খুলনা প্রতিনিধি: খুলনার ভৈরব ও রূপসা তীরের ১ হাজার ১শ’ ৫৪জন অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ প্রক্রিয়া হঠাৎ করে থমকে গেছে। সম্প্রতি উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও রহস্যজনক কারণে তা এক দিনেই থেমে গেছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে জনমনে। তবে বিআইডবিøউটিএ কর্তৃপক্ষ বলছেন, ময়ূর নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরই পুনরায় রূপসা ও ভৈরবের দখলদারদের উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে। এর আগে খুলনার ভৈরব ও রূপসা নদীর দু’তীরে অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদের লক্ষে জেলা প্রশাসন ও বিআইডাবিøউটিএ যৌথভাবে জরিপ হয়। জরিপে উল্লেখিত দু’ নদীর তীরে ১ হাজার ১শ’ ৫৪ জন অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করা হয়। জাতীয় সংসদ ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকারি ও বিরোধী দলের প্রার্থীদের প্রধান ইস্যু ছিল খুলনা নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন। উচ্চ আদালতের আদেশের পরি প্রেক্ষিতে বন্দর নগরীর ভৈরব ও রূপসা নদীর তীরের অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করতে ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসন ও বিআইডবিøউটিএ’র যৌথ উদ্যোগে এসব নদীর তীরের লবণচরা, হেলাতলা, গোয়ালপাড়া, পাবলা, দৌলতপুর, রাজাপুর, টুটপাড়া ও বানিয়াখামার মৌজার জরিপ কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল জরিপ কাজ শেষ হয়। অবৈধ স্থাপনার মধ্যে রয়েছে- জেটি, গুদাম ঘর, স’মিল, পাকা-সেমিপাকা ভবন, বসতবাড়ি, ইট-বালি ও কয়লাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জরিপের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, রূপসা উপজেলার যুগিহাটি মৌজার কেবিআই ব্রিকস ও এনবিআই ব্রিকস ভৈরব নদের ৩০ ফুট এলাকা অবৈধভাবে দখল করে মাটি ভরাট করেছে। ওয়াপদার তীরের মাটি কেটে নিচু স্থান ভরাট করছে। জাতীয় নদী কমিশন অবৈধ দখলদার হিসেবে উল্লিখিত ইটভাটা দুটিকে চিহ্নিত করেছে। ইটের ভাটা দুটি নাম পরিবর্তন করে উচ্ছেদ অভিযান এড়ানোর অপচেষ্টা করছে। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্টদের স্ব-উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিস দেওয়া হয়েছে। জরিপ কমিটির আহŸায়ক, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশিদ জানান, জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের তালিকাও প্রস্তুত হয়েছে। এখন যে কোনো সময় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হতে পারে। বিআইডবিøটিএ খুলনার বন্দর ও পরিবহণ উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভৈরব ও রূপসা তীরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেছেন, ময়ূর নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান থাকায় ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট জনবল সেখানে কাজ করছে। এ কারণে ময়ূর নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরই পুনরায় রূপসা ও ভৈরবের দখলদারদের উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি মাথাভাঙা, দশগেট ও আলুতলা বাঁধ এলাকায় রূপসা নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখানে বালু উত্তোলনের জন্য নদী দখল করে অবৈধভাবে নির্মিত বাঁশের জেটিসহ কয়েকটি স্থাপনা অপসারণ করা হয়। কিন্তু পরে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করেই অভিযান স্থগিত রাখা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে কোনো সময় পুনরায় অভিযান শুরু হবে। তবে, অবৈধ দখলদাররা স্ব-উদ্যোগে স্থাপনা সরিয়ে না নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, জরিপে চিহ্নিত বিআইডাবিøউটিএ’র রেকর্ড অনুযায়ী ভৈরব ও রূপসা নদীর তীরের উল্লেখযোগ্য অবৈধ দখলদাররা হচ্ছে- মমিন ঘাট এলাকার সিরাজুল ইসলাম, সুন্দরবন ট্রেডার্স, অমিত বিশ্বাস, গৌতম সাহা, যমুনা ট্রেডার্স, ইন্তাজ বাণিজ্য ভান্ডার, সুর্কিঘাট এলাকার রুহুল আমিন, মো. সেলিম, আব্দুল খালেক, মামুন হোসেন, আজিজুর রহমান সোহাগ, আব্দুস সালাম মালিক, ফিরোজ শেখ, রফিকুল ইসলাম, মীর মাহাবুব, সাজ্জাদ হোসেন, নিত্য গোপাল কংস বণিক, নিউ কংস বণিক ভান্ডার, নহিদ আহমেদ, সূতাপট্টির কামরুজ্জামান টুকু, গাজী এনামেল, সুভাস চন্দ্র দাস, জগদীশ চন্দ্র দাস, বিনয় কৃষ্ণ সাহা, মা মনি হার্ডওয়্যার, জয় দুর্গা বস্ত্রালয়, তাপস কুমার সাহা, জনকল্যাণ বস্ত্রালয়, দুলাল চন্দ্র সাহা, কবিতা হার্ডওয়্যার, তারা হার্ডওয়্যার, ভৈরব হোসিয়ারি স্টোর, গোপালগঞ্জ হার্ডওয়্যার, দুর্গা রানী পাল, বিসমিল্লাহ অ্যালুমিনিয়াম, হোসেন ট্রেডিং, আবুল হোসেন, লুনা ট্রেডিং, খুলনা আয়রন স্টোর, রূপালী হার্ডওয়্যার, আমিন হার্ডওয়্যার, লিজা ট্রেডিং, বিক্রমপুর অ্যালুমিনিয়াম, সততা অ্যালুমিনিয়াম স্টোর, সুলভ হার্ডওয়্যার, খুলনা ট্রেডিং, জনতা হার্ডওয়্যার, প্লাস্টিক কর্নার, এনায়েত স্টোর, শহিদ অ্যান্ড সন্স, জে কে স্টোর, খান জাহান আলী হার্ডওয়্যার, সুমিত্রা হার্ডওয়্যার, ইউনাইটেড হার্ডওয়্যার, বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার, ন্যাশনাল হার্ডওয়্যার, মদিনা হার্ডওয়্যার, ফিরোজ স্টোর, খান হার্ডওয়্যার, মক্কা হার্ডওয়্যার, বিসমিল্লাহ স্টোর, বাগদাদ হার্ডওয়্যার, মেহেদী বাণিজ্য ভান্ডার, আশা বাণিজ্য ভান্ডার, সবুজ বাণিজ্য ভান্ডার, হাওলাদার ট্রেডিং, মোহাম্মাদীয়া ভান্ডার, বাগদাদ ট্রেডিং, সোহেল ট্রেডার্স-১, সোহেল ট্রেডার্স-২, গাউছিয়া ভান্ডার, নিউ আব্দুল্লাহ ভান্ডার, লোকনাথ ভান্ডার, মা মনি ট্রেডার্স, সুমাইয়া ট্রেডার্স, এ কে ট্রেডার্স, বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স, মদিনা ট্রেডিং, সুমন বাণিজ্য ভান্ডার ও বাংলাদেশ ভান্ডার। এছাড়া অবৈধ দখলদারের তালিকায় মোট ১ হাজার ১৫৪ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
হঠাৎ থেমে গেছে খুলনার ভৈরব ও রূপসা তীরের দখলদার উচ্ছেদ প্রক্রিয়া
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/