গাজী আল ইমরান, শ্যামনগর প্রতিনিধি: শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের বাসিন্দারা যেন জলাবদ্ধতার অভিশাপে নিমজ্জিত। খালে নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ আর অবৈধ দখলকে দায়ী করছে জলাবদ্ধ জনগণ। স্থানীয়রা বলছেন অধিকাংশ খাল রয়েছে ভূমি দখলদারদের দখলে। উপজেলাব্যাপী পানি নিষ্কাশন, মিষ্টি পানির আধার তৈরি এবং স্থানীয় মাছ সংরক্ষণে যে খালগুলো একসময় মানুষের জন্য পাথেয় ছিল সেগুলো আজ অভিশাপে পরিণত করেছে কিছু ভূমি দখলবাজরা। দখলদার চক্রের জবরদখল এবং নেট-পাটায় জর্জরিত হয়ে উঠেছে উপজেলার সরকারি খাল গুলো। এতে করে একদিকে প্রতিনিয়ত চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে উপজেলা বিভিন্ন
ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, অন্য দিকে পানির প্রবাহ না থাকায় তলদেশ ভরাট হওয়ার সাথে সাথে নব্যতা হারিয়ে গতিহীন হয়ে পড়ছে খাল গুলো। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ায় বর্ষার মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই উপজেলার নিম্নাঞ্চল গুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টির কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে স্ব স্ব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সাধারণ মানুষ। উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নে এর স্ব চিত্র ফুটে উঠেছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরান পুর বাজার হতে কাঁকরঘাটা, মেন্দি নগর, শিবচন্দ্রপুর, গোনা ও পরানপুর এর কোল ঘেঁষে চলে গেছে হাতকাটা খাল। যা দুরমুজখালি স্লুইসগেট দিয়ে কালিন্দী নদীতে মিশেছে। অতীতে এই খালটি জলাবদ্ধতা নিরসনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে মানুষের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ থাকলেও কালের পরিক্রমায় কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে খালের বুকে নেট পাটা দেওয়ায় খালটি তার পুরোনো যৌবন হারিয়ে ফেলেছে। এক সময় কালিন্দী নদীর সাথে মিশে থাকা এই খালে জোয়ার ভাটার সম্পর্ক থাকলেও তা আজ আর দেখা যায় না। এদিকে বর্ষার পানিতে তলিয়ে গেলেও একটি মহল এই খাল থেকে নেট পাটা অপসারণ না করায় জলাবদ্ধতায় তলিয়ে যাচ্ছে পুরো এলাকা। পরান পুর বাজার হতে কাঁকরঘাটা, মেন্দি নগর, শিবচন্দ্রপুর, গোনা এলাকার মানুষ আক্ষেপ করে বলেন, আমরা জলাবদ্ধতার অভিশাপে ভুগছি। আর কিছু মানুষ নিজেরা ভালো থাকতে নেট পাটা বসিয়ে খালে মাছ চাষ করে রাজত্ব করছে। আমরা আজ অসহায়। রবিউল ইসলাম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছি, কাজ হয়নি। চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছি, দেখি কবে এই জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাই। এছাড়া পশ্চিম কৈখালী বড় মৌ কাটলা, ছোট মৌ কাটলা, সাহেবখালী ৭৮ বিলের খাল, পূর্বকৈখালী বারখাল, মির্জাপুর খাল, জয়াখালী পাশমামুন্দি খাল, শৈলখালী শেরের খাল, গঙ্গার মোড় ঘোলেরখাল, সহ বিভিন্ন সরকারি খালগুলো এলাকার প্রভাবশালীরা সুকৌশলে জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র করে ও গায়ের জোরে দখল করে একের পর এক মাটি ভরাট সহ ইমারত নির্মাণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি কেউ কেউ আবার নেট পাটাসহ বাধ সৃষ্টি করে মৎস্য ঘেরের আওতায় এনে দখলের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। জলোচ্ছাস ও বন্যার কবল হতে অবহেলিত ইউনিয়ন গুলো টিকিয়ে রাখতে বর্তমান সময়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি খালগুলো দখলমুক্ত করার অভিযান পরিচালনা করা হলেও দূমিদস্যরা কোন কর্ণপাত না করে প্রতিনিয়ত তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে ভুমিদস্যদের এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় অত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসক এম মোস্তফা কামাল ও শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী। খাল দখলের বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাহিদ হাসান বলেন, আমি এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয় সকল খালের নেট পাটা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমি সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ক্রমান্বয়ে সকল খাল দখলমুক্ত করা হবে।