Site icon suprovatsatkhira.com

ভারতের টাকি সীমান্তের বিপরিতে দেবহাটার ইছামতির তীরে পর্যটন শিল্পের সম্ভবনাময় মনোমুগ্ধ ম্যানগ্রোভ : মিনি সুন্দরবন

ডেস্ক রিপোর্ট: ভারত-বাংলাদেশের বুক চিরে বয়ে চলেছে ইছামতি নদী। কোমরপুর হতে নওয়াপাড়া বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে দেবহাটা উপজেলা। এই উপজেলা রয়েছে অতীত আর ঐতিহ্যতে ভরা। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বিলুপ্ত হতে চলেছে। ঠিক সে সময়ে উপজেলার শীবনগর এলাকার ভাঙন ঠেকাতে একটি বন গড়ে তোলে উপজেলা প্রশাসন। ধীরে ধীরে এই বনের আকার ও পরিধি বাড়তে থাকে। বর্তমানে এটি বৃহৎ বনে রূপ নিয়েছে। সে কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে দেবহাটার ইছামতির তীরে অবস্থিত ম্যানগ্রোভ মিনি সুন্দরবনকে পর্যটনমুখি করতে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। জেলার সদর হতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরে ইছামতি নদীর তীরে শিবনগর মৌজায় প্রায় ৫০ একর জমি জুড়ে রয়েছে এ বনটি। এটি উপজেলার “রূপসি ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র” পর্যটন কেন্দ্র নামে পরিচিত। ইছামতি নদীর তীরে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি এ ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি এ উপজেলায় মানুষকে গর্বিত করে। উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় টাউনশ্রীপুর এলাকায় ভারতের টাকী পৌরসভার বিপরীতে ইছামতি নদীর তীরে শীবনগর মৌজায় প্রায় ১৫০ একর জমিতে এ বনটি তৈরি করা হয়েছে। এই পর্যটন কেন্দ্রর সার্বিক উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রটিতে অধিকাংশ সময়ে জেলা, উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পারিবারিক ভাবে বনভোজনের আয়োজন করা করা হয়। এই বনটিতে বহু প্রজাতির ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রয়েছে। সুন্দরবনের আদলে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ বৃক্ষের চারা এনে রোপণ করে ব্যাপক বনের সৃষ্টি করা হয়েছে। যার মধ্যে কেওড়া, বাইন, গোলপাতা, কাঁকড়া, নিম, সুন্দরী, হরকচাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ উদ্ভিদ। এখানে ১০একর জমির বুকে রয়েছে “অনামিকা লেক”। এই লেকে রয়েছে শান বাধানো পাকা ঘাট। বিনোদন প্রয়াসীদের জন্য রয়েছে বসারস্থান। শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য কৃত্রিম বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি। স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এটি পরিপূর্ণ বনে পরিনত করতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।
উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং একটি আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে নেওয়া হয়েছে নান উদ্যোগ। ম্যানগ্রোভ বনে যাওয়ার ২টি রাস্তার মধ্যে একটি ডাবল হেয়ারিং বন রাস্তা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি পিচের রাস্তাটির কাজ খুব দ্রæত সম্পন্ন হবে। তাছাড়া সমগ্র বনটির উপভোগের জন্য বনের উপর দিয়ে ক্রেনের ব্যবস্থা, কৃত্রিম জীবজন্তুর ব্যবস্থা, বনের লেকে বোটের ব্যবস্থাসহ নানামুখি প্রস্তাবনা ও বাস্তাবায়ন কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। বনটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ২রুম বিশিষ্ট ভবন, একটি টিকিট কাউন্টার, প্রবেশদার গেটসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ সম্পন্ন হতে চলেছে।

এদিকে, সাতক্ষীরা জেলার ইছামতি সীমান্তের ইছামতির তীরে গড়ে ওঠা দৃষ্টি নন্দিত মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য ম্যানগ্রোভ মিনি সুন্দরবনটির পরপর পরিধি বাড়ছে। ২০০৯ সালে দেবহাটার সুঁশিলগাতী এলাকার নদীর বেড়ি বাধ ভেঙে প্লাবিত হলে বাধ রক্ষায় ২০১০ সালে উপজেলার প্রশাসনের উদ্যোগে বাধ রক্ষায় ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য ১০একরের মত জায়গা জুড়ে তৈরী এই ম্যানগ্রোভ বন। বেশ কয়েক বছর যেতে যেতে বনের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর রক্ষা পায় আশে পাশের এলাকাবাসীরা। প্রতিবছরে উপজেলার ও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ উপভোগ করতে আসে প্রকৃতির এই দৃশ্য। তাছাড়া বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বনটিতে কানায় কানায় দর্শণার্থী পরিপূর্ণ হয়।
তাছাড়া শীতের প্রথম থেকে শুরু হয় পিকনিক উৎসব। অনেকে এসে রান্নাবান্না করে ধুমধাম চড়–ই ভাতিও করে। কয়েক মাস ধরে চলতে থাকে উৎসবের আমেজ। সেই আমেজ ছড়িয়ে পড়ে সকলের মাঝে। বর্তমান স্থানটিতে প্রবেশ করতে হলে উপজেলা প্রশাসনকে টিকিটের মাধ্যমে ১০টাকা ফি দিতে হয়। যার পুরো টাকা সরকারি রাজস্ব তহবিলে জমা হয়। স্থানটি ইছামতির তীরে নিরিবিলি হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এখানে সময় কাটাতে আসেন।
এখানে ঘুরতে আসা কয়েক জনের সাথে কথা বললে তারা জানায়, স্থানটি অনেক নিরিবিলি, মনোমুগ্ধকর হওয়ায় মাঝে মধ্যে আসি। সঠিক উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে ম্যানগ্রোভ বনের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে সরকার রাজস্ব পাবে। তাছাড়া দেবহাটার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।
এদিকে, ইছামতিতে ঠেলা জালের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই বন সংলগ্ন এলাকাতে যদি মৎস্য অহরণ বন্ধ করা যায় তাহলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের জাত বিলুপ্ত থেকে রক্ষা পাবে। তাই বনের পাশাপাশি মাছের অভয় আশ্রম গড়ে তুলতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতনমহল। সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজ আল-আসাদ জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন এই ম্যানগ্রোভ বন নান্দনিক ভাবে তৈরি করায়। তাই রূপসি ম্যানগ্রোভ বনকে আকর্ষণীয় করে দক্ষিণঞ্চলের মানুষের বিনোদনের চাহিদা মিটিয়ে সরকারের রাজস্ব বাড়াতে আবেদন জানিয়েছেন উপজেলাবাসী।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version