নিজস্ব প্রতিনিধি: কালিগঞ্জে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরধরে রফিকুল ইসলাম (২৬) নামে এক যুবককে এসিডে ঝলসে দিয়েছে প্রতিপক্ষরা। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের গোয়ালপোতা গ্রামে। রফিকুল ইসলাম ওই গ্রামের আব্দুল গফফার মোল্লার ছেলে।
সূত্র জানান, সোমবার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে বাথরুমে যায় রফিকুল ইসলাম। বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর প্রতিপক্ষরা রফিকুলের দেহে এসিড ছুড়ে মারে। এতে তার শরীরের বেশিরভাগ অংশই ঝলসে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়সহ তার পরিবারের সদস্যরা রফিকুল ইসলামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রæত সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়।
সাতক্ষীরা সদর হাসাপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: মোহাম্মদ হাফিজ উল্লাহ জানান,রফিকুল ইসলামের শরীরের ষাট ভাগই এসিডে আক্রান্ত। মুখমন্ডল থেকে পা পর্যন্ত এসিডে ঝলসে গেছে। অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন। রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছি আমরা।
খবর পেয়ে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা: শেখ আবু শাহীন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এসে এসিড আক্রান্ত রফিকুল ইসলামের স-ুচিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন। বর্তমানে এসিড দগ্ধ রফিকুলকে খুলনায় ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে এসিড নিক্ষেপ আইনে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামি রতনপুর গ্রামের আব্দুল গফ্ফারের ছেলে ইউপি সদস্য বাবু গাজী (৪২) ও একই গ্রামের ইমান আলী সরদারের ছেলে সিরাজুল ইসলামকে (৩২) আটক করেছে পুলিশ।
এব্যাপারে এসিড মামলায় আটক বাবু গাজীর মামা রতনপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান জানান, তার বাবা মাষ্টার কওছার আলী দীর্ঘ ৫০ বছর আগে তার নামে ১৯ বিঘা জমি কেনেন। ওই জমি বর্তমানে তার মামাতো ভাই ইউপি সদস্য বাবু গাজীকে দেখা-শোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ওই জমির অর্ধেক অংশ দাবি করে আসছিলেন তার চাচা মাষ্টার আশরাফ আলী। জমি নিতে চাচা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বেশ কিছু কাগজপত্রও তৈরি করে। স¤প্রতি চাচার পক্ষে রফিকুল, শফিকুলসহ চারটি পরিবারের লোকজন ভূমিহীন সেজে তাদের জমির সামনে কিছুটা খাস জমিতে বসবাস শুরু করে।
ভূমিহীনদের সহায়তায় চাচা প্রায় ছয় বিঘা জমি দখলে নেন। জমির দখল সংক্রান্ত বিষয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত তাদের পক্ষে রায় দিলে গত ২ মাস আগে মামা আব্দুল গফফারের ছেলে ইউপি সদস্য বাবু গাজী, ইমান আলী সরদারের ছেলে সিরাজুল ইসলাম, লিয়াকত আলীর ছেলে টুটুল ও শাহীন দখল করতে গেলে তাদের সঙ্গে চাচাত ভাই সাইফুলদের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকে। এ ঘটনায় তাদের পক্ষে ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে চাচা আশরাফ মাষ্টারের ছেলে ছোটন, তাদের ভাগ্নে শরিফুল, শফিকুল ও মুকুলসহ ২১ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় ছোটন, শরিফুল, শফিকুল ও মুকুল দীর্ঘদিন জেল হাজতে থাকে। জেল থেকে বের হয়ে অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ছোটন বাদী হয়ে ১৮ জনের নামে আদালতে একটি মামলা করে। বিজ্ঞ আদালত মামলার তদন্তভার কালিগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দেন। এরপর থেকে চাচা আশরাফ ও তার ছেলেরা জমি দখলে রাখতে নানা ফন্দি আটছিল। এরই অংশ হিসেবে সোমবার দিবাগর রাতে এসডি মারার নাটক সাজানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিবেদকে জানান ঘটনাটি একটি সাজানো ঘটনা। আশরাফ মাষ্টার এবং তার ছেলে একাধিক মামলার আসামী আরিফুর রহমান ওরফে ছোটনের পরিকল্পনা মাফিক এই এসিড নাটক সাজানো হয়েছে। তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে।