Site icon suprovatsatkhira.com

চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে এগিয়ে দেবহাটার ১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক : তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ

এমএ মামুন, দেবহাটা:
তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। সাধারণ মানুষের কাক্সিক্ষত সেবা দেওয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের কাজ। চিকিৎসা সেবা প্রান্তিক মানুষের দৌড় গোড়ায় পৌঁছে দিতে দেশজুড়ে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছে সরকার। ইতিপূর্বে কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতে দেখা গিয়েছিল নানান অভিযোগ। বেশিরভাগ ক্লিনিকেই মিলতে দেখা যায়নি কাক্সিক্ষত সেবা। কোথাও কোথাও চিকিৎসকের দেখা মিললেও, ঔষধ বিক্রির অভিযোগও পাওয়া গিয়েছে। তাছাড়া ক্লিনিকের ঔষধ বাড়িতে নিয়ে গ্রাম্য ডাক্তারের ভূমিকায় কাজ করতেও দেখা গিয়েছে। ক্লিনিকগুলোতে বার মাসেই ওষুধ সংকট। ছোট-খাটো রোগের চিকিৎসা নিতে এসে প্রায়ই ওষুধ সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অনেক ক্লিনিকের ভবন দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। টিউবওয়েল নষ্ট, বাথরুম ব্যবহারে অনুপযোগী। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে অনেক ক্লিনিকে। সব মিলিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। তাছাড়া নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিকগুলো খোলা থাকার কথা থাকলেও মানা হত না এই নিয়ম। মাঝে মধ্যেই বন্ধ থাকতো ক্লিনিক। তখন আশেপাশের ওষুধের দোকানই রোগীদের একমাত্র ভরসা।
বর্তমানে দেবহাটার কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে সরেজমিন ঘুরে ও কর্মরত কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পূর্বের তুলনায় চিকিৎসার মান সন্তোষ জনক। গ্রাম পর্যায়ের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে তারা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পূর্বের তুলনায় সফলতা অর্জন করেছে। ইতিপূর্বে ওষুধ সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রায় সব ধরনের ঔষধ সহ প্রাথমিক ভাবে সকল চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তাদের সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে, মহিলাদের প্রসব-পূর্ব (গর্ভকালীন) সেবা প্রদান, সদ্য প্রসূতি মা (৬ সপ্তাহের মধ্যে) এবং শিশুদের (বিশেষত মারাত্মক পুষ্টিহীন, দীর্ঘ মেয়াদি ডায়রিয়া এবং হামে আক্রান্ত) ভিটামিন এ ক্যাপসুল প্রদান, মহিলা ও কিশোরীদের রক্তস্বল্পতা শনাক্ত করা, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ প্রদান, ইপিআই সিডিউল অনুযায়ী শিশুদের প্রতিষেধক (য²া, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, পোলিও ধনুষ্টংকার, হাম, হেপাটাইটিস-বি এবং ১৫-৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের ধনুষ্টংকার প্রতিষেধক টিকাদান, এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের ৬ মাস পরপর প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো এবং রাত কানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের খুঁজে বের করে চিকিৎসা প্রদান, ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগীকে খাওয়ার স্যালাইন ও শিশুদের ক্ষেত্রে জিংক বড়ি, সদ্য বিবাহিত ও অন্তঃসত্তা মহিলাদের নিবন্ধন করণ, সম্ভাব্য প্রসব তারিখ সমাগত হলে যোগাযোগ করা, গর্ভবর্তী মা ও শিশুর ওজন মাপা ইত্যাদি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দেবহাটা উপজেলায় ১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। যার মধ্যে কুলিয়া ইউনিয়নের শশাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক, সুবর্ণাবাদ কমিউনিটি ক্লিনিক, টিকেট কমিউনিটি ক্লিনিক, পারুলিয়া ইউনিয়নের কোমরপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, নাজিরের ঘের কমিউনিটি ক্লিনিক, জেলিয়াপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক, চালতেতলা কমিউনিটি ক্লিনিক, খড়িয়াডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক, সখিপুর ইউনিয়নের পাঁচপোতা কমিউনিটি ক্লিনিক, ঈদগাহ মডেল কমিউনিটি ক্লিনিক, নওয়াপাড়া ইউনিয়নের নাংলা কমিউনিটি ক্লিনিক, আটশত বিঘা কমিউনিটি ক্লিনিক, আস্কারপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, দেবহাটা সদর ইউনিয়নের টাউনশ্রীপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, ভাতশালা কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। আর প্রতিটি ক্লিনিকে এলাকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে রয়েছে প্রতিদিন এক জন সিএইসসিপি, সপ্তাহে তিন দিন একজন এফডাবিøউএ ও এইচএ এবং মাসে একদিন একজন এফডাবি্লউভি কর্মী চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। উক্ত ক্লিনিক গুলোতে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি জনগণের স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া লক্ষ্যে দেবহাটা উপজেলায় ৫টি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে দুর্গম অঞ্চলে। নির্মাণ করা হচ্ছে একতলা বিশিষ্ট কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন। চলতি বছর এই কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যেই কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের ছাদও নির্মিত হয়েছে। এখন চলছে ফিনিশিং এর কাজ। নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোর মধ্যে রয়েছে শশাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক, টিকেট কমিউনিটি ক্লিনিক, আটশতবিঘা কমিউনিটি ক্লিনিক, নাজিরের ঘের কমিউনিটি ক্লিনিক ও চালতে তলা কমিউনিটি ক্লিনিক। এ ক্লিনিক গুলোর কার্যক্রম শুরু হলে মানুষের চিকিৎসার মান সন্তোষ জনক হবে।

ঈদগাহ মডেল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইসসিপি জসিমউদ্দীন বলেন, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই প্রায় মানুষ কোন না কোন রোগে ভুগছে। তাই কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রামের মানুষের নাগালের মধ্যে থাকায় মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিকের দিকে ছুটছে। প্রতিদিন সকাল থেকে ৫০-৭০ জন রোগী সেবা নিতে আসে। তবে এখানে প্রতিদিন পুরুষের তুলনায় মহিলা রোগী বেশি লক্ষ্য করা যায়।

কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা কয়েকজন রোগী জানান, আমরা আগে কমিউনিটি ক্লিনিকে আসলে ঠিকমত সেবা পেতাম না। তবে এখন ক্লিনিকে সেবার মান সন্তোষজনক। আগে কমিউনিটি ক্লিনিকে আসলে ১ থেকে ২ রকম ওষুধ দিতো। কিন্তু এখন প্রায় সব ধরনের ঔষধ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া পেট ব্যথার সমস্যা, গ্যাসের সমস্যা, পায়ের ব্যথার সমস্যা, রক্ত স্বল্পতা, জ্বর, কৃমি সমস্যা, এলার্জি সমস্যা, হাতে ঘা, হালকা জ্বর সহ সর্দি-কাশির সমস্যায় চিকিৎসা সেবা নিতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় তাদের হাতে- অ্যামক্সিসিলিন ক্যাপসুল, মেট্রোনিডাজল ক্যাপসুল, পেনিসিলিন, রেনিটিডিন, কো-ট্রাইমোক্সাজোল ক্যাপসুল,টেট্রাসাইক্লিন, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স ক্যাপসুল, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, স্যালবিউটামল ট্যাবলেট, হিসটাসিন, এন্টাসিড, স্যালাইন ও শিশুদের জন্য জিংক ট্যাবলেট, প্যারাসিটামল সিরাপ দেখতে পাওয়া যায়।
ঈদগাহ মডেল কমিউনিটি ক্লিনিকের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য নির্মল কুমার মন্ডল জানান, সরকার মানুষের দৌড় গোড়ায় চিকিৎসা সেবা নিয়ে যাওয়ার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছে। তাই বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং এলাকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছে। তাছাড়া ন্যাশনাল সার্ভিসের কর্মীরাও কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
পাঁচপোতা কমিউনিটি ক্লিনিকের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য আব্দুল করিম বলেন, আমরা প্রতি মাসে মাসে ক্লিনিকের সার্বিক উন্নয়নে মিটিং করে থাকি। এছাড়া ক্লিনিকে আসা রোগীদের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে সর্বদা খোঁজ খবর রাখি।

রতেœশ্বরপুর গ্রামের কামারুজ্জামান জানান, দেশের প্রাচীন আমল থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষের সাপে কামড়ানো রোগীদের প্রধান ভরসা ওঝা-কবিরাজ। গ্রামের মানুষের সাপে কামড়ানোর সাথে সাথে ওঝা-কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ নিকটস্থ তাদের কোন চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ নেই। শহরের হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিয়ে যেতে অনেক সময় লাগে। যার মধ্যে সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগী মারা যায়। গত ৫জুলাই রাতে আক্রা শিবনগর গ্রামের জয়দেব ঘোষের মেয়ে ও টাউন শ্রীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী কৃষ্ণারাণী ঘোষকে ঘুমন্ত অবস্থায় সাপে কামড় দেয়। কোন চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ না থাকায় তাৎক্ষণিক ভাবে কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করানো হলে তাতে কোন কাজ হয়নি। সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সাপে কামড়ানো ইনজেকশন পাওয়া গেলে গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে।
বর্তমানে দেশের গ্রামাঞ্চলের সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডাক্তারের সংখ্যা কমছে, অপর দিকে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই সাধারণ মানুষের কাক্সিক্ষত সেবা পেতে অতি সত্ত¡র সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে ডাক্তার নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version