Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বাড়িতে অগ্নি সংযোগের অভিযোগ

মাজহারুল ইসলাম: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুরে জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মারপিট করে বাড়িতে অগ্নি সংযোগের অভিযোগ উঠেছে।

গত বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাতে ইউনিয়নের পূর্ব দহাকুলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগকারী ওই এলাকার আজিবর রহমানের স্ত্রী ময়না খাতুন জানান, দীর্ঘদিন থেকে আমার চাচাতো ভাইদের সাথে শরিকী জায়গা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। এ নিয়ে আমার আর এক চাচাতো ভাই রমজান আলী বাদি হয়ে সাতক্ষীরা সিভিল কোর্টে মামলা করে। মামলা নং ১১/১৮ এবং সে মামলা কোর্টে চলমান আছে।

তাছাড়া এ জায়গা জমির বিষয়ে কয়েকবার সালিশ মিমাংসা করেন ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান। সালিশি মিমাংসায় চেয়ারম্যান মেম্বর ও এলাকারন গণ্যমান্য ব্যক্তিরা থেকে দলিল অনুযায়ী যাদের যা প্রাপ্য সেই অনুপাতে ভাগ করে দেয়।

এরপর আমি ও আমার ভাই আমজেদ হোসেন, ফারুক হোসেন, চাচাতো ভাই কালাম আলী আমাদের অংশের জমিতে চাষ করার জন্য যেতে চাইলে খলিল, হাফিজুল ও তাদের লোকজন জমিতে যেতে বাধা দেয় এবং বলে আমরা জমিতে গেলে আমাদের খুন জখম করে মেরে ফেলবে। বাড়ি উচ্ছেদ করে তাড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। তারই জের ধরে গত বৃহস্পতিবার সকালে আমার ভাইদের জমি থেকে মনির, আশরাফুল ও ছমির বাশ কাটতে আসে। আমি বাশ কাটাতে নিষেধ করলে ছমির বলে, আমিতো জানিনা যে এটা তোমাদের বাশ বাগান। যে গুলো কাটা হয়েছে এগুলো নিয়ে চলে যাচ্ছি। এই বলে পুণারায় বাগান থেকে বাশ কাটতে থাকে তারা।

আমার ভাই ফারুক অন্যের ক্ষেতে কাজ শেষ করে দুপুরে বাড়ি এসে দেখে তারা বাশ কাটছে। ফারুক এ সময় বলে যে এই জমি নিয়ে মামলা চলছে তোমরা বাশ কাটছো কেন? তথখন তারা ফারুককে মারতে উদ্বত হয়। তারপর আমার ভাই ভাটার মোড়ে চলে যায় আমার স্বামী আজিবরের কাছে। তিনি আরও জানান, আমার ভাই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর খলিল, আশরাফুল, তাজিম, বিএনপির নাশকতা মামলার আসামি ইনসাফ, কাদের, মিজারসহ ১৫-২০ জন আমাদের বাড়িতে এসে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বলে এবং অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে। তারপর ওইদিন সন্ধ্যায় ইনসাফ, সিরাজুল, মিজার, কাদেরসহ ১০-১৫জন ব্যাক্তি আমার স্বামী ও ভাইকে ভাটার মোড়ে পেয়ে হঠাৎ মারপিট শুরু করে। এ সময় আমার স্বামী আজিবরের মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে তারা। আমি খবর পেয়ে মোড়ে গিয়ে শুনি স্থানীয়রা আমার স্বামী ও ভাইকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এরপর আমি বাড়ি ফিরে যায় চিকিৎসা খরচের জন্য টাকা আনতে। এ সময় গিয়ে দেখি খলিলসহ কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তি আমার ভাবি তানজিলাকে মারপিট করছে। এ সময় খলিল তানজিলার মাথায় দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে এবং আমার ঘরে আমার সামনেই আগুন জালিয়ে দেয়। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকেও মারপিট করে। এমনকি আমার শিশু ভাইজি রিক্তা খাতুন (১২) তাকেও মারপিট করে খলিল।

ময়না খাতুন আরও জানান, এ ঘটনায় আমরা মামলা করতে গেলে এক পুলিশ বলে এখন ওসি সাহেব নেই পরে আসতে হবে। তারপর থেকে ইনসাফ, খলিল, হাফিজুল, আশরাফুল, তাজিম, মিজার ও কাদের বিভিন্নভাবে আমাদের হুমকি দিয়ে চলেছে। ভুক্তভোগী ফারুক হোসেন জানান, এই জমি নিয়ে বিরোধের কারণে ইনসাফ ও মিজার ষড়যন্ত্র করে আমাকে বিভিন্ন মামলায় নাম জড়িয়ে হয়রানি করছে। এ অঞ্চলে যে কোন ঝামেলা হলে সেই মামলায় আমাকে আসামি করা হয়। এলাকার একটা মারামারি মামলায় আমাকে প্রধান আসামি করা হয়। অথচ আমি তখন বাড়িতে থাকতাম না ভাটায় কাজ করতাম। বিভিন্ন ভাবে তারা আমাকে এবং আমার পরিবারকে হয়রানি ও ক্ষতি করে চলেছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত খলিলকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি ব্যস্ত আছি পরে আপনার কাছে ফোন দিয়ে ঘটনা জানাবো। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, আজিবরের নামে একাধিক ডাকাতি ও মাদক মামলা আছে। তারা বাড়িতে মাদকের ব্যবসা করে এমন অনেক অভিযোগ পেয়েছি। মারামারি অগ্নিসংযোগ হয়েছে শুনেছি কিন্তু কারা আসল অপরাধী তা বলতে পারবো না। জমি নিয়ে বিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমি নিয়ে বিরোধ আছে জানি তবে এ নিয়ে আমি কখনো সালিশ বিচার করিনি।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান জানান, জমি নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ চলছিল। তাছাড়া জায়গা জমি নিয়ে কোর্ট তাদের মামলা চলমান ছিল। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় উভয়পক্ষ জমি নিয়ে গোলোযোগ সৃষ্টি করতো। তারপর ইউনিয়ন পরিষদে এ নিয়ে চেয়ারম্যানের সামনে একবার মিমাংসার জন্য সালিশি বৈঠক করে আমার উপর মিমাংসা দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। তারপর আমি মিমাংসা করতে ব্যার্থ হই। পুণারায় আবার প্রাইমারি স্কুলে বসাবসির জন্য দিন ধার্য্য করা হয়। সেদিন ময়না বা তার পরিবারের কেউ সালিশে হাজির হয়নি। তাছাড়া আজিবারের বাসায় বিভিন্ন সময়ে শহরের লোকজন আসে। মাদকের আসর বসে বলে অনেকে অভিযোগ দিয়েছে। এমন কি! একজন গ্রাম পুলিশ আছে সে ওই মাদক সেবনের সাথে জড়িত। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে গেলে ওই গ্রাম পুলিশ আগে থেকে আজিবরকে সতর্ক করে দেয়। মারপিট অগ্নি সংযোগ হয়েছে। উভয়পক্ষের লোকজন আহত হয়ে হাসপাতালে আছে আবার কেউ কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসছে।

এমতাবস্থায় গৃহহীন ময়না ও তার পরিবার এ ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রকৃত দোষীদের শাস্তি ও ন্যায় বিচার চেয়ে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version