Site icon suprovatsatkhira.com

৩০ বর্গফুটের ছোট্ট কুঁড়েঘরে বাস করেন চিরকুমার মুক্তিযোদ্ধা অতুল কৃষ্ণ

রাকিবুল ইসলাম: ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন সফিউল্লাহর অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের গোবিন্দকাটি গ্রামের চির কুমার, অতুল কৃষ্ণ। অথচ স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি তিনি। যোগাযোগ আর তদবিরের অভাবে তার নাম এখনও গেজেট ভুক্ত হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ঢাকাতে থাকলেও বর্তমানে গ্রামের ৩০বর্গফুটের ছোট্ট ঘরে অসুস্থ এই মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অর্থাভাবে এখন চিকিৎসাও করাতে পারছেন না তিনি। মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন সফিউল্লাহর অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন ভোমরা, হাকিমপুর ও যশোর অঞ্চলে।

ভারী অস্ত্র হাতে অংশ নিয়েছিলেন একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে।  অতুল কৃষ্ণ বলেন, নিজের সার্থের জন্য নয় দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। ‘এই ডিসেম্বর মাসটা আসলেই ভালো লাগে। মনে হয় এবার আমার জীবন যুদ্ধের বিজয় হবে। মুক্তিযুদ্ধের পর অস্ত্র জমা দিয়ে আমি এলাকা ছেড়ে ঢাকার শাঁখারি বাজারে একটি স্বর্ণের দোকানে কাজ করতাম। ২০বছর সেখানে কাটিয়েছি। তখন এসব গেজেট, তালিকা বুঝতাম না। সরকারি সুবিধা নিতে অনেক ভুয়া লোক এখন মুক্তিযোদ্ধা সেজে বসে আছে। অথচ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান নেই। আমি অনেক চেষ্টা করেও আমার নাম সরকারি তালিকায় উঠাতে পারিনি। বয়স হয়েছে, আগের মত এখন আর চলতে পারিনে। আমাকে দেখার মত এখন কেউ নেই। আমার এখন আর সম্পদ বলতে ঘর আর চার শতক পৈত্তিক জমি ছাড়া কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, আমারে এই ছোট ঘরটা যদি নির্মাণ করে দেন। অতুল কৃষ্ণ সরকারের সহ যোদ্ধা ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মতিয়ার রহমান কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। অতুল সরকারের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়ে মৃত মোতিয়ার রহমানের ছেলে গোবিন্দকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সহ-সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিলন জানান, অতুল সরকার আমার বাবার সহযোদ্ধা ছিলেন। তিনি বেচে থাকাকালীন তার নাম গেজেট ভুক্ত করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি স্বাধীনতার পর থেকে এলাকায় না থাকায় তার অনেক প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র পাওয়া যায়নি। কয়েক মাস আগে তিনি মারা গেছেন। এখন আমি তার জন্য নতুন করে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তিনি খুব গরিব, ছোট্ট খুঁপড়ি ঘরে থাকেন। বিয়ে না করায় তাকে দেখার তেমন কেউ নেই। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, সরকারিভাবে করা কয়েক দফা তালিকায় বেশিরভাগ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেট ভুক্ত হয়েছে। মুক্তি বার্তা ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ছাড়া গেজেট ভুক্ত হওয়া সম্ভব না। তবে তিনি যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হন, তবে তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখব। সঠিক হলে তার নাম গেজেট ভুক্ত করার জন্য আমরা চেষ্টা করব। সাতক্ষীরা সমাজ সেবা কর্মকর্তা শেখ শহিদুর রহমান জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়া হবে। তার ছোট্ট ঘরটি নির্মাণের জন্যও সহযোগিতার উদ্যোগ নেয়া হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version