুরের ঘাড়ের একটা শিরা পাম্পের মতো হয়ে গেছে। ওই শিরা ছিঁড়ে গেলে হয়তো বাঁচানো যেত না। শিরাটা ফাঁকা হওয়ার ফলে তার মস্তিস্কে এই সমস্যা হয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা করালে আবার সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে সবুর। সেই সময় সবুরকে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে পরবর্তীতে আবার একটা সময় দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় চিকিৎসকরা। বাড়ি আসার পর কিছুদিন সবুর সুস্থ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আর্থিক সমস্যার কারণে সবুরকে আর পাবনায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তার কিছুদিন পরে আবার সবুর পাগল হয়ে যায়। সেই থেকে পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে আর চিকিৎসা করানো হয়নি। তারপর আমার বাবা মারা গেলে সংসারে আরও অভাব অনাটন নেমে আসে। ফলে আমরাও তার চিকিৎসা করাতে পারিনি। সবুরের পাগল হওয়ার বিষয়ে ইত্যাদি টিমের কেউ জানেন কি’না এ বিষয়ে সবুরের বোন বলেন, আমরা গ্রামের মানুষ তাদের সাথে কখনো যোগাযোগ করিনি। আপনাদের মাধ্যমে যদি ইত্যাদি’র লোকজন অথবা সরকার খবর পেয়ে আমার ভাইয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাহলে আমার ভাই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। সবুরের বোন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে তার ভাইয়ের চিকিৎসা-ভার গ্রহণ করার আবেদন জানিয়েছেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version