মাজহারুল ইসলাম: সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় চলছে অবাধে পুকুর ভরাট। ছোট বড় মাঝারী আকারের অধিকাংশ পুকুর বা জলাশয় ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রি করা হচ্ছে। জলাভুমি বা জলাশয়ের শ্রেণি পরিবর্তন করে ভরাট করার বিধান থাকলেও তা মানছেন না কেউ। জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করেই ভরাট করা হচ্ছে জলাশয়।
ৎ২০১১ সালের সংবিধানে ১৮ক অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধমে জলাভূমি সংরক্ষণকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আইনের এমন বিধান থাকা সত্তে¡ও কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই পৌর এলাকায় পুকুর ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুকুর মালিকরা। পৌরসভার রসূলপুর এলাকায় (পুলিশ লাইনের উত্তর পাশে) একটি পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। এলাকায় ‘নুরু কালার পুকুর’ নামে ক্ষ্যাত সেটি। পুকুরটি ভরাট করে সেখানে বহুতল কয়েকটি ভবন নির্মাণের কাজও চলছে। ক্রয় সূত্রে পুকুরের মালিক শহরের কুখরালী এলাকার আবু ছক্কার। তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার ভাই পুকুরটি কিনেছিলাম। পরবর্তীতে আবার বিক্রি করে দিয়েছি। তবে যাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে তাদের নাম ঠিকানা আমার মনে নেই। তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বিল্ডিং নির্মাণ করছেন কি না জানা নেই’। পুকুরের পার্শ্ববতী বাসিন্দা মোকাররম হোসেন বলেন, ‘পুকুরটি কত বছর আগের তা সঠিক বলতে পারবো না। তবে এই পুকুর আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখছি। পুকুরটি ভরাট করায় আমাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি এই পুকুরে এসে জমা হতো। পুকুরটি ভরাট করার ফলে এখন দু’এক দিনের অল্প বৃষ্টিতেই চারিদিকে পানি জমে যায়। তখন আমাদের চলাচলে খুব অসুবিধা হয়। কয়েক বছর আগে পাশের একটা রান্নাঘরে আগুন লাগে। এই পুকুর থেকে পানি তুলে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসার আগেই আমরা আগুন নিভিয়ে ফেলি। তাছাড়া চৈত্র মাসেও এই পুকুরটায় পানি থাকতো। পুকুরটি ভরাট করায় এখন বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়’।
এদিকে পুলিশ লাইন থেকে এসপি বাংলোর সংযোগ সড়কের পূর্ব পাশে বিশাল আকৃতির একটি পুকুর ইতোমধ্যে ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রি করা হয়েছে। সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজও চলছে। পুকুরের মালিক মান্নান হোসেনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে পুত্র জুয়েল হোসেন ফোনটি রিসিভ করেন। তিনি বলেন, ‘পুকুরটি ভরাট করে বিক্রি করার আগে আংশিক বাস্তু করা হয়েছে। শ্রেণি পরিবর্তনের বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারবো না, ব্যস্ত আছি’। শহরের পলাশপোল স্টেডিয়ামের পাশে হাফিজুর রহমান ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে সম্প্রতি একটি পুকুরের একাংশ ভরাট করে দ্বিতল বাড়ি বানিয়েছেন। স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশে কামরুল ইসলাম এবং আমিনুল ইসলামের জনস্বার্থে ব্যবহৃত পুকুটি মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এছাড়াও শহরের মুনজিতপুর, সুলতানপুর, কাটিয়া, পুরাতন সাতক্ষীরা, কুখরালী, রথখোলার বিলসহ বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়সহ জনস্বার্থে ব্যবহৃত বিভিন্ন জলাশয় ভরাট করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে পৌর কাউন্সিলর শেখ শফিক উদ-দৌলা সাগর বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রজ্ঞাপন বা নিষেধাজ্ঞা ভিত্তিক কোন ডকুমেন্ট না থাকায় আমরা বাধা দিতে পারি না। পুকুর ভরাটের কারণে জলাদ্ধতা সৃষ্টি, সুপেয় পানির অভাব, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান তিনি’।
সাতক্ষীরা পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ শুভ্র চন্দন মহলী বলেন, জলাধার সংরক্ষণ আইনের আওতায় পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে তদানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। তবে এই বিষয়ে এখনো কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেননি। যদি কেউ পুকুর বা জলাশয় ভরাট করে তাহলে প্রথমেই তাকে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হবে। তাছাড়া পৌর কর্তৃপক্ষ ভুমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারেন না’।
পৌর এলাকায় পুকুর ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র তাজকিন আহম্মেদ চিশতি বলেন, এ মাসে আমি কোন স্বাক্ষাৎকার দিচ্ছি না’।
সাতক্ষীরায় চলছে অবাধে পুকুর ভরাট; জলাবদ্ধতার আশংকা
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/