মীর খায়রুল আলম: সাতক্ষীরায় ধীরে ধীরে বাড়ছে ড্রাগন ফল চাষ। অধিক পুষ্টি সম্পন্ন স্বাদে ভরা এ ফলের চাহিদাও বেড়ে চলেছে। ড্রাগন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় চাষ হলেও কৃষি খাতে সাতক্ষীরায় এটি নতুন ভাবে যোগ দিয়েছে। আর এতে অপার সম্ভবনাময় বিরাজ করছে জেলা জুড়ে। যার সফলতায় বদলে যেতে পারে বেকার সমস্যা। আগাছার মত হলেও গাছটিতে ধরে বিচিত্র রঙের পাকার পরে ফলটি আরো চমৎকার দেখতে লাগে। যা ক্রেতাসহ সব শ্রেণির মানুষের দৃষ্টি নন্দন হয়। সাতক্ষীরা জেলার সর্বত্র এর চাষ ব্যাপক ভাবে শুরু না হলেও অনেকের বাসা বাড়িতে কিংবা ছাদে টবে চাষ করা হচ্ছে ড্রাগন ফলের গাছ। স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ভ্রাšত্ম ধারণা থাকলেও পরস্পর গাছ ও ফলের পরিচিতি বাড়ছে। বর্তমানে শখের বশে চাষ থেকে শুরু করেছেন বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন চাষ। আর এতে লাভের আশা দেখছেন তারা। তাদেরই একজন সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটায় চক-মোহাম্মাদালীপুর গ্রামের সৈয়দ রিয়াসাদ আলীর পুত্র আকবর আলী। মাত্র ১বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষে তার খরচ হচ্ছে ১লাক্ষ টাকা। তার বাগান থেকে ড্রাগন ফল বিক্রি করে ব্যাপক টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। এ-চাষে চারা লাগানোর পর শুধু জৈব সার ব্যবহার করে অনেকটা বিনা খরচে ফলন পাবেন মনে করছেন তিনি। তার এ চাষ এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে স্থানীয়দের মাঝে। প্রথমে তিনি কুমিল্লা অঞ্চলের ভালুকা থেকে ড্রাগন ফলের চারা সংগ্রহ করেন। এরপর বিভিন্ন কৃষিবিদদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ১বিঘা জমি নির্বাচন করে ড্রাগন বাগান গড়ার পরিকল্পনা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে ১শত টাকা মূল্যে শতাধিক ড্রাগন চারা এবং সিমেন্টের পিলার নিয়ে বাগান তৈরি করেন। ক্ষেত তৈরি, গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করতে তার মাত্র ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয় তার। চলতি বছর তার গাছে ড্রাগন ফল অসতে শুরু করবে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া ফল পাওয়ার পর্যন্ত সর্বমোট ১ লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে জানান। বর্তমান সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানে ড্রাগন ফল বিক্রয় হতে দেখা মিলেছে। আর সাথে সাথে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
সাতক্ষীরার খুলনা রোড মোড়ের ড্রাগন ফল বিক্রেতা ফারুক হোসেন জানান, তিনি বড় সাইজের ফল ৫০০ টাকা এবং ছোট সাইজের ফল ৪০০ টাকা দরে বিক্রয় করছেন। যশোর চৌগাছা থেকে আনা ফল বিক্রয় করে দৈনিক বেশ লাভবান হচ্ছেন বলে জানান।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নি ডাক্তার শাহরিয়ার রিমন জানান, সাতক্ষীরার মানুষের কাছে ড্রাগন ফল নতুন ভাবে পরিচিত লাভ করলেও এটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের দীর্ঘ দিন ধরে চাষ হচ্ছে। এই ফলটি পুষ্টি গুন সমৃদ্ধ হওয়ায় সব বয়সী মানুষ খেতে পারবে।
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিমউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষ উপযোগী। মেক্সিকান এই ফল বর্তমানে এশিয়ার চায়না, মালোশিয়া ও শ্রীলঙ্কা ব্যাপক চাষ হচ্ছে। প্রচন্ড খরায় সেচ ও জৈব সার দেয়া ছাড়া ড্রাগন চাষে কোনো বাড়তি খরচ নেই। রোগ বালাই মুক্ত ড্রাগন গাছ একবার লাগালে শুধু পরিচর্যা করলে ৩০ থেকে ৪০ বছর একনাগাড়ে ফল দেয়। ড্রাগন ফল মিষ্টি ও হালকা টক জাতীয় স্বাদের হয়ে থাকে। এ ফলে নানা পুষ্টিগুণ রয়েছে। বিশেষ করে এ ফল ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্ত চাপ, কোলেস্টরল ও শরীরের চর্বি কমায়। যে কারণে বাজারে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এ ফল চাষ অত্যন্ত লাভজনক।
সাতক্ষীরায় বাড়ছে ড্রাগন চাষ
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/