Site icon suprovatsatkhira.com

খালের বেড়ি বাঁধে বেড়া দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধের অভিযোগ

নূর মনোয়ার: শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জাতির ভবিষৎ কর্ণধার। আর এই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধের অভিযোগ উঠেছে এলাকার কাউন্সিলারের বিরুদ্ধে। সাতক্ষীরা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে কুখরালী আহমাদীয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ মাদ্রাসার বেশির ভাগ নিয়মিত শিক্ষার্থী ইসলামপুর, চরবালিথা ও কদমখালি অঞ্চলের। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিন গ্রামের শিক্ষার্থীরা ঘেরের বেড়ি বাঁধ দিয়ে মাদ্রাসায় যাতায়াত করে আসছে। অন্য রাস্তা দিয়ে মাদ্রাসায় যাতায়াত করতে হলে তাদের ৩-৪ কি:মি: রাস্তা ঘুরে মাদ্রাসায় যেতে হয়। বর্তমানে মাদ্রাসায় যাতায়াতের সহজ এই রাস্তাটি ঘেরের বেড়িতে বেড়া দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। এর ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, দুশ্চিন্তায় পড়েছে অভিভাবকেরা।
কদমখালী, চরবালিথা, ইসলামপুরসহ কয়েকটি গ্রামের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই মাদ্রাসাটি। এখানে বর্তমানে নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা তিন শতাধিক। এর মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী এই পথে যাতায়াত করে। ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ইসলামপুর গ্রামের সাদিয়া আক্তার জানায়, মাদ্রাসার ভর্তি হওয়ার পর থেকে ঘেরের বেড়ি দিয়ে আসা-যাওয়া করি কিন্তু গত দু মাসেরও বেশি সময় ধরে ভেড়ি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় আসতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় ঘেরের কোমর সমান পানিতে নেমে ভিজে মাদ্রাসায় আসি।
৮ম শ্রেণির ছাত্রী চরবালিথা গ্রামের ফজিলা খাতুন জানায়, আমরা ঘেরের রাস্তা দিয়ে মাদ্রাসায়া আসি অন্য রাস্তা দিয়ে আসতে ৩-৪ কি:মি: রাস্তা ঘুরতে হয়। এখন রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের ঘেরের পানিতে ভিজে আসতে হয়। ভেজা অবস্থায় মাদ্রাসায় ক্লাস করি। ৫ম শ্রেণির ছাত্র কদমখালি গ্রামের রানা আলম জানায়, বেড়ির রাস্তা বন্ধ আর অন্য রাস্তায় অনেক কাদা,অনেক দূর আমার সাইকেল নাই মাদ্রাসায় আসতে অনেক কষ্ট হয়।
৭ম শ্রেণির ছাত্রী সানিয়া আক্তারের পিতা সালাম গাজী জানায়, আমাদের ইসলামপুর গ্রামসহ চরবালিথা, কদমখালি গ্রারের অনেক মেয়ে কুখরালী আহমাদীয়া দাখিল মাদ্রাসায় পড়ে। এই তিন গ্রামের মেয়েরা সহজে ঘেরের বেড়ির রাস্তা দিয়ে এতদিন যাতায়াত করে আসছে কিন্তু দু’মাসের বেশি সময় হলো রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফলে মেয়েরা পানির মধ্যে নেমে ভিজে মাদ্রাসায় যায়। ভয় হয়, প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ভিজে থেকে বড় কোন অসুখ না হয়। শহিদুল মেম্বার একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে ছেলে-মেয়েদের মাদ্রাসা যাওয়া বন্ধ করে দিল ! আমরা একটি সুষ্ঠু সমাধান চাই।
মাদ্রাসার নৈশ প্রহরী আবুল হোসেন জানান, ১৯৮১ সালে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্র- ছাত্রীরা ঘেরের বেড়ি দিয়ে মাদ্রাসায় আসে। হঠাৎ করে ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার শহিদুল ইসলাম ঘেরের বেড়িতে বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিল। ঘেরের যে বেড়ি বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে সেটা মূলত কানিমোল্লার খালের অংশ। খালে বেড়ি বাঁধদিয়ে মাছ চাষ করছে শহিদুর কাউন্সিলারসহ আরও অনেকে ।
কুখরালী আমতলা এলাকার সত্তর ঊর্ধ্ব বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, প্রাণ সায়েরের খাল থেকে শুরু হয়ে কানিমোল্লার খাল ও গোঁ-ডালার খাল দুটি এ অঞ্চলের ঘেরের মধ্য দিয়ে একটি বাঁকাল খালে এবং অন্যটি সোইখালি খালে মিলেছে। বেড়া দিয়ে যে বেড়ি বন্ধ করা হয়েছে তা কানিমোল্লা খালের এক অংশ। সবাই খাল বন্ধ করে ঘের করছে এদিকে ছেলে-মেয়েরা মাদ্রাসায়ও যেতে দিচ্ছে না আবার খাল বন্ধ থাকায় বর্ষায় পানি বন্দি হয়ে আছে প্রায় দেড়শ বিঘে জমির ধান। এসব দেখার কেউ নেই।
মাদ্রাসার সুপারেন্টড জাহাঙ্গীর মূর্ত্তেজা রেজা দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরাকে জানান, আমি প্রায় দু’যুগ এ মাদ্রাসায় কর্মরত আছি এরকম পরিস্থিতির মধ্যে আগে কখনো পড়েনি। বেড়ির রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় মাদ্রাসায় ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতির হার কমেছে। ইসলামপুর, চরবালিথা ও কদমখালি অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থীর নিয়মিত মাদ্রাসায় আসছে না। এই সমস্যা সমাধানে আপনাদের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এবিষয়ে ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম জানান, আমি নতুন করে ঘেরের বেড়ি করেছি,ভেড়ি এখনো কাঁচা আছে তাই বেড়ি বেড়া দিয়ে বন্ধ করেছি। বেড়ি শুখালে আবার খুলে দেব।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version