মীর খায়রুল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি: খনন হচ্ছে সাঁপমারা খাল। অপার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার আশায় আশাশুনি ও দেবহাটার কৃষি-মৎস্যতে সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি সাঁপমারায় আসবে পূর্ণ যৌবন। আর এতে চলবে সকল প্রকার নৌযান। উৎপাদিত পণ্য পাঠানোর সাথে সাথে এলাকার প্রয়োজনীয় মালামাল সহজে আনা যাবে নদীপথে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রা মৎস্যের সাথে জড়িত। কিন্তু সাম্প্রতিক এই শিল্পে বিপর্যয় ঘটতে শুরু করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের সাদা সোনা খ্যাত চিংড়িতে মড়ক লেগে অর্থনীতিতে ব্যাপক ধস নামে। ভাইরাস নামক ব্যাধি মৎস্য উৎপাদনকে বাঁধাগ্রস্ত করছে। তবে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ বলছেন, ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে মৎস্য ঘেরে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু স্থানীয় খালগুলো পলি জমে তলদেশ উঁচু এবং দখলদারদের কবলে থাকার কারণে প্রয়োজনীয় পানি পান না মাছ চাষিরা। যার ফলে মৎস্য ঘের ও খামারে প্রয়োজনের কম পানির থাকায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। এতে মৎস্য উৎপাদন তুলনামূলক ভাবে হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমান সরকার সবকিছু বিবেচনা করে দেশের প্রতিটি জেলায় ছোট নদী, খাল, জলাশয় পুন:খনন কাজ বাস্তবায়ন করে চলেছেন। তারই অংশ হিসাবে সাতক্ষীরার আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার সংযোগ সাঁপমারা খাল পুন:খনন কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর অধীনে দুইটি প্যাকেজে মোট ১৯ কিলোমিটার খাল পুন:খনন কাজ চলমান। যা ৯০ ফুট চওড়া এবং গভীরতা ৩০ফুট হবে। পটুয়াখালির মেসার্স এম কে কে-এম বি ইউ (জেভি) এবং মেসার্স আবুল কালাম আজাদ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন সহযোগী হিসাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী ইছামতি নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে সাঁপমারা খালটি মিলিত হয়েছে আশাশুনি উপজেলার বদরতলার খালে। শুরু হয়েছে সাঁপমারা খালের খনন কাজ, উচ্ছেদ করা হচ্ছে দু’পাড়ের অবৈধ স্থাপনা। আর এতে দীর্ঘদিনের দখল করে রাখা সরকারি সম্পত্তি ফিরিয়ে না দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একশ্রেণির অবৈধ দখলদাররা। আবার অনেকে অর্থের বিনিময়ে সরকারি জমি অবৈধ পন্থায় নিজেদের নামে কাগজ তৈরি করে নিয়ে চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি কালো টাকার বিনিময়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ম্যানেজ করতে দিনরাত এক করে চলেছেন। তবে, খালের দু’পাড়ে উচ্ছেদের মধ্যে অনেক ভূমিহীন পরিবার তাদের সম্বল হারিয়ে ফেলছেন। সাঁপমারা খাল খনন কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তিতে আশাশুনি ও দেবহাটার বাসিন্দারা। এলাকার প্রভাবশালী দখলদারদের মদদে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান যাতে পন্ড হতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখার আহŸান জানিয়েছেন অনেকেই। অনেকে ঠিকাদারকে ম্যানেজ করে নিজ স্থাপনা রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।
সাঁপমারা খালটি এক সময়ের আলোচিত খাল হলেও বর্তমানে সেটি নালা খালে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত খালে মিশে আছে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত। যুদ্ধের আগে থেকে নদী পথে বিভিন্ন পণ্য আনা নেওয়ার সহজ মাধ্যম ছিল এই খালটি। যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা নদী পথে আসা যাওয়া করত। কিন্তু কালের পরিবর্তনে সেই খালে পলি জমে হারিয়ে গেছে সেই ঐতিহ্য। নাব্যতা হারানোর সাথে সাথে খালটি ভূমিহীনদের দখলের পাশাপাশি দখল করেছে প্রভাবশালী দখলবাজরা। দখল করার পর মনগড়া কিছু অবৈধ পন্থার বৈধ কাগজ বানিয়ে গড়ে তুলেছে ব্যবসা কেন্দ্র, বিলাসবহুল বাড়িসহ অট্টালিকা। আর এসব প্রভাবশালীদের দৌরতেœ পন্ড হতে পারে চলমান কর্মসূচী বলে ভাবনা এলাকাবাসীর। ব্যবসা কেন্দ্র এবং অট্টালিকা বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে এ সকল প্রভাবশালী দখলবাজরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ নেতার কোটি টাকার মায়া জাল শপিং সেন্টার, আবুল ফার্মেসি, দেবপ্রসাদ দেবুর পরিবারের বিলাস বহুল ভবন, দেবপ্রসাদের ফার্মেসি, পারুলিয়া মৎস্য অকশন সেন্টার অফিস, মৎস্য সেডের কিছু অংশ, আফজাল আর্ট সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান খাস জমিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু প্রভাবশালীরা তাদের অর্থের প্রভাবে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। পাউবো’র পারুলিয়া শাখা পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, খালটি খনন কাজ চলাকালে দু’পাশের ১৫ ফিট করে জায়গা রেখে খালের খননকৃত মাটি ফেলতে হবে। সবাইকে আগে থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, নিয়ম মেনে কাজ করা হচ্ছে। পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, খালটি খনন হলে দু উপজেলার অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। সাথে সাথে মৎস্য চাষের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে বলে মনে করি। তবে তিনি ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য অনুরোধ জানান। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, সরকারের নানামুখী উন্নয়নের একটি অংশ খাল খনন। ইছামতি নদী থেকে যাতে সরাসরি পানি দেবহাটা হয়ে আশাশুনির মরিচ্চাপ নদীতে ওঠা নামা করতে পারে সেই লক্ষে খালটি খনন করা হচ্ছে। খনন কাজ শেষ হলে এলাকার জলাবদ্ধতা দুর হবে, সাথে মৎস্য চাষে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। খনন কাজ শুরু হওয়ার আগেই দু’পারের বাসিন্দাদের নোটিস করে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। যারা নিজেরা স্থাপনা সরিয়ে নেননি কাজের সুবিধার্থে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সাঁপমারা খাল পুন:খননে কৃষি-মৎস্য খাতে সম্ভাবনার হাতছানি, অবৈধ স্থাপনা রক্ষায় মরিয়া প্রভাবশালীরা
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/