নাজমুল হক, পাটকেলঘাটা প্রতিনিধি: পাটকেলঘাটায় মৎস্য ঘেরের ভেড়িতে মাচান সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন ঘের চাষিরা। পাটকেলঘাটার শাকদাহ, তৈলক‚পি, বাইগুনি, মিঠাবাড়ি, নগরঘাটা, আসাননগর, ভৈরবনগর, কাপাশডাঙ্গা, বড়বিলা, সরুলিয়া, সারসাসহ আশে পাশে মাছের ঘেরগুলোতে মাছ চাষের পাশাপাশি সবজি চাষ করে ঘের মালিকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। এসব এলাকার ঘের মালিকরা ঘেরের ভেড়ীতে কুমড়া, লাউ, ঝিঙে, বরবটি, উচ্ছে, ঢ্যাঁড়শ, খিরায়, পুঁইশাক, কুশি, মানকচুসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করে দেশের কাচামালের ঘাটতি অনেকটা পূরণ করছে বলে মনে করেন এসব চাষিরা। ফলে এক দিকে যেমন তারা নিজেরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে তেমনি দেশের সবজির চাহিদা মেটানোর ফলে সবুজ বিপ্লব ঘটাচ্ছে এ চাষিরা। এসব সবজি বিক্রি করার জন্য এখন আর পরিবহণে করে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না কৃষকদের। এক শ্রেণির কাচামালের ব্যবসায়ীরা ঘেরে ঘেরে গিয়ে সবজি ক্রয় করে বাজারজাত করছে। এতে ঘের মালিকদের সময় ও পরিবহণ খরচ যেমন হ্রাস পাচ্ছে তেমনি কিছু বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। পাটকেলঘাটার ভৈরবনগর মোড়ে প্রতিদিন আড়তদাররা এসে পিকআপে করে কম মূল্যে সবজি ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছে। মিঠাবাড়ী গ্রামের আড়তদার নুরুল ইসলাম গাজী, মিজানুর রহমান ও আমজাদ হোসেন জানান, প্রতিদিন তারা ৪০-৫০ জন ঘের চাষিদের থেকে দেড়-২শ’ ক্যারেট সবজি ক্রয় করেন। যার মধ্যে ৭-৮শ’ পিচ কুমড়ার জালি, ৮-৯শ’ পিচ লাউ ২-৩শ’ কেজি শসা, ২-৩শ’ কেজি করল্লা, দেড় থেকে ২শ’ কেজি ঝিঙে, ৩-৪শ কেজি ঢ্যাঁড়শ ক্রয় করেন। তারা আরও জানান, এর মধ্যে কিছু কিছু স্থানীয় মৌলভী বাজারে ও অধিকাংশ দেশের পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ও চট্টগ্রামে বাজারজাত করি। চাষিদের থেকে লাউ প্রতি ২০-২২ টাকা ক্রয় করে ৩০-৩৫ টাকা বিক্রি করি। শসা কেজি প্রতি ১৬-১৮ টাকা ক্রয় করে ২৫-৩০ টাকা, বরবটি ২০-২৫ টাকায় ক্রয় করে ৩০-৩৫ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ২০-২২ টাকা কিনে ৩০-৩২ টাকা, কুমড়ার জালি ১৫-২০ টাকায় কিনে ৩০-৩২ টাকা, ঝিঙে ১০-১৫ টাকায় কিনে ২০-২৫ টাকায়, করল্লা/উচ্ছে ২০-২৫ টাকায় ক্রয় করে ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি করি। পাটকেলঘাটা শাকদাহ গ্রামের মাছ চাষি মোতালেব সরদার জানান, শাকদাহ বিলে ৩৫ বিঘার একটি ঘেরে বিভিন্ন প্রকার সাদা মাছ চাষ করেন তিনি। গত কয়েক বছর ওই ঘেরে মাছের পাশাপাশি ঘেরের ভেড়িতে নানা ধরনের সবজি চাষ করছেন। ফলে বছরে লক্ষাধিক টাকা সবজি বিক্রি হয়। এ বছর সবজি চাষ করার জন্য বাঁশ, খুঁটি, সুতা ও পারিশ্রমিক বাবদ ৬০ হাজার টাকা খরচ করে গত মাসেই আসল টাকা উঠে গিয়েছে। এ মৌসুমে সবজি বিক্রি করে কম পক্ষে ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা লাভ পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। তিনি আরও বলেন, তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ঘেরের ভেড়িতে কুল চাষ করে ঘের মালিকরা লক্ষ-লক্ষ টাকা আয় করছে বলেও তিনি জানান। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় ঘেরে মাছ চাষে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক ঘেরে মাছে ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে অধিকাংশ ঘের মালিকরা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু ঘেরের ভেড়ীতে সবজি চাষ করায় কিছুটা লাভের মুখ দেখছে ঘের মালিকরা। এ বিষয়ে কথা হয় মিঠবাড়ী গ্রামের ঘের চাষি আবুল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন মাছ চাষ করে মাছে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় লাভবান হতে না পারলেও উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ঘেরের ভেড়ীতে সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখছি। এক বিঘা জমির মৎস্য ঘেরের ভেড়ীতে সবজি চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ৩ হাজার টাকা। কিন্তু শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন এই ৩ মাসে ১ বিঘা ঘেরের ভেড়ীতে সবজি চাষ করে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করা যায়। এ বিষয়ে তালা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস্য ঘেরে সবজি চাষ করে চাষিরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ঘেরের লিজের টাকাও পরিশোধ করতে পারছে। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করতে তেমন বেশি খরচ না হলেও এ এলাকার চাষিরা কৃষি বিপ্লবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
পাটকেলঘাটায় ঘেরের ভেড়িতে সবজি চাষ
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/