খলিষখালী (পাটকেলঘাটা) প্রতিনিধি: শীতের আগমন, সামনে আসছে পৌষ’র শীতের সকাল। এমন একটি সময়কে সামনে নিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন খলিষখালী ইউনিয়নের গাছিরা। ঘন কুয়াশা আর শীতের সকালে লেপের উষ্ণতা এবং আরামের বিছানা ছেড়ে কে বা উঠতে চায়। কিন্তু ঠিক পাখি ডাকা ভোরেই ঘন-কুয়াশা আর কনকনে শীতের বাতাস সয়ে শিশিরে ভেজা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ে গাছিরা। খেজুরের রস সংগ্রহের এখন উপযুক্ত সময়। প্রথমে গাছ তোলা তারপর চাঁচ দেওয়া এরপর আসে আলোচিত নলিন। আর এই নলিন রসে গ্রাম বাংলার কৃষাণীরা রসের পিঠা, পায়েস তৈরিতে এলাকায় ধুম পড়ে যায়। শীতের সকালে হাস্যজ্জল রোদে বসে এগুলো খেতে মনে আসে এক অন্যরকম আনন্দ। তবে শীত মৌসুমটা পিঠা পায়েসের আমেজে থাকে ভরপুর। হেমন্ত ঋতু আসলেই বইতে শুরু করে ঠান্ডা বাতাস। ঠিক তখনই গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে আটঘাট বেধে শুরু করে গাছ তোলা। এর থেকে দুরে নেই বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার ন্যায় খলিষখালীর গাছিরাও। অন্য বছরের মত এবারও হেমন্ত ঋতু শুরুর সাথে সাথে খলিষখালীর রাঘবকাটী, কাশিয়াডাঙ্গা, চোমরখালী, এনায়েতপুর, দলুয়া, বাগমারা, গাছা, কাটাখালি, দূধলাই, টিকারামপুর, গণেশপুর, বাগমারা সহ খলিষখালীর প্রায় সব গ্রামের গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে এখনও কনকনে শীতের যেমন রয়েছে বাকি, তেমনি অন্যদিকে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য অতীতের মতো খেজুরের রসের সুদিন যেন বিলীন হতে চলেছে। খলিষখালী ইউনিয়নের খেজুর গাছ যেন বিলুপ্তির পথে। কয়েক বছর আগেও বাড়ির আঙিনায়, ক্ষেতের আইলের পাশে কিংবা রাস্তার দুধারে খেজুর গাছের আধিক্য থাকলেও এখন আর তেমনটা দেখা যায় না। এখন গাছিরা গাছ কাটা বাধ দিয়ে অন্য পেশায় ঝুঁকে গেছে। বিধায় গাছিরা একটা গাছ কাটতে নেন ১২০-১৫০ টাকা। যদিও সরকার তাল ও খেজুর গাছ রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে দেশ ব্যাপী। মানুষ দিনদিন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটিয়ে প্রকৃতির বিনাশ ঘটাচ্ছে। সেই সাথে প্রকৃতির আশির্বদও দিনে কমতে বসেছে। খলিষখালীর বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে কথা হয় কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের মোসলেম গাজী, হজরত মোড়ল, রাঘবকাটী গ্রামের সাজ্জাত গাজী, গাছির সাথে। তারা জানান, এখন খেজুর গাছ চেঁচে প্রস্তুত করে রাখছে। এলাকায় এখনও শীতের প্রভাব পড়েনি, সেজন্য গাছ থেকে রস এখনও খুব একটা বের হচ্ছে না। কনকনে শীত পড়লে খেজুরের রস পর্যাপ্ত পরিমাণে বের হবে। শীত মৌসুমের শুরুতে যে রস পাওয়া যায় তাতে নলিন গুড় খুব বেশি তৈরি করা যায় না। প্রথমে যে পরিমাণ রস পাওয়া যায় তার অধিকাংশই বিক্রি করে দেওয়া হয়। একভাড় রস মৌসুমের সময় ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। শীতের প্রভাব বেশি হলে সেই সময়ের রস থেকে গুড়-পাটালি তৈরি করা হয় এবং বাজারে বিক্রি করে অনেক মুনাফা অর্জন করা হয়ে থাকে। একভাড় গুড়ের মূল্য ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয় বলেও গাছিরা জানিয়েছে। এছাড়া খেজুরের পাতা দিয়ে পাটি এমনকি জ্বালানি কাজেও ব্যবহার করা হয়। এছাড়া খেজুর গাছ দিয়ে বসতি ঘরের আড়াও তৈরি করা হয়।
খলিষখালীতে খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/