Site icon suprovatsatkhira.com

বিলুপ্তির পথে মাদুর শিল্প

নাজমুল হক, পাটকেলঘাটা প্রতিনিধি : প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী মাদুর শিল্প বিলুপ্ত প্রায়। প্লাষ্টিকসহ আধুনিক বিভিন্ন মাদুরের ভিড়ে হারয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই মেলে মাদুর শিল্প। প্রয়োজনীয় পুঁজি, কাঁচামাল ও উপকরণের দুষ্প্রাপ্যতাসহ নানা সংকট এই শিল্প বিলুপ্তির প্রধান কারণ বলে মনে করছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। এমন অবস্থায় অনেকেই ইতোমধ্যে এই পেশা বদল করেছে। পাটকেলঘাটার মাদুর ব্যবসায়ি মকবুল আলী বলেন, এ শিল্প এখন বিলীন হতে চলেছে। এক সময় সাতক্ষীরার বিভিন্ন গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে মাদুর বোনা হতো। কিন্তু তার মাদুর বোনার জন্য (কাঁচামাল) মাদুর তৈরির গাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া প্লাষ্টিকের পাতি দিয়ে মাদুর অর্থাৎ বিছানা তৈরি করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এক সময় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মাদুর কেনার জন্য পাটকেলঘাটার দলুয়া বাজারে ভীড় জমাতো ক্রেতারা।
এ অঞ্চলে মেলেও উৎপাদন হতো বেশ। যেসব জমিতে মেলে চাষ হতো সেখানে এখন ঘের আর ঘের। জানা যায়, পাটকেলঘাটার দলুয় বাজারে মাদরা, কৈখালী, গাছা, খড়িয়াডাঙ্গাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ মানুষ তাদের উৎপাদিত মাদুর বিক্রি করতে নিয়ে আসতো। কিন্তু একদিকে মেলের চাষ বন্ধ, অন্যদিকে কপোতাক্ষ নদ মরে যাওয়ায় মাদুর শিল্প বিলুপ্তির পথে।
তালা উপজেলার দলুয়া গ্রামের বাসিন্দা হরিপদ বলেন, পাটকেলঘাটার প্রত্যন্ত নিæাঞ্চলে বিশেষকরে দলুয়া, গাছা, সৈয়দপুরসহ আশে-পাশের কয়েকটি এলাকা মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ মেলের উৎপাদনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে তৃণমূলের মাদুর শিল্প এলাকা। চাহিদার সাথে সংগতি রেখে মৌসুমের একটা বড় সময় জুড়ে শিল্পীরা ব্যস্ত থাকতেন মেলে দিয়ে মাদুর তৈরিতে। কিন্তু প্রায় এক দশক ধরে মাদুর শিল্পের অবস্থা ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইন্দ্রজিৎ কুমার ও কল্যাণী রানী বলেন, কয়েক বছর আগেও প্রতি কাউন মেলের দাম ছিল ২৮০-৩০০ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। ফলে এক জোড়া মাঝারি ধরনের মাদুর উৎপাদনে ৩৯০-৩৮০ টাকা ব্যয় হচ্ছে। অথচ বাজারে এ মাদুরের প্রতি জোড়ার পাইকারি দাম ৪০০ টাকা। এতে এক জোড়া মাদুরে ২০-৩০ টাকার বেশি লাভ থাকছে না। ফলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এক জোড়া বড় আকৃতির মাদুর তৈরিতে উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ৪৫০ টাকা। অথচ এর বাজার মূল্য ৫০০-৫২০ টাকা। মাদুর উৎপাদন থেকে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৫০০০-৫৫০০ টাকা আয় হয়। মাদুর শিল্পের এমন দুরবস্থার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এর শিল্পীরা জানান বলা না বলা অনেক কথা। তাদের মতে, মাদুরের প্রধান উপকরণ মেলের চাষ এখন একবারেই কমে গেছে। একদিকে আধুনিক প্লাস্টিক শিল্পের আধিক্যে চাহিদা কম অন্যদিকে একটি মাদুর তৈরিতে যে পরিমাণ খরচ হয় বাজারে ঠিক সে পরিমাণ দাম পাওয়া যায় না। এমন অবস্থায় শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে মাদুর শিল্পীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version