Site icon suprovatsatkhira.com

ঠিকাদারকে টাকা না দিলেই ভাঙা পড়ছে ঘর

মাজহারুল ইসলাম: আশাশুনি উপজেলার শোভনালীতে কামালকাটি খাল খননের নামে অর্ধ শতাধিক অসহায় পরিবারকে জিম্মি করে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে। ১ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে কামালকাটি খালের (শালখালী নদী) পার্শ্ববর্তী বেশিরভাগ পরিবারের থেকে। যে পরিবারগুলো টাকা দিতে পারেনি, ভাঙা পড়ছে তাদের ঘর, বাড়ির উঠানে ফেলা হচ্ছে খাল খননের মাটি। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আমরা খেটে খাওয়া অশিক্ষিত সাধারণ জনগণ হওয়ায় ঠিকাদার আমাদের চাপে ফেলে কৌশলে টাকা আদায় করছেন। ভুক্তভোগী গৃহিণী জয়ন্তি জানান, ‘যেদিন খাল খননের কাজ শুরু করে তার আগের রাতে ঠিকাদারের লোকজন এসে বলে খাল খননের জন্য আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হবে। আমরা তাদের কাছে তিন দিনের সময় চেয়েছিলাম সময় না দিয়ে আমার পাকা ঘর ভেঙে দেয় তারা। এ সময় স্কেভেটরের ড্রাইভার বলেন, ঠিকাদারকে ২০ হাজার টাকা দিলে আর ঘর ভাঙা লাগতো না। সেই মুহ‚র্তে আমরা টাকা দিতে না পারায় পরদিন সকালে আমাদের ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ার আগে স্কেভেটর দিয়ে আমার ঘর ভেঙে দেয়। এখন আমি শিশু সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় বসবাস করছি। তিনি আরও জানান, আমার রেকর্ডীয় জায়গায় নির্মিত ঘরও ভেঙে দিয়েছে খাল খননের নামে। এমনকি ঠিকাদারের লোকজন খালের সীমানা দিয়েই খনন করার কথা বলে স্কেভেটর নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের নিজস্ব জায়গার ঘর ভেঙে সেখান দিয়ে স্কেভেটর নিয়ে যায় তারা’। আরেক ভুক্তভোগী কৃষ্ণপদ বলেন, ‘আমার ঘর না ভাঙার জন্য স্কেভেটরের চালকের মাধ্যমে আমি অতি কষ্টার্জিত ১ হাজার টাকা দিয়েছি। তারপরও আমার ঘর ভেঙে দিয়েছে তারা। ঘর ভেঙে দিয়ে বলে ১ হাজার টাকায় ঘর বাঁচানো যায় না। তিনি আরও জানান, বাড়ির সীমানায় আমার যে গাছ ছিল তা ঠিকাদারের লোকজন কেটে নিয়েছে। আমি বাধা দিতে গেলে স্কেভেটর দিয়ে গাছ কেটে একটি গাছ আমার শরীরের উপর ফেলে। এতে আমার শরীরে কয়েক জায়গায় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। আমি চিকিৎসা নিয়ে কোন রকমে চলাফেরা করছি কিন্তু ঠিকাদারকে টাকা না দেয়ায় আমার ঘর বাঁচাতে পারিনি। এছাড়া আমার ঘরের দেওয়াল ভেঙে বারান্দা ও ঘরের ভিতরে ফেলা হয়েছে খাল খননের মাটি’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, তাদের থেকেও ঘর বাঁচাতে টাকা চেয়েছিল ঠিকাদার। তাদের কেউ কেউ ঘর বাঁচাতে ঠিকাদারকে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত টাকা দিয়েছে। তারা আরও জানান, আমরা টাকা না দেওয়ায় আমাদের ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন রান্না ঘর, গোয়াল ঘরে গরু ছাগলের সাথে ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু যারা ঠিকাদারকে টাকা দিয়েছে তাদের ঘর খালের ভিতরে থাকলেও সেগুলো ভাঙা হয়নি। আমরা অসহায় হয়ে পড়ে আছি, আমাদের কেউ দেখার নেই। যার কাছে যাই সে আশ্বাস দেয় কিন্তু কোন কাজ হয় না। এর আগে অনেকে এসে তথ্য নিয়ে চলে যায়, তারপর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, কামালকাটি বলফিল্ড রেখে একটু সামনে থেকে বেশ কয়েকটি পাকা ভবন খালের ভিতরে থাকলেও তা ভাঙা হয়নি। খালের মধ্যে থাকা কয়েকটি বাড়ির মধ্যে ডা. মনিন্দ্র’র পাকা ভবনটিও আছে। এ বিষয়ে ডা. মনিন্দ্র’র স্ত্রী জানান, ‘আমাদের ঘর কিছুটা খালের মধ্যে আছে এবং রেকর্ডীয় জায়গায়ও আছে। খালের ভিতরে থাকা অংশে ঘরবাড়ি না ভাঙার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি কিছু জানি না। আমার ছেলেরা ঠিকাদারের সাথে কথা বলেছে’। খালের ভিতরে থাকা আরও একটি ভবনের মালিক মফেজ উদ্দীন মফে’কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বিল্ডিং না ভাঙার বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে ঠিকাদার সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমি টাকা নিয়েছি অন্য কারণে। তবে কারণটা আপনাদের বলতে পারছি না। আপনাদের যা মন চায় তাই লেখেন’। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী গৃহহীন পরিবারের সদস্যরা।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version