আগস্ট ২০, ২০১৯
পানি নিষ্কাশনের সকল প্রতিবন্ধকতা জরুরী ভাবে অপসারণের দাবিতে নাগরিক কমিটির স্মারকলিপি
![]() ডেস্ক রিপোর্ট: গত ১৭ আগস্টে ভোর রাত থেকে একটানা ৪/৫ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সাতক্ষীরা জেলার নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে। বহু বাড়ি-ঘর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এমনকি সাতক্ষীরা পৌর এলাকার বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়ও জলাবদ্ধতা ও জলমগ্ন অবস্থা বিরাজ করছে। অনেকের ঘরের মধ্যে পানি উঠেছে। পুনরায় বৃষ্টিপাত হলে বহু মানুষ ঘর ছাড়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্তায় পানি নিষ্কাশনের সকল প্রতিবন্ধকতা জরুরী ভাবে অপসারণের দাবি জানিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি। মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের নিকট পেশকৃত স্মারকলিপিতে এই দাবি জানানো হয়েছে। স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়েছে, লোকালয়ের পানি যে বিলগুলো দিয়ে নিষ্কাশিত হতো সেসব বিলে অবৈধভাবে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। বিলের মধ্যে থাকা পানি নিষ্কাশনের খালগুলো দখল করে এসব ঘেরের বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকস্থানে সড়কের নীচে থাকা কালভার্টগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এমনকি সাতক্ষীরা শহরের বাইপাস সড়কের দু’পাশে থাকা হুকুমদখলকৃত সরকারি জমিও কোন কোন স্থানে ঘের মালিকরা তাদের ঘেরের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে। অনেকস্থানে পানি নিষ্কাশনের খাল-বিল মাছ চাষিদের স্বার্থে নেট-পাটা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।এসব অবৈধ কাজের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের অনেকেই রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় সাধারণ মানুষ কথা বলতে পারছে না। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের কার্যকর কোন উদ্যোগও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, এ বছর স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতও হয়নি। তারপরও সামান্য একদিনের বৃষ্টিতে সমস্ত ক্ষেত-খামার, খাল-বিল, নদী-নালা, মাছের ঘের-জলাশয় যেভাবে কানায় কানায় পানিতে পূর্ণ হয়ে গেছে এর উপর নতুন করে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। চলতি আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে আরো বৃষ্টিপাতেরও আশঙ্কা রয়েছে। নাগরিক কমিটি জেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে আরো ৯দফা দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো জেলার সকল নদী-খালের জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ যতদুর সম্ভব পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সকল বাঁধা অপসারণ করতে হবে। ডিএস/সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদী-খালের সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে। উদ্ধারকৃত জমি ইজারা দেওয়া যাবে না। পূর্বে দেওয়া সকল ইজারা বাতিল করতে হবে। নতুন করে আর কোন অপ্রয়োজনীয় স্লুইস গেট ও ক্লোজার নির্মাণ করা যাবে না। ইছামতি নদীর সাথে মরিচ্চাপ-খোলপেটুয়া নদীর সংযোগস্থাপনকারী কুলিয়ার লাবণ্যবতী ও পারুলিয়ার সাপমারা খাল সংস্কার ও খনন করতে হবে এবং দু’পাশের স্লুইস গেট অপসারণ করে জোয়ার-ভাটা চালু করতে হবে। ইছামতি থেকে মাদার নদীর (আদি যমুনা) প্রবাহ স্বাভাবিক করতে হবে। নিচু বিলগুলো উঁচু করতে টিআরএম করতে হবে। সাতক্ষীরা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়র খালের স্বাভাবিক প্রবাহ চালু করতে হবে এবং বেতনা ও মরিচ্চাপের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। সরকারী রাস্তা ও নদীর বেড়ি বাঁধকে ঘেরের বাঁধ হিসেবে ব্যবহার বে-আইনি ঘোষণা করতে হবে। নদী খালের নেট-পাটা অপসারণ করতে হবে। স্মারকলিপি পেশকালে উপস্থিত ছিলেন, জেলা নাগরিক কমিটির আহŸায়ক মো. আনিসুর রহিম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ, প্রোফেসর আব্দুল হামিদ, অ্যাড. সৈয়দ ইফতেখার আলী, অ্যাড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সাংবাদিক আবু কাজী, এম কামরুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার আলিমুজ্জামান খান টালু, অ্যাড. শাহানাজ পারভীন মিলি, জোন্সা দত্ত, অ্যাড. খগেন্দ্র নাথ ঘোষ, প্রশান্ত রায়, কমরেড আবুল হোসেন, অ্যাড. আল মাহামুদ পলাশ, অ্যাড. মনিরুজ্জামান, মধাব চন্দ্র দত্ত, আলী নুর খান বাবলু, আব্দুস সামাদ, জহুরুল কবির, আসাদুজ্জামান লাভলু, মনিরুজ্জামান জমাদ্দার, আমজাদ হোসেন, কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। জেলা প্রশাসক নাগরিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনেন এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে কোথায় কি ধরনের বাঁধা রয়েছে তা বিস্তারিতভাবে জানার জন্য আগামী ২২ আগস্ট বিকাল ৪টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নাগরিক নেতৃবৃন্দর সাথে মতবিনিময় সভা আহবান করেন। 5,741,547 total views, 896 views today |
|
|
|