অক্টোবর ১৮, ২০১৯
বিভিন্ন কৌশলে চলছে বাল্য বিবাহ
জি.এম আজিজুল ইসলাম: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিভিন্ন কৌশলে অহরহ চলছে বাল্য বিবাহ। বাল্য বিবাহের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সদ্য প্রাথমিকের গুন্ডি পেরোনো অনেক ছাত্রী। এসব ছাত্রীদের মতামতকে উপেক্ষা করে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে বিয়ে করতে। আর্থিক সংকট ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে বাধ্য হয়ে মেয়েদেরকে অল্প বয়সে বিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিভাবকদের দাবি। অভিভাবকরা বলছেন, ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ আর সমস্যার প্রতিকার পেলেও সম্মান আর লোকলজ্জার কোন প্রতিকার নেই। তাই অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে চাই’। সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আপনার, লেখাপড়ার খরচ দেবে সরকার। এছাড়া বাল্য বিবাহ আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হলেও থেমে নেই বাল্য বিবাহ। সরকারী সুবিধা ও আইন লঙ্ঘন করে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে তাদের জীবনকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এসব অভিভাবকরা। কোনোমতে প্রাথমিক শিক্ষা পার করে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়ে এক থেকে দুই বছর যেতে না যেতেই গোপনে বিয়ে হচ্ছে এসব ছাত্রীদের। ছেলেদের বয়স ২১ বছর হওয়ার আগে বিয়ে দিচ্ছেন অনেক অভিভাবকরা। অভিভাবকরা গোপনে এলাকার কাজী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে নিচ্ছেন। এলাকার কাজী না পড়ালে তারা সাতক্ষীরার বিভিন্ন কাজী অফিস ও নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে দিয়ে ছেলে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসছেন। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। সদর উপজেলার ফিংড়ী, ব্রহ্মরাজপুর, ধুলিহর, আলিপুর, বল্লী, আগরদাড়ি, শিবপুর, লাবসা, ভোমরাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বাল্য বিবাহ এমনটাই বলছেন সচেতন মহল। এসব বাল্য বিবাহের হাত থেকে ছেলেমেয়েকে রক্ষা করার জন্য সমাজের সচেতন মহল ও সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ফিংড়ী ইউনিয়নের মির্জাপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এটিআরএম হুমায়ূন কবির রানা সুপ্রভাত সাতক্ষীরা কে জানান, সমাজে এখনও নারীরা সামাজিক সহিংসতা, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং ও যৌন হয়রানির শিকার হয়। বিভিন্ন অভিযোগ আমাদের কাছে আসে তবে সেটি আগের তুলনায় অনেক হ্রাস পেয়েছে সরকারি-বেসরকারি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাগুলোর সচেতনতামূলক কর্মসূচির জন্য। এ বিষয়ে ভালুকা চাঁদপুর মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. লিয়াকত আলী জানান, বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ক্যান্সার। বাল্য বিবাহের ফলে মেয়েদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোন রকম প্রাথমিক শিক্ষা হলেই তাদের অভিভাবকরা ভাল পাত্র পেলেই বিয়ের আয়োজন করছে। এতে করে শতকরা ৮৫ ভাগ সংসারে বিচ্ছেদ হচ্ছে। এলাকার কাজিরা বিয়ে না পড়ালে অভিভাবকরা কোর্টে যেয়ে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। একটি মেয়ের যখন খেলার বয়স তখন তার কাঁধে তুলে দিচ্ছে সংসারে বোঝা। এতে করে তার সন্তান হওয়ার আগেই বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে ফিংড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, প্রশাসনের কড়া নির্দেশ বাল্যবিবাহকে লাল কার্ড প্রতিপাদ্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অভিভাবকরা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে অল্প বয়সের ছেলে-মেয়েদের জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আমরা কোন রকম খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে বন্ধ করে দেই এবং প্রশাসনকে খবর দেই। তবে নোটারি পাবলিকে বিয়ে বন্ধ না হলে এটা কখনও প্রতিহত করা সম্ভব না। 8,456,212 total views, 3,808 views today |
|
|
|